Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Rahul Bannerjee

Rahul: জানতে চেয়েছিলে, একসঙ্গে থাকি না কেন, বিশ্বাস করো আজও উত্তর নেই: ছেলেকে চিঠি রাহুলের

পিতৃদিবসে আনন্দবাজার অনলাইনে ছেলে সহজকে চিঠি লিখলেন অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাহুল বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে ছেলে সহজ

রাহুল বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে ছেলে সহজ

রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২১ ১৯:৩৩
Share: Save:

সহজ,

এই চিঠিটা আজকে ‘ফাদারস ডে’ বলে লিখতে বসা। যদিও তোমার বাবা নিজে বেহদ্দ বাংলা মিডিয়াম। জীবনেও ‘ফাদারস ডে’, ‘মাদারস ডে’— এ গুলো আলাদা করে জানত না, কিন্তু কুঁজোর যেমন চিৎ হয়ে শুতে ইচ্ছে করে, আমারও আজকাল এ সব উদযাপন করতে ইচ্ছা করে। আসলে কিছুই না, তোমাকে কাছে পাওয়ার অজুহাত।

জানো সহজ, আমি আর তোমার মা তখন থেকে বন্ধু যখন তোমার মায়ের ১৪ বছর বয়স ছিল, আর আমার ২১। সব ধারাবাহিকে আমরা ভাই-বোন। যে হেতু ছোট, তাই অন্যদের ছেড়ে শেষে আমাদের শট নেওয়া হতো। আর আমরা দু’জন সেটের কোনায় বসে আড্ডা মেরে যেতাম। তোমার মা ছিল বেহালার একজন অ্যাকাউন্টস শিক্ষকের মেয়ে আর আমি খুব সাধারণ এক সরকারি চাকুরের ছেলে। আমরা দু’জন এই ইন্ডাস্ট্রির কিছুই জানতাম না। শুধু জানতাম, মন দিয়ে অভিনয়টুকু করতে। তোমাকে এই গল্প কেন বলছি জানো? যদি কখনও তুমি আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করো, তা হলে তুমি জানবে তুমি প্রিভিলেজড, যে প্রিভিলেজ একটি ১৪ বছরের মেয়ে এবং একটি ২১ বছরের ছেলে দিনের পর দিন অপমানিত হতে হতে অর্জন করেছে— ঘটনাচক্রে যারা তোমার বাবা মা। এই ইন্ডাস্ট্রিতে সত্যিই যদি কাজ করতে ইচ্ছে হয় তোমার, আমি তোমাকে অনুরোধ করব প্রত্যেকটা মানুষকে তার প্রাপ্য সম্মান দিও। কারণ যে মানুষটি তোমাকে চা দিচ্ছেন, তিনি হয়তো তোমার বাবা-মাকেও ছোট দেখেছেন। উপার্জন আর ক্ষমতার আতসকাঁচ দিয়ে যারা মানুষকে দেখে, তাদের মতো অশিক্ষিত এই পৃথিবীতে কেউ নেই। এ রকম অশিক্ষায় তুমি বড় হবে না, এটুকু আশা তো করতেই পারি, কী বলো?

পরিবার

পরিবার

যে দিন আমরা প্রথম খবর পাই, তুমি আমাদের জীবনে আসছো, আমরা আনন্দে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম জানো? তোমার মা গুচ্ছের সব অ্যাপ ডাউনলোড করে ফেলল। রোজ আমাকে আপডেট দিত, ‘এখন ওর সাইজ আপেলের মতো’, ‘এখন ওর সাইজ আনারসের মতো’, আরও কত কী! তার পর যখন তুমি হলে, তোমার মায়ের আর একটা রূপ দেখলাম। তুমি জানো না হয়তো, তোমার মা তোমাকে কোনও দিন বাজার চলতি বেবিফুড কিনে খাওয়ায়নি। সব নিজের হাতে বানাত। তাতে যদি সারা দিন লাগে, তো লাগুক। তোমার মায়ের তোমার জন্য অনেক সংগ্রাম, অনেক আত্মত্যাগ। তুমি কতটা মনে রাখবে, তা তোমার সিদ্ধান্ত। আজ তোমার মা ইনস্টাগ্রামে যথেষ্ট এস্থেটিক ছবি দেওয়ার পরেও উড়ো কমেন্ট ভেসে আসে ‘লজ্জা করে না আপনার? আপনি কিনা মা?’ না, এ নিয়ে কোনও দুঃখবোধ আছে ভেবো না, গন্ডারের চামড়া ধার নিয়ে তবে সেলিব্রিটি হওয়া যায়, এ আমরা শিখে গিয়েছি। শুধু তোমাকে বলছি, তোমার মায়ের লড়াইয়ের একটা আন্দাজ দেওয়ার জন্য। আমরা, সন্তানেরা শুধু মায়ের বুকের ওমটুকু টের পাই, পিঠে কতগুলো ছুরি গাঁথা আছে দেখতে পাই না। মায়েরা তা সযত্নে লুকিয়ে রাখেন। তোমার মাও রেখেছে। কিন্তু আমি চাইব, তুমি সেই ক্ষতগুলোর শুশ্রূষা করবে। মায়ের পিঠের ছুরিগুলো যদি সরাতে নাও পারো, তোমার একটু আদরই মায়ের জন্য যথেষ্ট হবে।

রাহুল, প্রিয়াঙ্কা এবং সহজ

রাহুল, প্রিয়াঙ্কা এবং সহজ

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমি কোন হরিদাস পাল যে তোমাকে এত জ্ঞান দিচ্ছে? আমি তোর বাপ (হাঃ হাঃ), দূর সম্পর্কেরই হই, বাপ তো বটে! সেই উপলক্ষে একটু জ্ঞান দেওয়ার অধিকার জন্মে যায়ই। আমি তোমাকে আমার ভাগের সব ক'টা নদী, পাহাড়, জঙ্গল উত্তরাধিকার সূত্রে দিয়ে যাচ্ছি। বইমেলার ধুলো, কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাথগুলোকেও পৈতৃক সম্পত্তি ভাবতে পারো এর পর থেকে। আর হ্যাঁ, তোমাকে দিয়ে দিলাম আমার একটা প্রচণ্ড অহংকারের জিনিস। আমার ভাষা। বাংলা। হ্যাঁ, বাংলা ভাষা। আর শুধু সেই বাংলা ভাষা নয়, যেটা আমরা দক্ষিণ কলকাতায় বলি। বাংলা তার সমস্ত উপভাষা, ডায়ালেক্ট নিয়ে যে প্রবল ঐশ্বর্যের অধিকারী, সেই সব ঐশ্বর্য তোমাকে দিয়ে দিলাম। সবই দিয়ে দিলাম, যা যা আমার বলে আমি জানি। শুধু তোমার একটা প্রশ্নের উত্তর ছাড়া। তখন তুমি সদ্য মায়ের সঙ্গে আলাদা হয়েছ। প্রায় এক বছর পর তুমি আমাদের বেডরুমে ঢুকে এদিক ওদিক দেখে আমাকে প্রশ্ন করেছিলে, ‘আমি এই ঘরে থাকতাম না বাবা?’ আমি উত্তর দিয়েছিলাম - হ্যাঁ। তুমি প্রশ্ন করেছিলে – ‘তার পর কী হল? এখন আর থাকি না কেন?’ বিশ্বাস করো, সেই প্রশ্নের উত্তর সে দিনও ছিল না, আজও নেই। ক্ষমা করো।

বাবা

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy