গল্পনির্ভর এই ছবির প্রেক্ষাপটটি বাংলার জঙ্গলমহলের মাওবাদী আন্দোলনের ইতিবৃত্ত নিয়ে নির্মিত। ছবি মুক্তির দ্বিতীয় সপ্তাহেও দর্শকদের উৎসাহতে এতটুকু ভাঁটা পড়েনি।
‘ইস্কাবন’ ছবির দৃশ্য
মুক্তির পরই সারা রাজ্য জুড়ে সারা ফেলেছে ইস্কাবন। গোটা ছবিটিকে ঘিরে উৎসাহ ছিল দেখার মতো। গত এক দশক ধরে জঙ্গলমহলের ইতিবৃত্তের ইতিহাস নিয়ে এমন কোনও ছবি নির্মিত হয়নি। যে ছবিতে গল্পই মুখ্য।
গল্প নির্ভর এই ছবির প্রেক্ষাপটটি বাংলার জঙ্গলমহলের মাওবাদী আন্দোলনের ইতিবৃত্ত নিয়ে নির্মিত। ছবি মুক্তির দ্বিতীয় সপ্তাহেও দর্শকদের উৎসাহতে এতটুকু ভাঁটা পড়েনি। তবে ইস্কাবনের প্রযোজক শেখ আব্দুল লালনের দাবি, ইস্কাবন দ্বিতীয় সপ্তাহের দৌড়ে হাঁটলেও নতুন ছবির আগমনে কিছুটা জায়গা নতুনদের দিয়েছে ইস্কাবন। প্রথম সপ্তাহে এই ছবিটিকে দেওয়া হয়েছিল সকালের শো টাইমে। যার ফলে বহু মানুষেরই দেখা হয়ে ওঠেনি এই ছবিটি। শুধু তা-ই নয়, ইস্কাবন দেখার জন্য মানুষ যে কতটা উৎসাহিত, তা দর্শকদের ভিড় দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ইস্কাবনের পরিচালক মনদীপ সাহা বলেন, গত এক দশকে এমন রেড স্টারদের নিয়ে বাংলা ছবি নির্মিত হয়নি।
ছবির কাহিনিকার লেখক রাধামাধব মণ্ডল। বাংলার মাওবাদী আন্দোলনের অতীত প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত ছবি ইস্কাবন। ছবির পরিচালক মনদীপ সাহা এই ছবির নির্মাণে চরম সাহসিকতার নিদর্শন দিয়েছেন। তবে পরিচালকের আক্ষেপ, নতুনদের ছবি নির্মাণ করতে আসাটাই যেন অপরাধের! নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে আক্ষেপের সুরে পরিচালক মনদীপ লিখেছেন, “ইস্কাবনকে বেঁধে রাখার এত আপ্রাণ চেষ্টা কেন চলছে? কীসের ভয়? প্রথমত সব সিনেমা হলে মর্নিং আর ম্যাটিনি শো পেয়েছি। তার পরে জনতা গিয়ে দেখছে টিকিট কাউন্টার বন্ধ। স্ট্যান্ডি, পোষ্টার হলে পৌঁছলেও লাগানো হচ্ছে না। রাস্তায় পোষ্টার ছিঁড়ে দেওয়া হচ্ছে। ফ্রেম ব্যানার হারিয়ে যাচ্ছে। সব কিছুর পিছনে কেমন একটা ধোঁয়াশা আমাদের তৈরি হচ্ছে। আবারও আমার একটাই প্রশ্ন - কেন? অনেক আশা ছিল, নন্দনে আমাদের ছবি ইস্কাবন চালানো হবে... কিন্তু সেই আশা আশাই রয়ে গেল। নন্দনে একটা শো পাইনি আমরা।”
নন্দন দেওয়া হয়নি ইস্কাবনকে! কিন্তু কেন? নন্দনে ছবি দেখানোর জন্য ক্ষমতা থাকা কি বাধ্যতামূলক? প্রশ্ন তুলেছেন পরিচালক! তবুও দর্শকদের ভাল লেগেছে ইস্কাবন, এটাই আনন্দের। এমন ছবি আগে কখনও হয়নি, যেখানে কোনও হিরো নেই। গল্পই ছবির হিরো। এর পরেও একই তালে চলছে ইস্কাবন। টিমের আশা দ্বিতীয় সপ্তাহ পার হয়ে তৃতীয় সপ্তাহেও চলবে রমরমিয়ে ইস্কাবন। আটকে রাখা যাবে না ইস্কাবনকে। ইস্কাবনের জঙ্গলের রক্তাক্ত জমিতে অসন্তোষের আগুন। সবুজের বনে আগুনের ঝলকানি! অন্ধকারের পথ ছেড়ে আলোয় ফেরার গল্প। গভীর শাল, পিয়ালের জঙ্গলে প্রকৃতির নির্জনতায় বারুদের গন্ধ। বন্দুক, বোমা, ল্যান্ড মাইন আর বিপ্লবের আঁতুড় ঘর সেই জঙ্গলমহল আর জঙ্গলমহলের বিপ্লবকে নিয়েই তোলপাড় শহরের সিনেমা প্রেমী মানুষের মন। প্রেম, হত্যা, ষড়যন্ত্র আর রাজনীতির ছবি ইস্কাবন।
ছবির পরিচালক মনদীপ সাহা ছবিতে দেখিয়েছেন অসম ত্রিকোণ প্রেম, তাদের ঘিরে তৈরি হওয়া সামাজিক বিপ্লবের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। আর বাংলার অতীত রাজনৈতিক ইতিহাসের এই প্রেক্ষাপটে মানুষের সামাজিক, প্রশাসনিক আস্থা হারিয়ে ফের আলোয় ফেরা। ইস্কাবনে রয়েছে এক রঙিন চরিত্র— আর্মি অফিসার শিব মুখোপাধ্যায়। সেই চরিত্রে সাবলীল, হৃদয়ছোঁয়া অভিনয় করেছেন বড়পর্দায় নবাগত নায়ক সঞ্জু। প্রথম কাজেই এত প্রশংসা কুড়িয়ে বেশ খুশি তিনি। জঙ্গলমহলের গোলাপির চরিত্রে রয়েছেন অনামিকা চক্রবর্তী। বুধোই ওরফে মাওবাদী সত্যের চরিত্রে সৌরভ দাস। এছাড়াও মাওবাদী নেতা নরেনজির বুক কাঁপানো অভিনয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অভিনেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জঙ্গলমহলের রাজনীতির বর্ষীয়ান নেতা সন্টু সোরেনের অনবদ্য চরিত্রে অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় আপনাকে চোখ ফেরাতে দেবে না। ইস্কাবনের এই গল্পে প্রেম ষড়যন্ত্র, লড়াই, হত্যা আর সৃষ্টির নানা চরিত্রে দেখা যাবে অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, পুষ্পিতা মুখোপাধ্যায়, দুলাল লাহিড়ী এবং সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়কে। ছবিটিতে সুর দিয়েছেন অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়। যৌথভাবে চিত্রনাট্য লিখেছেন অর্ণব ভৌমিক আর অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়। জঙ্গলমহলের দৃশ্যে ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেছেন দেবজ্যোতি মিশ্র। মন ভাল করা অনবদ্য গানে কন্ঠ দিয়েছেন নচিকেতা চক্রবর্তী, রূপঙ্কর বাগচী, অন্বেষা দত্তগুপ্ত এবং শান। ছবির কলাকুশলীরা অন্তত তৃতীয় সপ্তাহে মন প্রাণ থেকে চান এই ছবিটিকে নন্দনে দেওয়া হোক। জঙ্গলমহলের মানুষেরা বারংবার এ ছবি দেখার আর্জি জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আদিবাসীদের একটি দল, ছবি দেখার আর্জি নিয়ে গিয়েছে। অথচ তা সত্ত্বেও নন্দনে ঠাঁই পায়নি ইস্কাবন।
এই প্রতিবেদনটি ‘ইস্কাবন’ -এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy