মেরি পেয়ারি বিন্দু
পরিচালনা: অক্ষয় রায়
অভিনয়: পরিণীতি, আয়ুষ্মান, অপরাজিতা, রজতাভ
৬/১০
অপ্রচলিত কিন্তু অতি পরিচিত। এক কথায় এ যুগের বিন্দুর প্রেমকাহিনি হুবহু তেমনই!
প্রেম-প্রত্যাখ্যানের ধরন বদলেছে বহু দিন আগেই। এ সময়ের প্রেমিক-প্রেমিকাদের বাবা-মায়েরাও অভ্যস্ত সে ব্যাখ্যায়। কিন্তু রুপোলি পরদা তা দেখিয়েও যেন দেখিয়ে উঠতে পারছিল না। ‘মেরি পেয়ারি বিন্দু’ এত দিনে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল বলিউডকে।
সেই কত বছর আগে শাহরুখ-কাজলের হিট ঝড় তুলেছিল ‘পেয়ার দোস্তি হ্যায়’ ঘোষণা করে। তার পরে আবার যেন কেমন থমকেই ছিল বলিউডের প্রেম-ভাবনা। চারপাশটা যে আরও একটু পরিণত হয়েছে, তা অবশেষে দেখাল আয়ুষ্মান খুরানা ও পরিণীতি চোপড়া অভিনীত এই ছবি। প্রেমের একমাত্র পরিণতি যে বিয়ে-সংসারে নয়, প্রেম এগোতেই পারে নিজের ছন্দে। এমনকী, তাকে নিছক বন্ধুত্বের পরিচয়ও দিতে হয় না। প্রেমিকা অন্যের স্ত্রী হলেও তাকে প্রেমিকা বলেই চিনে রাখা যায়। এবং সেই সম্পর্ককে ‘এক্সট্রা ম্যারিটাল’ তকমা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। বিন্দু শঙ্করনারায়ণন (পরিণীতি) এবং অভিমন্যু রায় ওরফে বুবলার (আয়ুষ্মান) প্রেমের গল্প এর সবটাই দেখাল। নবাগত পরিচালক অক্ষয় রায় সুচারু ভাবেই জরুরি কিছু কথা পৌঁছে দিলেন হাল্কা মেজাজে। হয়তো সময়টা পরিণত হয়েছে বলেই সেটা
সম্ভব হল।
এক কথায় বদলে যাওয়া চারপাশটাকে এ ভাবেই এত দিনে স্বীকৃতি দিল বলিউড। ফর্মুলা ধরে অঙ্ক মেলানোর দায় থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা দেখালেন গল্পের লেখক সুপ্রতিম সেনগুপ্ত। সেখানেই যশ রাজ ফিল্মসের বাকি সব প্রেমের ছবি থেকে আলাদা হয়ে রইল
বিন্দু-অভিমন্যুর প্রেমকথা।
একই সঙ্গে উঠে এসেছে এ সময়ের বিভ্রান্তি, উচ্চাশা, অস্থিরতা। গায়িকা হতে চায় বিন্দু। কেরিয়ারের জন্য ছাড়তে পারে অনেক কিছু। সেই কেরিয়ারও ছাড়তে পারে সহজেই। বিয়ের পর বিয়ে ভেঙে দিতে পারে নিমেষে, আবার বিয়ে ভেঙে গেলে কান্নাও আসে স্বাভাবিক ঢঙে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ইচ্ছেটা উঠে এসেছে ছবির সংলাপেও। অতি রোম্যান্টিকতা থেকে বেরিয়ে প্রেম যে কত সহজ হয়েছে বুঝিয়ে দেন পরিচালক। বিন্দু বারবার হোঁচট খেয়ে ফিরে আসে ছোটবেলায় শোভাবাজারের বাড়ির ছাদের ঘরে জমে ওঠা সেই বন্ধুত্বের আশ্রয়ে। বুবলার কাছে স্বীকার করে, বাবার বকা খেয়ে ছোটবেলায় ছাদের ঘরে আশ্রয় নিত সে। বুবলা যেন তার কাছে সেই ছাদের ঘরটাই। প্রেমে টলমল বুবলা তেমন মুহূর্তেও কেঁপে ওঠে না। অতি সাবলীল ভঙ্গিতে উত্তর দেয়, ‘‘অব তো রেন্ট দেনা চালু কর্!’’ এত সহজ প্রেম আদান-প্রদান কত বারই বা ঘটে বলিউডের ছবিতে?
কিছু দিন আগেই ছবির নায়িকা পরিণীতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কলকাতায় নামলেই মনে হয় যেন সময়ের নিরিখে ২০ বছর পিছিয়ে গিয়েছেন। সেই কলকাতাকে কেন্দ্র করেই এই আধুনিক প্রেমের গল্প ভাল লাগা তৈরি করে। দাপটের সঙ্গে টলিউডকেও তুলে ধরে এই ছবি। পার্শ্ব চরিত্রে অপরাজিতা আঢ্য (বুবলার মা), রজতাভ দত্ত (বুবলার বাবা) প্রশংসনীয়।
তবু কোথাও যেন জমাট বাঁধতে বাঁধতে একটু গোলমাল হয়ে যায় হিসেবে। বলিউড-প্রেমের স্ট্রাকচারটা আধভাঙা থেকে যায়। গল্পের মতো স্মার্ট হয় না ছবি। ঢুকে পড়ে অহেতুক কিছু কমিক দৃশ্য, হঠাৎ নাচ-গান কেটে দেয় কমেডির ছন্দ। কোথাও কোথাও টেনে বাড়ানো হয়েছে গল্প। ছবির একদম শেষের দিকে ছকভাঙা অস্থির বিন্দুর মুখেই বসিয়ে দেওয়া হয়, মাতৃত্বেই পূর্ণতা পেয়েছে সে। ফলে শেষ দৃশ্যে নায়ক-নায়িকার ‘অন্য রকম’ মিলনের আগেই আলুনি হয়ে যায় এতক্ষণের চেষ্টা। প্রচণ্ড চেয়েও যেন স্রোতে ভাসার বলিউডি অভ্যাসটা ঢাকতে পারল না ‘মেরি পেয়ারি বিন্দু’! অথচ গল্প এবং অভিনয়ের জোরে এই ছবির যথেষ্ট সুযোগ ছিল এক বিকল্প স্রোত তৈরি
করে ফেলার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy