ছবির একটি দৃশ্য।
গুলাবো সিতাবো
পরিচালনা: সুজিত সরকার
অভিনয়: অমিতাভ, আয়ুষ্মান, বিজয়, ফারুক
৫.৫/১০
কথা ছিল, শুক্রবার অনলাইনে প্রিমিয়ার হবে ‘গুলাবো সিতাবো’র। বৃহস্পতিবার ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টার ঘরে পৌঁছনোর অনেক আগেই অ্যামাজ়নে স্ট্রিমিং শুরু হয়ে যায় ছবিটির। তার সঙ্গেই ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে লেখা হয়ে যায়, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। ওয়েব ফিল্ম তো কতই হয়, কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির বিচারে সুজিত সরকারের ‘গুলাবো সিতাবো’কে নেহাত একটা ওয়েব ফিল্ম বলে দর্শানো যাবে না।
খবরের বিচারে ইতিহাস তৈরি করা ছবি, সিনেমার বিচারে কতটা নম্বর পাবে, এ বার সে প্রসঙ্গে আসা যাক। ‘গুলাবো সিতাবো’র প্রধান চরিত্র একটি হাভেলি। সেই পেল্লায় প্রাসাদকে ঘিরেই নানা চরিত্রের তুর্কিনাচন, যার মধ্যে প্রধান মির্জ়া (অমিতাভ বচ্চন) এবং বাঁকে (আয়ুষ্মান খুরানা)। ৭৮ বছরের মির্জ়া স্বপ্ন দেখে তার বেগম (ফারুক জ়াফর) স্বর্গে গেলেই গোটা বাড়ি তার হবে। বেগম আবার মির্জ়ার চেয়ে ১৭ বছরের বড়। আর বাড়ি বাগিয়ে ফেললেই মির্জ়া দূর করে দেবে ভাড়াটেগুলোকে। বিশেষ করে বাঁকে বড়ই চক্ষুশূল তার। বাড়ি-বেগম আর মির্জ়ার মধ্যকার এই টানাটানির খেলায় কখনও উকিল, কখনও প্রোমোটার, কখনও আর্কিয়োলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট চলে আসে। ‘আও কভি হাভেলি পে’র ঢঙে খেলা চলতে থাকে, যা মাঝেমধ্যেই দর্শকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়। চিত্রনাট্যকার জুহি চতুর্বেদী তাঁর কাহিনির চরিত্রগুলো তৈরি করতে যতটা মন দিয়েছেন, মুহূর্তগুলো বাঁধায় ততটাই ঢিলে পড়ে গিয়েছে। গোটা ছবিতে মনে রাখার মতো দৃশ্য প্রায় নেই। অথচ সম্ভাবনাগুলো চোখে পড়ে।
বেগমের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষারত মির্জ়াকে দেখলে ‘বাঞ্ছারামের বাগান’-এর কথা মনে পড়ে। স্ত্রীর জন্য কবরের জমির খোঁজ করে বাড়িতে এসে দেখে, সে দিব্যি চলে ফিরে বেড়াচ্ছে! মির্জ়া, বাঁকের চরিত্রগুলো যেন ক্ষয়ে যাওয়া সমাজের প্রতিচ্ছবি। লোভ আছে ষোলো আনা অথচ কিছু করার উদ্যম নেই। প্যারাসাইট। সেই অর্থে গণেশ শুক্ল (বিজয় রাজ), ক্রিস্টোফারও (বিজেন্দ্র কালরা) পরজীবী। আর ওই ইটের পাঁজর বের করে থাকা হাভেলিটা যেন ঠুনকো আভিজাত্যকে ভেংচি কাটে।
দু’ঘণ্টা পাঁচ মিনিটের ছবিটা ধরে রেখেছেন অমিতাভ। মির্জ়ার ভাঙাচোরা চরিত্রটা করতে গিয়ে তিনি নিজেকে দুমড়ে মুচড়েছেন। ছ’ফুট দু’ইঞ্চির চেহারাটা নুইয়ে এনে ল্যাগব্যাগে পায়ে হেঁটে হেঁটে যে ভাবে ৭৭ বছর বয়সে লখনউয়ের অলিগলি ঘুরে বেরিয়েছেন, তা তাঁর প্রতি সম্ভ্রম বাড়ায়। মির্জ়ার চরিত্রটাও ভারী অদ্ভুত। যে বাড়ি পাওয়ার জন্য সে অত আকুল, হেলায় তার ঝাড়বাতি থেকে বাল্ব বেচে দেয়। সব খুইয়ে যখন তার হাতে থাকে মোটে একটা চেয়ার, ভালবাসার একমাত্র দান, সে সেটাও বেচে দেয়। আড়াইশো টাকায় বেচা চেয়ারের গায়ে নতুন মালিক দাম লাগায় লক্ষ টাকা! অমিতাভ আয়নার এ পারে থাকলে, অন্য পারে আয়ুষ্মান। বাড়ি ভাড়ার ৩০টাকা পকেট থেকে বেরোয় না তো কি, অধিকার জমাতে সে-ও কম যায় না। এ ছবিতে আয়ুষ্মানের স্ক্রিন টাইম যতই থাকুক না কেন, ছবির রাশ কখনই তাঁর হাতে যায় না। তার দায় কাহিনিকারেরই। ছবিতে গুড্ডুর চরিত্রে সৃষ্টি শ্রীবাস্তবকে ভাল লাগে।
সুজিত এর আগে ‘ভিকি ডোনর’ বা ‘পিকু’তে যতটা অবলীলায় হাস্যরসের আমদানি করেছিলেন, তার ছাপ ‘গুলোবো সিতাবো’য় নেই। স্যাটায়ারিক্যাল ড্রামায় মনে রাখার মতো সংলাপ নেই? গুলাবো সিতাবোর মধ্যকার নোকঝোঁকই চরিত্র দুটোর ইউএসপি। কিন্তু সেই ঝগড়াও উপভোগ্য ভাবে দেখাতে ব্যর্থ পরিচালক। সুজিত দৃশ্যের পর দৃশ্য বুনে একটা কাহিনি দাঁড় করাতে দক্ষ। এখানে ভাল দৃশ্য আছে, ফাঁক রয়ে গেল বুননে। আক্ষেপ রয়েছে আরও একটা। অভীক মুখোপাধ্যায়ের ফ্রেমগুলো বড় পর্দায় যতটা খোলতাই হত, চার ইঞ্চির স্ক্রিন তা ধরতে পারল কই! ‘গুলাবো সিতাবো’তে মনে রাখার মতো জিনিস মোটে দুটো—অমিতাভের চরিত্র আর বেগমের মাস্টারস্ট্রোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy