Graceful Waheeda Rehman still silent on her Relation with Guru Dutt dgtl
Bollywood
গুরু দত্তের সঙ্গে প্রেম নিয়ে এখনও নীরব, ৮১ বছরের ওয়াহিদা এখন ওয়াইল্ডলাইফ ফোটোগ্রাফার
তাঁকে বলা হয়েছিল ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে গেলে নাম পাল্টাতে হবে। মীনাকুমারী, মধুবালা, নার্গিসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে গেলে নামে একটু আবেদন থাকতে হবে। কিন্তু ওয়াহিদা অনড়। বললেন, তিনি কিছুতেই নাম পাল্টাবেন না। তাঁর মনোভাবের কাছে হার মানল ইন্ডাস্ট্রি।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১০:৪৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ছোটবেলায় ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু জীবন বইল অন্য খাতে। তিনি হলেন হিন্দি সিনেমার অন্যতম বলিষ্ঠ অভিনেত্রী এবং ক্লাসিক সুন্দরী। তাঁর জন্যই নাকি ভেঙে গিয়েছিল গুরু এবং গীতা দত্তের দাম্পত্য। কোনওদিন সে বিষয়ে মুখ খোলেননি তিনি। ব্যক্তিত্ব, অভিনয় এবং উপস্থিতির মতো ওয়াহিদা রহমান নিজের ব্যক্তিগত পরিসরেও একইরকম পরিশীলিত। (ছবি: ফেসবুক)
০২১৮
১৯৩৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ওয়াহিদার জন্ম ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির চেঙ্গালপট্টুতে। চার বোনের মধ্যে ওয়াহিদা ছিলেন সব থেকে ছোট। তাঁর বাবা ছিলেন জেলাশাসক। ফলে ভারতের বিভিন্ন শহরে কেটেছে তাঁদের শৈশব। ছোট থেকেই ওয়াহিদা এবং তাঁর ছোট বোন ভরতনাট্যমের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
০৩১৮
জীবনে চলার পথে সুর কাটল ১৯৫১ সালে। মারা গেলেন বাবা, মহম্মদ আব্দুল রহমান। মা, মমতাজ বেগম অসুস্থ। বড় দুই বোন জাহিদা আর শাহিদার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বন্ধ হয়ে গেল ছোট দুই বোন সইদা আর ওয়াহিদার পড়াশোনা। সংসারের কথা ভেবে সিনেমায় অভিনয় করবেন বলে ঠিক করলেন ওয়াহিদা।
০৪১৮
ভাল নাচতেন বলে এল সিনেমায় কাজের সুযোগ। মূলত আইটেম নাম্বারের শিল্পী হিসেবে ওয়াহিদা ১৯৫৫ সালে কাজ করলেন তেলুগু ছবি ‘রোজুলু মারাই’-তে। এরপর আরও কিছু দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ক্রমশ নৃত্যশিল্পী থেকে অভিনেত্রী হিসেবে দেখা গেল তাঁকে।
০৫১৮
এ বার ওয়াহিদা নজরে পড়লেন পরিচালক-প্রযোজক গুরু দত্তের। তিনি ওয়াহিদাকে নিয়ে এলেন সাবেক বম্বে, আজকের মুম্বইয়ে। ওয়াহিদাকে সুযোগ দিলেন ১৯৫৬ সালের ছবি ‘সিআইডি’-তে। এই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে হিন্দি সিনেমায় পা রাখলেন ওয়াহিদা।
০৬১৮
তাঁকে বলা হয়েছিল ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে গেলে নাম পাল্টাতে হবে। মীনাকুমারী, মধুবালা, নার্গিসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে গেলে নামে একটু আবেদন থাকতে হবে। কিন্তু ওয়াহিদা অনড়। বললেন, তিনি কিছুতেই নাম পাল্টাবেন না। তাঁর মনোভাবের কাছে হার মানল ইন্ডাস্ট্রি।
০৭১৮
অভিনয়ের গুণে খুব অল্প দিনেই ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা করে নেন ওয়াহিদা। দেব আনন্দের সঙ্গে তাঁর জুটি বক্স অফিসে ছিল দারুণ জনপ্রিয়। ‘ষোলওয়া সাল’, ‘কালা বাজার’, ‘রূপ কি রানি চোরোঁ কা রাজা’, ‘কোহরা’ ছবির সুবাদে ওয়াহিদা দ্রুত উঠে আসেন প্রথম সারিতে।
০৮১৮
১৯৬২ সালে সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘অভিযান’-এ স্মরণীয় অভিনয় করেন ওয়াহিদা। ষাটের দশকে গুরু দত্ত-ওয়াহিদা রহমান জুটি ছিল চর্চার বিষয়। ওয়াহিদা নিজে গুরু দত্তকে তাঁর মেন্টর বলতেন। ‘প্যায়াসা’, ‘এক ফুল চার কাঁটে’, ‘চৌধভি কা চাঁদ’ ছবির সুবাদে নিজের কেরিয়ারে আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই সামলে নিয়েছিলেন গুরু দত্ত।
০৯১৮
গুরু দত্তের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে কোনওদিনই প্রকাশ্যে কিছু বলেননি ওয়াহিদা। কিন্তু শোনা যায়, তাঁদের ঘনিষ্ঠতার জন্য স্ত্রী গীতার সঙ্গে গুরু দত্তের সম্পর্কে ভাঙন ধরে। অশান্তি চরমে উঠলে সন্তানদের নিয়ে গীতা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। ক্রমশ অর্থকষ্ট আর সুরার নেশায় জর্জরিত হয়ে পড়েন গুরু দত্ত।
১০১৮
ত্রিকোণ সম্পর্কের জেরে তিনজনের কেরিয়ারই ধাক্কা খেতে থাকে। শেষদিকে ওয়াহিদাও নিজেকে সরিয়ে নেন গুরু দত্তের থেকে। ১৯৬২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সাহেব বিবি অউর গুলাম’ ছিল একসঙ্গে তাঁদের শেষ কাজ।
১১১৮
সবদিক থেকে বিধ্বস্ত গুরু দত্ত দু’বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ১৯৬৪ সালে তাঁকে নিজের ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। চিকিৎসকদের মতে, অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধই তাঁর রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ। এরপর চরম অর্থকষ্ট আর সুরার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন গীতাও। ১৯৭২ সালে সিরোসিস অব লিভারে মৃত্যু হয় এই শিল্পীর। তাঁর তিন সন্তানের মাথার উপর থেকে ভরসার শেষ সম্বলটুকুও চলে গিয়েছিল।
১২১৮
অনেকেই মনে করেন, এই পরিণতির জন্য ওয়াহিদা দায়ী নন। জীবনে গুরু দত্তের পর্ব থেকে ক্রমশ মূলস্রোতে ফিরে আসেন তিনি। ১৯৬৫ সালে মুক্তি পায় তাঁর কেরিয়ারের মাইলফলক ছবি ‘গাইড’। এরপর ‘তিসরি কসম’, ‘নীল কমল’, ‘খামোশি’, ‘পাত্থর কে সনম’, ‘ধাত্রী’, ‘শতরঞ্জ’ ছবির জোরে আবার ওয়াহিদা চলে আসেন স্পটলাইটে।
১৩১৮
১৯৭১ সালে ‘রেশমা অউর শেরা’ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেলেও সত্তরের দশকে ওয়াহিদার কেরিয়ারে ভাটার টান চলে আসে। নায়িকার ভূমিকার বাইরে গিয়ে তিনি অন্য ভূমিকায় অভিনয় শুরু করেন। কিন্তু তাতেও ফিরতে পারেননি আগের তারকাবৃত্তে।
১৪১৮
১৯৯১ সালে ‘লমহে’ সিনেমার মাধ্যমে ১২ বছর পরে ওয়াহিদা আবার ফিরে আসেন অভিনয়ে। এরপর ‘ওয়াটার’, ‘ওম জয় জগদীশ’, ‘রং দে বসন্তী’, ‘১৫ পার্ক অ্যাভিনিউ’, ‘দিল্লি সিক্স’-সহ কিছু ছবিতে কাজ করেছেন তিনি।
১৫১৮
১৯৭৪ সালে ওয়াহিদা বিয়ে করেন সহঅভিনেতা শশী রেখি ওরফে কমলজিৎকে। ‘শগুন’ ছবিতে তাঁরা একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। বিয়ের পরে বেঙ্গালুরুতে থাকতে শুরু করেন ওয়াহিদা। ২০০০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পরে তিনি আবার ফিরে আসেন মুম্বই। ২০১১ সালে তিনি ভূষিত হন ‘পদ্মবিভূষণ’ সম্মানে।
১৬১৮
ওয়াহিদার ছেলে সোহেল এবং মেয়ে কাশভি দু’জনেই লেখক। দু’বছর আগে সোহেল বিয়ে করেছেন ভুটানের এক তরুণীকে। ওয়াহিদার বেশির ভাগ সময় এখন কাটে সমাজসেবায়। নন্দা, আশা পারেখের মতো ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুদের সঙ্গেও তাঁকে প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়।
১৭১৮
ওয়াহিদা দেখিয়ে দিয়েছেন নিজেকে সময় দেওয়ার, পছন্দের শখ পূর্ণ করার কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই। তাঁর ফোটোগ্রাফির শখ ছিল। এখন চুটিয়ে সেই শখ পূর্ণ করছেন তিনি। ভারতের পাশাপাশি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অরণ্যে তিনি এখন ওয়াইল্ডলাইফ ফোটোগ্রাফার।
১৮১৮
সম্প্রতি তাঁর তোলা ছবির প্রদর্শনীও হয়ে গেল। ৮১ বছরের এই চিরতরুণী জানিয়েছেন, তিনি কোনওদিন ছবি তোলার প্রথাগত প্রশিক্ষণ পাননি। পরিজন ও বন্ধুবান্ধবদের উৎসাহেই তাঁর এই নতুন ভূমিকায় আগমন।