Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

দিলওয়ালে হলে তবেই দিলওয়ালে দেখতে যান

একই দিনে মুক্তি পেয়েছে দু’টি বড় বাজেটের ছবি। দু’টি ছবি নিয়েই বক্স অফিস এবং দর্শকদের প্রত্যাশা আকাশ ছোঁয়া। তাই মুক্তির আগে থেকেই এই দু’টি ছবির প্রচারের লড়াইটাও বেশ বড় আকার নেয়।

সুদীপ দে
শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৩:৩৫
Share: Save:

একই দিনে মুক্তি পেয়েছে দু’টি বড় বাজেটের ছবি। দু’টি ছবি নিয়েই বক্স অফিস এবং দর্শকদের প্রত্যাশা আকাশ ছোঁয়া। তাই মুক্তির আগে থেকেই এই দু’টি ছবির প্রচারের লড়াইটাও বেশ বড় আকার নেয়। কিন্তু আপাতত যা ফলাফল সামনে এসেছে তাতে ‘রেড চিলিজ-এ বসতে লক্ষ্মী’ বলা যেতেই পারে। শুক্রবার আর শনিবার মিলিয়ে শুধু ভারতের বাজার থেকেই এ ছবির আয় ৪১.০৯ কোটি। যেখানে বনশালীর বাজিরাও মস্তানীর আয় ২৮.৩২ কোটি টাকা। আয়ের নিরিখে দিলওয়ালে বাজিরাও মস্তানীকে অনেকটাই পেছনে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু ছবির চিত্রনাট্যের নিরিখে যদি বিচার করতে হয় তাহলে! ছবি হিসেবে কেমন এই দিলওয়ালে?

না, ছবির বাণিজ্যিক সাফল্যের নিরিখে একে বিচার করলে চলবে না। ২০১০-এ মাই নেম ইজ খান-এর পর দিলওয়ালেতে আবার একসঙ্গে দেখা গেল বলিউডের শেষ দু’দশকের সেরা রোম্যান্টিক জুটি শাহরুখ-কাজলকে। তাই এ ছবিতে রোম্যান্স যে একটা অন্য মাত্রা পাবে সেটাই তো স্বাভাবিক! কিন্তু হায়! ছবিতে তেমন সুযোগ কোথায়? প্রায় পাঁচ বছর পর অন স্ক্রিন রোম্যান্স শুধু গানেই সীমাবদ্ধ। এছাড়া ছবিতে টুকিটাকি ‘টুকুর টুকুর’। বাকি গোটা ছবি জুড়ে প্রায় রাগারাগি, মারামারি আর গোলাগুলিতেই সময় গেল দুই মহাজুটির। আর বরুন ধবন আর কৃতির প্রেমে সে গভীরতা কোথায়! হাল্কা খুনসুটি আর অপরিনত বয়সের অগভীর প্রেম মানুষকে খানিকটা হাসির সুযোগ করে দিয়েছে। এ ছাড়াও ছবিতে জনি লিবার আর বোমান ইরানির কমেডিও রয়েছে। অর্থাত্ প্রেমের দৃশ্যেও হাসবেন, গোয়ার মাফিয়াকে দেখেও হাসবেন।

তবে হ্যাঁ, জীবনে তো হাসি-ঠাট্টার প্রয়োজনও আছে। লোকে বলে হাসলে মন ভাল থাকে, আর শরীরও। তাই শরীর-মনের সুস্বাস্থ্যের জন্য এ ছবি অবশ্যই দেখুন। কিন্তু ভুলে গেলে চলবেনা দিলওয়ালে ছবির পরিচালক রোহিত শেট্টি। তাই ছবির আসল চমক এর অ্যাকশনে। আর ছবিতে অ্যাকশনের প্রাধান্য এতোটাই, যে বলিউডের এ কালের সেরা রোম্যান্টিক জুটিকেও একে অপরের বিরুদ্ধে অ্যাকশনেই দেখা গেল বেশি। ১৯৯৫-এ মুক্তি পাওয়া দিলওয়ালে দুলহালিয়া লে জায়েঙ্গে ছবির সঙ্গে দিলওয়ালের মিল খুঁজতে গেলেই মুলকিল। দু’টি ছবিতেই শাহরুখ-কাজল কমন ফ্যাক্টর এবং দিলওয়ালের বাণিজ্যিক সাফল্যের এক্স ফ্যাক্টরও এই দু’জন। কিন্তু এ ছবি কোনও ভাবেই দিলওয়ালে দুলহালিয়া লে জায়েঙ্গে-র সিক্যুয়াল নয়। বরং এটির সঙ্গে হলিউডের ছবি ‘বেস্ট অফ মি’-র চিত্রনাট্যের অনেক মিল। তাই ছবির গল্পের বিচারে দিলওয়ালে কোনও ভাবেই রোম্যান্টিক ছবি নয়। বলিউডের সেরা রোম্যান্টিক জুটির উপস্থিতি সত্ত্বেও নয়। ছবিতে প্রিতমের তৈরি গানগুলি বেশ ভাল। ছবির মিউজিক রিলিজেই অসংখ্য মানুষের মন কেড়েছিল ছবির গানগুলি।

আরও পড়ুন, শাহরুখ-কাজল রোমান্টিক দৃশ্যে সমস্যায় পড়েছিলেন?

ছবির লোকেশন, সেট অসাধারণ। ছবির ভিসুয়াল এফেক্ট নজর কাড়া। তবে হলিউডের গল্পে বলিউডি ‘গরম মশালা’-র ছোঁয়া আর শাহরুখ খানের বাণিজ্যিক বুদ্ধি দিলওয়ালে ছবিটিকে ৩০০০ এরও বেশি ভারতীয় স্ক্রিনে ‘হাউসফুল’ করলেও ছবির চিত্রনাট্য বেশ দুর্বল আর ডায়লগও তেমন আহামরি নয়। ‘গেরুয়া’ গানের দৃশ্যে শাহরুখ-কাজলের অনবদ্য কেমেস্ট্রি বাকি ছবিতে গায়েব। মনে হচ্ছিল, ‘গেরুয়া’ গানের পরে পরে দু’জনেই যেন ‘গেরুয়া’ পরে প্রেমের থেকে অনেক দূরে সরে গিয়ে সন্যাস নিয়ে নিলেন। গল্পে রাজ-মীরার দীর্ঘদিনের পারিবারিক শত্রুতার এমন সরল সাদামাটা নিস্পত্তিটাও বেশ অবাক করা। তাই শত্রুতাও জমল না ঠিক মতো। দেশের বেশ কয়েক লক্ষ মানুষ এরই মধ্যে ছবিটি দেখে ফেলেছেন। এবং এটা না বললেও চলে যে বেশিরভাগ মানুষই শাহরুখ-কাজলের অনবদ্য কেমেস্ট্রির টানেই ছুটে গিয়েছেন সিনেমা হলে বা মাল্টিপ্লেক্সে। আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ পরেও যাবেন প্রায় একই কারণে। কিন্তু রাগ করবেন না রোহিত, ছবির গল্প তেমন জমলো না। তাই আপনি যদি নিজে বড় মনের মানুষ (দিলওয়ালে) না হন, তাহলে প্লিজ দিলওয়ালে দেখতে যাবেন না। কারণ দিমাগওয়ালারা এ ছবি দেখলে সত্যিই হতাশ হবেন হয়তো।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE