Farrukh Jaffar has taken all the limelight as Fatto Begum in Gulabo Sitabo dgtl
farrukh jaffar
৪৮ বছরে প্রথম অভিনয়, অতীতে রেডিয়োর ঘোষিকা অশীতিপর ফারুখের বাজিমাত ‘গুলাবো সিতাবো’-র ফত্তো বেগম হয়ে
কোনও প্রথাগত প্রশিক্ষণ ছাড়াই তিনি হয়ে উঠেছিলেন আকাশবাণীর প্রথম সারির অন্যতম ঘোষিকা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২০ ১২:০৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
সম্ভ্রান্ত জমিদারবাড়ির মেয়ে। বিয়ে হয়েছিল ১৬ বছর বয়সে। ৪৮-এ পৌঁছে হঠাৎই এসেছিল অভিনয়ের সুযোগ। ফারুখ জাফর তখন ভাবতেও পারেননি ৮৭ বছর বয়সেও তিনি দর্শকদের কুর্নিশ আদায় করে নেবেন ‘গুলাবো সিতাবো’-র ফত্তো বেগম হয়ে।
০২২০
আজকের উত্তরপ্রদেশের নাম ব্রিটিশ ভারতে ছিল ‘ইউনাইটেড প্রভিন্স’। সেখানেই জৌনপুরের চকেসার গ্রামে জমিদারবংশে ১৯৩৩ সালে জন্ম ফারুখ জাফরের। বিয়ের পরে ষোড়শী ফারুখ লখনউ চলে এসেছিলেন সংসার করতে। স্নাতক হন লখনউ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
০৩২০
তাঁর স্বামী সৈয়দ মহম্মদ জাফর ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সাংবাদিক। পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতেও যোগ দেন। তাঁদের দুই মেয়ে মহরু এবং শাহিন। লেখিকা মহরুর উদ্যোগেই জীবনে প্রথম অমিতাভের বিপরীতে অভিনয় ফারুখের। ‘গুলাবো সিতাবো’ ছবিতে।
০৪২০
কিন্তু তাঁর কেরিয়ার বেশ কয়েক দশকের প্রাচীন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন রেডিয়োর ঘোষিকা। ১৯৬৩-তে তখন লখনউয়ে সবে শুরু হয়েছিল আকাশবাণীর বিবিধ ভারতী। সেখানেই ফারুখ ছিলেন প্রথম ঘোষিকা ও সঞ্চালিকা।
০৫২০
১৯৬৬ অবধি তিনি আকাশবাণীর লখনউ স্টেশনে কর্মরত ছিলেন। এরপর দিল্লির অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো-র উর্দু স্টেশনে তিনি কাজ করেছিলেন ১৯৭০ অবধি। কোনও প্রথাগত প্রশিক্ষণ ছাড়াই তিনি হয়ে উঠেছিলেন আকাশবাণীর প্রথম সারির অন্যতম ঘোষিকা।
০৬২০
কিন্তু কেরিয়ারের সেরা সময়েই হঠাৎ সুর কেটে গেল। পারিবারিক প্রয়োজনে কাজ ছেড়ে দিতে হল ফারুখকে। বেশ কয়েক বছর ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যেই কাটল জীবন।
০৭২০
তাঁদের বাড়িতে এক পরিচারক ছিলেন, যিনি কথা বলতেন দেহাতি ভাষায়। ভোজপুরি ও জৌনপুরি কথ্যরীতি মিশিয়ে তাঁর কথা বলার ধরন পছন্দ করতেন ফারুখ। ঘরোয়া মজলিশে নকল করেও দেখাতেন।
০৮২০
সেরকমই এক আড্ডায় তিনি নকল করে দেখাচ্ছিলেন। কী ভাবে কথা বলেন তাঁদের পরিচারক। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুজফফর আলি। ফারুখের কণ্ঠে ওই কথ্যরীতি শুনেই তিনি সরাসরি এসে ‘উমরাও জান’ ছবিতে অভিনয়ের অফার দেন।
০৯২০
১৯৮১ তে মুক্তিপ্রাপ্ত মুজফফর আলি পরিচালিত ‘উমরাও জান’ সুপারহিট হয়েছিল। ছবিতে রেখার মায়ের ভূমিকায় ছিলেন ফারুখ জাফর।
১০২০
প্রথমে ভেবেছিলেন ছবিতে কাজ করা হবে না। বাড়ি থেকে অনুমতি পাবেন না। কিন্তু তাঁকে বিস্মিত করেই অভিনয় করার অনুমতি দেন ফারুখের স্বামী।
১১২০
এর পর দূরদর্শনে ‘হুসন-এ-জানা’, ‘আধা গাঁও’, ‘দ্য শাল’, ‘নিম কা পেড়’-এর মতো সিরিজে কাজ করেছিলেন তিনি। কিন্তু ‘উমরাও জান’-এর পরে ২২ বছর তিনি অভিনয় করেননি ছবিতে।
১২২০
তাঁর সেকেন্ড ইনিংস শুরু হয় ২০০৩ সালে। তিনি অভিনয় করেন ‘স্বদেশ’ ছবিতে। এরপর ‘পিপলি লাইভ’, ‘আম্মা কি বোলি’, ‘বেয়ারফুট টু গোয়া’, ‘পার্চড’, ‘হোয়াট পিপল উইল সে’, ‘সুলতান’, ‘ফোটোগ্রাফ’, ‘সিক্রেট সুপারস্টার’-এর মতো ছবিতে বাহবা পেয়েছিলেন ফারুখ।
১৩২০
ফারুখের বিশেষত্ব হল, তিনি চিত্রনাট্য অনুসরণ করেন ঠিকই। কিন্তু তার মাঝে মাঝেই থাকে নিজের সংলাপ। ‘ইম্প্রোভাইজেশনে’ তাঁর নিজের জীবন উঠে আসে অভিনয়ের অঙ্গ হিসেবে।
১৪২০
শাহরুখ-আমির-সলমন, তিন খান এবং নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকির সঙ্গে অভিনয় করা হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিলেন বিগ বি। সে সাধও পূর্ণ হল এ বার। অডিশনের জন্য মায়ের অভিনয়ের ভিডিয়ো ক্লিপ সুজিত সরকার ও জুহি চতুর্বেদীকে পাঠিয়েছিলেন মহরু।
১৫২০
দু’জনেরই পছন্দ হয় তাঁকে। তাঁরা লখনউ গিয়ে কথা বলেন অশীতিপর অভিনেত্রীর সঙ্গে। শুধু পটভূমি নয়, ‘গুলাবো সিতাবো’-তে লখনউ শহরটাই একটা চরিত্র। তাঁর সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছেন ভগ্নপ্রায় ‘ফতিমা মহল’-এর বেগমরূপী ফারুখ।
১৬২০
বৃদ্ধ মির্জা, তাঁর লোলচর্ম বেগম এবং ততোধিক প্রাচীন ফতিমা মহলকে ঘিরে আবর্তিত হয়। মহলের মালিকানার লোভে মির্জা তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুকামনা করেন। কাহিনীতে মোক্ষম মোচড় দিয়ে শেষ হাসি হাসেন বেগম-ই।
১৭২০
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ফারুখ জানিয়েছেন, তিনি ভাবতেও পারেননি ‘বেগম’-এর চরিত্র এত জনপ্রিয় হবে। তবে ছবির মধ্যমণি হয়েও একটা আক্ষেপ রয়েই গিয়েছে।
১৮২০
স্বপ্নের নায়কের সঙ্গে অভিনয় করলেন বটে। কিন্তু অভিনয়ের বাইরে একটা কথাও বলা হল না। কারণ, অমিতাভ শুটিংয়ের বাইরে একফোঁটা সময়ও সেটে থাকতেন না। তাই ক্যামেরা বন্ধ হওয়ার পরে মির্জার সঙ্গে দু’দণ্ড গল্প আর করা হয়নি। আক্ষেপ বেগমের।
১৯২০
বিভিন্ন প্রজন্মের সঙ্গে অভিনয় করার বিরল অভিজ্ঞতার সাক্ষী ফারুখ। শাহরুখ, আমির, সলমন, তিন জনের ব্যবহারেই তিনি মুগ্ধ। ‘স্বদেশ’-এ অভিনয়ের সময়ে পঞ্চগনির হোটেলের ঘরে আলো জ্বালাতে পারছিলেন না ফারুখ। সাহায্য করেছিলেন শাহরুখ। মনে পড়লে আজও ঈষৎ লজ্জা পান অভিনেত্রী।
২০২০
এই বয়সেও এত দাপুটে অভিনয়ের রহস্য কী? এক বার ক্যামেরা চলতে শুরু করলে তিনি সব কিছু ভুলে যান। কে পরিচালক, তাঁর নায়ক কে, সব বিস্মৃত হয়ে হৃদয় থেকে বেরিয়ে আসে মনের কথা। সেই মনে এখনও থাবা বসাতে পারেনি বয়সের বলিরেখা। বায়োস্কোপের বাইরে বাস্তবেও ‘ফত্তো’ চিরতরুণী।