তাবড় তাবড় শিল্পীর আঁকা হুবহু ক্যানভাসের সাদা পাতায় ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা রয়েছে সানির। ছবি: সংগৃহীত
‘আদমি যব উঁচাই সে নীচে গিরতা হ্যায় না, শুরওয়াত মে অ্যায়সা লগতা হ্যায় কি উয়ো উড় রহা হ্যায়।’ বাস্তবের এই কঠিন সত্যটা খুব সহজেই ‘ফরজ়ি’ ওয়েব সিরিজ়ের মাধ্যমে জানিয়েছেন ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ খ্যাত রাজ নিদিমোরু এবং কৃষ্ণ ডিকে। নিজের কাজ কী ভাবে উদ্যাপন করতে হয় তা ভাল করেই জানেন এই জুটি। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে একটি ‘স্পাই ইউনিভার্স’ গড়ে তুলতে তাঁরা এতটাই তৎপর হয়ে উঠেছিলেন যে, আনুষ্ঠানিক ভাবে যে দিন মুক্তি পাওয়ার কথা, তার এক দিন আগেই মুক্তি পেয়ে গিয়েছিল ‘ফরজ়ি’। কিন্তু এই শুভারম্ভের ফল আদৌ মিষ্টি হল কি?
রাজ এবং ডিকে জুটির ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ ওয়েব সিরিজ়ের দ্বিতীয় পর্ব মুক্তি পাওয়ার পর প্রায় দু’বছরের বিরতি। এই জুটি পর্দায় পরবর্তী কোন ধামাকা নিয়ে আসছেন, তার জন্য অধীর অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন দর্শক। তাঁদের দীর্ঘ অপেক্ষাও সার্থক হয়েছে। সুমন কুমার এবং সীতা আর মেননের হাত ধরে ‘ফরজ়ি’ ওয়েব সিরিজ়ের চিত্রনাট্য নির্মাণ করেছেন রাজ এবং ডিকে। প্রথমত, শাহিদ কপূরকে এই প্রথম বার কোনও ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে। আবার উপরি পাওনা হিসাবে রয়েছেন দক্ষিণী অভিনেতা বিজয় সেতুপতি এবং বলিউডের দক্ষ অভিনেতা কেকে মেনন।
‘ফরজ়ি’ ওয়েব সিরিজ়ের গল্পের সূত্রপাত হয় একটি পত্রিকাকে ঘিরে। ক্রান্তি পত্রিকা— সানির (শাহিদ কপূর) দাদুর সারা জীবনের স্বপ্ন। এই পত্রিকা পড়ে দেশের যুবক-যুবতীর চিন্তাধারার মধ্যে পরিবর্তন আসবে, এই ছিল সানির দাদুর ইচ্ছা। কিন্তু প্রেস চালানোর জন্য টাকা ধার নিতে নিতে ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ফলে প্রেস বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। আর দাদুর ভালবাসার প্রেসকে বাঁচানোর জন্য শুরু হয় লড়াই। যেখানে রয়েছে দুই বন্ধুর নিখাদ সম্পর্ক, জাল নোট কারবারির খুঁটিনাটি, প্রেম, বিচ্ছেদ ইত্যাদি ইত্যাদি।
সানি পেশায় এক জন শিল্পী। আঁকার হাত দুর্দান্ত তার। বিশ্বের তাবড় তাবড় শিল্পীর আঁকা হুবহু ক্যানভাসের সাদা পাতায় ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা রয়েছে সানির। ৫ মিনিটে কোনও মানুষের মুখের আদলও স্কেচ করে দিতে পারে অবিকল। তবুও অর্থাভাব। প্রেম দরজায় টোকা দিয়েও ফিরে যায় এই কারণে। দাদুর প্রেসেও যখন বেহাল দশা, তখন যেন সম্বিৎ ফেরে সানির। নতুন বছর উদ্যাপনের রাতে ছোটবেলার বন্ধুকে জড়িয়ে যেন নিজের জীবনকে অন্য ভাবে চালিত করার জোর পায় সানি। তার পর থেকেই কাহিনির মোড় ঘুরতে থাকে। একে একে গল্পে ভিড় জমাতে থাকে চরিত্রেরা।
দাদুর প্রেসকে বাঁচাতে নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে ছোট প্রেসে অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই ‘স্যান্ডউইচ নোট’ তৈরি করে সানি এবং তার বন্ধু ফিরোজ (ভুবন অরোরা)। সেই জাল নোট তৈরি করে অর্থ উপার্জনও করতে শুরু করে সানি। কিন্তু প্রয়োজন মিটলেও মানুষের খিদে মেটে কি? অর্থের লোভ আর পিছু ছাড়েনি সানির। ক্রমশ অন্ধকারের মধ্যে ডুবে গিয়েছে সে। কিন্তু সানি একা ছিল না। সানির হাত শক্ত করে ধরেছিল ফিরোজ। সানি এবং ফিরোজের বন্ধুত্ব অনেক সময় ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর তিওয়ারি এবং তালপাড়ের বন্ধুত্ব মনে করিয়ে দিয়েছে।
স্পেশাল টাস্ক ফোর্স অফিসার মাইকেল বেদনায়গমের চরিত্রে বিজয় সেতুপতির অভিনয়ও কম নজরকাড়া নয়। এই প্রথম হিন্দি ভাষায় সংলাপ বসল বিজয়ের মুখে। দক্ষিণী ভাষার ছবিতে সাবলীল অভিনয় করলেও এই ওয়েব সিরিজ়ে যেন হিন্দি সংলাপই বিজয়ের ক্ষেত্রে কাল হয়ে দাঁড়াল। হিন্দি ভাষায় উচ্চারণ করার সময় যে মাঝেমধ্যেই বিজয়কে গুঁতো খেতে হয়েছে, তা পরিষ্কার ধরা পড়েছে। যদিও মাতৃভাষায় বিজয়ের মুখে সংলাপ দিতে ভোলেননি রাজ এবং ডিকে।
গ্যাংস্টার মনসুর দালালের চরিত্রে কেকে মেননের অভিনয় অনবদ্য। এই ওয়েব সিরিজ়ে সানির দাদুর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে অমল পালেকরকে। কিছু কিছু দৃশ্যে তাঁর অভিনয় সামান্য অতিরঞ্জিত লাগতে পারে। এ ছাড়া ইয়াসিরের চরিত্রে চিত্তরঞ্জন গিরি, মন্ত্রীর চরিত্রে জাকির হুসেন, মাইকেলের স্ত্রী রেখার চরিত্রে রেজিনা কাসান্দ্রা এবং মেঘার চরিত্রে রাশি খন্নার অভিনয় যথাযথ।
এই ওয়েব সিরিজ়ের মূল আকর্ষণ হল শাহিদ কপূরের অভিনয়। শাহিদ যে লম্বা রেসের ঘোড়া তা প্রমাণ করলেন তিনি। পুরো গল্পটির কথক যে হেতু সানি নিজেই, তাই জোরদার সংলাপগুলিও সানির মুখে বসানো হয়েছে। তবে ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নাম দিলে ‘ফরজ়ি’ কয়েক ধাপ পিছিয়ে থাকবে। কমিক দৃশ্যের প্রয়োগ তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম। সম্পর্কের টানাপড়েনের ফলে প্রতিটি চরিত্রের মনে চলতে থাকা দোলাচল ভাল ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়নি। ক্যামেরার কাজেও যেন ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর থেকে পিছিয়ে রইল ‘ফরজ়ি’। হাতেগোনা কয়েকটি ফ্রেম নজর কেড়েছে মাত্র। চিত্রনাট্যের গতি কখনও খানিকটা শ্লথ, কখনও আবার দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। তবে শাহিদের অভিনয় যেন সব পুষিয়ে দিয়েছে। কথায় রয়েছে, যার শেষ ভাল তার সব ভাল। ‘ফরজ়ি’র অন্তিম পর্বে শাহিদের অভিনয় এবং চিত্রনাট্যের ১৮০ ডিগ্রি মোড় নেওয়া দর্শকের মনে পরবর্তী সিজ়ন দেখার খিদে তৈরি করতে বাধ্য।
রাজ এবং ডিকে যে ‘স্পাই ইউনিভার্স’ তৈরি করতে চলেছেন, তার আভাসও দিয়েছেন এই ওয়েব সিরিজ়ে। ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ ওয়েব সিরিজ়ের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রকে ক্যামিয়ো হিসাবে দেখা গিয়েছে। বলা ভাল, একটি চরিত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য পর্দার সামনে আসলেও অন্য চরিত্রের শুধুমাত্র কণ্ঠস্বর ব্যবহার করেছেন রাজ এবং ডিকে। তবে, এই ক্যামিয়ো চরিত্রের হঠাৎ আবির্ভাব দর্শকের উত্তেজনার পারদ চড়ানোর জন্য যথেষ্ট। জালনোটের এই খেলা দ্বিতীয় পর্বে যে আরও জমে উঠবে তার আভাস দিয়ে যায় ‘ফরজ়ি’। বুঝিয়ে যায়, ‘সব কে অন্দর চোর হ্যায়, সব চান্স কে লিয়ে ওয়েট করতা হ্যায়’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy