Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দর্শককে অবুঝ ভাববেন না

প্রথমার্ধে তাও ধৈর্য থাকে, দ্বিতীয়ার্ধ কহতব্য নয়। যাঁরা শ্যুটিং দেখেছেন জানেন, তৃতীয় পক্ষের কাছে গোটা বিষয়টা একধারে ইন্টারেস্টিং এবং ঘুম পাড়ানিও বটে! একটা দৃশ্য সম্পূর্ণ হতে হতে লম্বা হাই ওঠে।

ছবির একটি দৃশ্য

ছবির একটি দৃশ্য

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৭ ২৩:৩৬
Share: Save:

চলচ্চিত্র সার্কাস

পরিচালনা: মৈনাক ভৌমিক

অভিনয়: ঋত্বিক, পাওলি, পায়েল, রুদ্রনীল, সুদীপ্তা, অরিন্দম, তনুশ্রী, সুজন, কনীনিকা, বিশ্বনাথ

৫/১০

দশমীর সন্ধ্যায় সাউথ সিটির প্রায় ফাঁকা সিনেমা হলে দুই মহিলার কথোপকথন:

(প্রথমার্ধ সবে শেষ) ছবির গল্পটা কেউ জিজ্ঞেস করলে কী বলব?

কিছু বলার নেই তো। গল্প কই?

ঠিকই, মৈনাক ভৌমিকের ‘চলচ্চিত্র সার্কাস’-এ আসলে কোনও গল্প নেই। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কিছু অন্দর-কথা ঘটনা পরম্পরায় সাজানো। সব সময় একটা নিটোল গল্প থাকতে হবে, এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয়নি। তা বলে স্রেফ কয়েকটা ঘটনা জুড়ে দিলেই কি সব সময় ছবি তৈরি হয়? সিনে দুনিয়া মানেই যাঁদের কাছে চোখ ধাঁধানো জৌলুস, তাঁদের কাছে ছবিটা আকর্ষণীয় হতে পারত, যদি দর্শককে ধরে রাখার মতো কোনও উপাদান সেখানে থাকত। পরপর সাজানো কয়েকটা সিকোয়েন্স ছবিটাকে কোথাও পৌঁছতে পারে না।

বছরের শুরুতে মৈনাকের ‘বিবাহ ডায়েরিজ’ একটা টাটকা বাতাসের মতো ছিল। আর এই ছবি নিতান্তই গুমোট তৈরি করে। পরিচালক চেয়েছিলেন সারক্যাজমকে হাতিয়ার করে ছবি তৈরির নেপথ্য গল্প তুলে ধরতে। দর্শকই যেন তাঁর সারক্যাজমের শিকার হলেন।

প্রথমার্ধে তাও ধৈর্য থাকে, দ্বিতীয়ার্ধ কহতব্য নয়। যাঁরা শ্যুটিং দেখেছেন জানেন, তৃতীয় পক্ষের কাছে গোটা বিষয়টা একধারে ইন্টারেস্টিং এবং ঘুম পাড়ানিও বটে! একটা দৃশ্য সম্পূর্ণ হতে হতে লম্বা হাই ওঠে। দর্শককে ছবি তৈরির ঘাঁতঘোঁত বোঝাতে গিয়ে সত্যিই ঘুম পাড়িয়ে ফেললেন পরিচালক। তিনটে শট টেকিং তিনি পরদায় এত বার দেখালেন যে ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে বাধ্য। দর্শক ছবি উপভোগ করতে এসেছেন, ক্লান্তিভোগ নয়।

অথচ ছবির চরিত্রগুলো কিন্তু হুবহু রুপোলি দুনিয়ার পাতা থেকে উঠে আসা। আজব অথচ বাস্তব। দোয়াঁশলা পরিচালক (ঋত্বিক) আছে, ছকবাজ ইপি (অরিন্দম), জোকার প্রযোজক (বিশ্বনাথ) আর দু’নৌকায় পা দিয়ে চলা এই ইন্ডাস্ট্রির অধিকাংশের মতো
আরও অনেকে...

ছবির ন্যারেশনের স্টাইল বেশ ভাল। কিছু ভাল ওয়ান লাইনারও আছে। ইন্ডাস্ট্রির লোকজনকে ঠুকে পাঞ্চ লাইন আছে। মৈনাক নিজেকে নিয়েও মজা করেছেন। নিজের সেন্স অব হিউমারকে অবলীলায় চরিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে পারেন মৈনাক। এ ছবিতে যার প্রায় কিছুই দেখা গেল না। সব মিলিয়ে ‘চলচ্চিত্র সার্কাস’ থেকে চলচ্চিত্রটাই বাদ পড়ে গেল। রইল শুধু সার্কাস। যেখানে আবার পরদা তোলার আগেই ড্রপসিন পড়ে যায়!

একটি দৃশ্যে ঋত্বিক আর তার সিনেম্যাটোগ্রাফার বন্ধু (সুজন) কী ভাবে ছবি তৈরি করলে দর্শক ‘খাবে’ তা নিয়ে আলোচনা করে। সংলাপেই আছে কিছু ‘অবুঝ’-এর জন্য ছবি বানানো হয়। দর্শকই কি সত্যিই অবুঝ?

গত বছর কয়েক ধরে ইন্ডাস্ট্রির গ্রাফ বলে দিচ্ছে, ভাল জিনিস দিতে না পারলে তাঁরা ছবিটা স্রেফ বাতিল করে দেবেন। সলমন থেকে শাহরুখ...কি বাংলার কোনও তারকা কারওরই নিস্তার নেই অবুঝদের থেকে।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE