প্রতীকী ছবি।
সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে টেলিভিশন ও টলিউডের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের বৈঠকে বাংলা সিনেমা-সিরিয়ালের শুটিং-সহ আরও কয়েকটি বিষয়ে কিছু নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। শুটিং ফ্লোরে সর্বোচ্চ ৩৫ জনের যে ইউনিট নিয়ে কাজের অনুমতি বহাল ছিল এত দিন, মুখ্যমন্ত্রী তা বাড়িয়ে ৪০ জন করলেন। এ ছাড়া, নন-ফিকশন ও রিয়্যালিটি শোয়ের শুটিং ফের চালু করা, আমপানে বিধ্বস্ত সিঙ্গল স্ক্রিনগুলিকে সাহায্য করা, আর্টিস্টদের গ্রুমিং ও স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠানের ঘোষণা-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এ দিনের বৈঠকে।
ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ান অ্যান্ড ওয়র্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার তরফে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, স্বরূপ বিশ্বাস, আর্টিস্ট ফোরামের সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী, ইমপা-র সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত, প্রযোজক মহেন্দ্র সোনি, পরিচালক অরিন্দম শীল, রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, বাংলা চ্যানেলগুলির প্রতিনিধি ও প্রযোজকরা এবং সরকারি আধিকারিকদের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বৈঠক করেন। একে একে সকলের বক্তব্যে উঠে আসে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করে শুটিং চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার কিছু বাস্তব সমস্যার কথা। সিনেমা হল বন্ধ থাকা, ধুঁকতে থাকা সিঙ্গল স্ক্রিন, মুষ্টিমেয় আর্টিস্ট কাজের সুযোগ পাওয়ায় বাকি শিল্পীদের ক্ষোভ, আউটডোর শুটিংয়ের অসুবিধে, বিদ্যুতের বিল ও ট্যাক্স ছাড় দেওয়ার অনুরোধ-সহ নানা সমস্যা ও দাবিদাওয়া উঠে আসে এ দিনের বৈঠকে। কর মকুব কিংবা বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ভর্তুকির অনুরোধ রাখেননি মমতা। তবে ফ্লোরে পাঁচজন অতিরিক্ত সদস্য নিয়ে কাজ করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া লাইভ অডিয়েন্সের অনুপস্থিতিতে নন-ফিকশন ও রিয়্যালিটি শোয়ের শুটিংও শুরু করা যাবে বলে ঠিক হয় বৈঠকে। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে অপেক্ষাকৃত কম জনবহুল এলাকায় আউটডোর শুটিংয়েরও অনুমতি মেলে। ওয়েব সিরিজ়ের শুটিংয়ের তত্ত্বাবধানে একটি কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন মমতা, যেখানে রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়-সহ আরও কয়েকজনকে দায়িত্ব নিতে হতে পারে। আর্টিস্ট ফোরামের দাবি মেনে শিল্পীদের গ্রুমিং ও তাঁদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান তৈরিরও আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। অরিন্দম, রাজ, পরমব্রত, সোহম-সহ প্রায় প্রত্যেকেই সিঙ্গল স্ক্রিনের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। আমপানে বিধ্বস্ত সিঙ্গল স্ক্রিনগুলিকে সাহায্যের আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। বাইরে থেকে এসে এ রাজ্যে যাতে শুটিং করতে পারা যায়, তার জন্যও উদ্যোগী হতে বলেন তিনি। ঘোষণা করেন, এ বছর ২৪ জুলাইয়ের পরিবর্তে রাজ্য সরকারের তরফে মহানায়ক সম্মান প্রদানের অনুষ্ঠান হতে পারে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সময়ে।
এ দিন বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় উঠে এল শ্রীকান্ত মোহতা এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের নামও। মহেন্দ্র সোনির বক্তব্য পেশ করার আগে তাঁর কাছ থেকে শ্রীকান্তের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী। টলিউডের জন্য করা সরকারের পদক্ষেপে প্রসেনজিতের পরামর্শের কথাও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী, যদিও এ দিনের বৈঠকে তিনি অনুপস্থিত। কালার্স বাংলা চ্যানেল যে চারটি সিরিয়াল বন্ধ করেছে, তা বৈঠকে তুলে ধরেন আর্টিস্ট ফোরামের সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী। বন্ধ হয়ে যাওয়া শোগুলির পরিবর্তে নতুন শো আনার ব্যবস্থা যেন চ্যানেল করে, পরোক্ষভাবে সেই নির্দেশ দেন মমতা। এ দিন আর্টিস্ট ফোরামের তরফে বেশ কয়েকটি দাবিদাওয়া পেশ করেন যুগ্ম সম্পাদক সপ্তর্ষি রায়ও, যিনি কিছু দিন আগেই ইস্তফা দিয়েছিলেন ফোরাম থেকে। তিনি ছাড়াও ফোরামের আরও দুই সদস্য এ দিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, যাঁরা ইস্তফাপত্র পেশ করেছিলেন। তবে ফোরামের অভ্যন্তরীণ বিবাদ মিটলে তাঁরা ফের কমিটিতে ফিরবেন বলেই খবর।
বৈঠকে শিল্পীদের পারিশ্রমিক কমানো নিয়ে একপ্রস্ত তরজা হয় সপ্তর্ষি রায় এবং প্রযোজক স্নেহাশিস চক্রবর্তীর মধ্যে। সেটে অতিরিক্ত টেকনিশিয়ানের উপস্থিতি নিয়ে স্নেহাশিসের বক্তব্য ও আর্টিস্ট ফোরামের মন্তব্যের প্রতিবাদে স্বরূপ বিশ্বাস সরব হলে, তাঁকে তৎক্ষণাৎ থামিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সকলকেই বক্তব্য পেশ করতে দিতে হবে, এই বলে স্বরূপকে নিরস্ত করেন মমতা। বৈঠকের শেষে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, করোনা নিয়ে সচেতনতা যেন সিনেমা-সিরিয়ালের কনটেন্টেও প্রতিফলিত হয়। রবীন্দ্র সরোবর কিংবা ইকো পার্কের মতো খোলা জায়গায় নির্মাতাদের শুটিং করার পরামর্শও দেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy