Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
parambrata chatterjee

Parambrata: আড়াই হাজার রবীন্দ্রগানের মধ্যে ২২শো গান বাবার মুখস্থ ছিল: পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়

সবার প্রচণ্ড কৌতূহল, সাংবাদিক বাবা কেমন?  

বাবা, মায়ের সঙ্গে পরমব্রত

বাবা, মায়ের সঙ্গে পরমব্রত

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২১ ১৪:২৮
Share: Save:

‘বাবা’... বললেই ২টো ছবি ভেসে ওঠে আমার চোখে। সুপুরুষ, লম্বা গড়নের মানুষ। গায়ের রং ঈষৎ চাপা। লম্বা চুল। মুখময় দাড়ি-গোঁফ। কম কথার মানুষ। সারাক্ষণ সাংবাদিকতার মধ্যে বুঁদ হয়ে আছেন। অবসরে গান, তবলা, ইতিহাস তাঁর চর্চার বিষয়। দুই, শারীরিক ভাবে বাবা যেন অনেক দূরের। কিন্তু মনের খুব কাছের বন্ধু। এই ২ বিপরীত সত্তা নিয়েই আমার বাবা সতীনাথ চট্টোপাধ্যায়। নামী পত্রিকার চলচ্চিত্র বিভাগীয় সম্পাদক।

বাবাকে কোনও দিন বেশি কথা বলতে দেখিনি। একমাত্র নিজেকে মেলে ধরতেন খুব নিকট বন্ধুদের কাছে। বাকি সময় প্রয়োজনের বাইরে কথাই বলতেন না। আমার সঙ্গেও না। এই কারণেই আমার কাছে মা আর বাবা বিপরীত মেরুর বাসিন্দা। মা আমার ভরসার জায়গা। বাবা যেন সেই তুতো ভাই! যার সঙ্গে অনিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ। কিন্তু দেখা হলেই দেদার আড্ডা। এমনও রাত গিয়েছে, বাবা আমায় ঘুম থেকে তুলে সারা দিন যে রবীন্দ্রগান গুনগুন করেছেন, সেটা শুনিয়েছেন। গানের মানে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তখন আমি খুব ছোট তো। এক এক সময় বেশ বিরক্ত-ই হতাম। এখন বুঝি, সংস্কৃতির কত দামি বীজ বাবা আমার মনে রোপণ করে দিয়ে গিয়েছেন। বাবার জন্যই আমার গানের প্রতি ভালবাসা, টান। আড়াই হাজার রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্যে আমার বাবার ২২শো গান মুখস্থ ছিল! এর অনেকগুলো বাবা নিজে গেয়ে আমায় তুলিয়ে দিয়েছেন। বাবা তাই আমার সঙ্গীতগুরুও। আবার আমিও ইতিহাসের কোনও জিনিস জানতে বাবার ফেরার অপেক্ষায় জেগে বসে থাকতাম। বাবা ফিরলে সেই নিয়ে আলোচনা। হয়তো মাঝরাত পেরিয়ে আরও অনেকটা সময় গড়িয়ে যেত। আমাদের আড্ডা-আলোচনা চলছেই।

বাবা সতীনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছোট্ট পরমব্রত

বাবা সতীনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছোট্ট পরমব্রত

অনেকেরই কৌতূহল, সাংবাদিক বাবা কেমন? আমার বাবা যে অনেক বড় মাপের সাংবাদিক, সেটা বুঝেছিলাম তাঁর মৃত্যুর পর। বেঁচে থাকতে বাবা বুঝতেই দেননি তাঁর পরিধি, বিস্তৃতি কতখানি? মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই দেখলাম, প্রচুর মানুষ, বিশিষ্টজন তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন। রূপম ইসলাম জানাচ্ছেন, তাঁর গানের প্রথম অ্যালবামের খবর নিজ দায়িত্বে প্রথম ছেপেছিলেন আমার বাবা। কেউ বলছেন, তাঁর পেশাগত জীবন শুরু সতীনাথ চট্টোপাধ্যায়ের লেখনি দিয়ে। আমি বরাবর দেখেছি, নতুন শিল্পী-অভিনেতাদের জন্য বাবার দরজা সব সময় খোলা থাকত। কোথায়, কেউ নতুন কিছু করলেই তিনি সেই খবর সবার আগে ছাপতেন।

এমন কাজপাগল, কম কথার মানুষ একটু রাগী হবেন-- এমনটাও ভাবেন অনেকে। বাস্তবে বাবা কিন্তু উল্টোটাই ছিলেন। এতটাই নরম যে, জোরে বকতে পর্যন্ত পারতেন না! ব্যতিক্রম এক দিন। মা সে দিন বাড়িতে ছিলেন না। আমার দেখভালের দায়িত্ব বাবার কাঁধে। দুপুরে স্নান করাতে নিয়ে গিয়েছেন। আমিও সে দিন একটু বেশিই দুষ্টুমি করে ফেলেছি। বাবা রাগ চাপতে না পেরে আমার হাত জোরে চেপে ধরে শুধু চিৎকার করে উঠেছিলেন, ‘‘অ্যাই চোপ!’’ ব্যাস, বাবার শাসন ওটুকুই!

অন্য বিষয়গুলি:

parambrata chatterjee Fathers Day 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy