কৌশিক সেন এবং সুমন মুখোপাধ্যায়।
“আমার হাত দুটো অভ্যেস বশে তোমার ছায়াকে আলিঙ্গন করার সময়ে আমার বুকটা ছুঁয়ে থাকে। আমার বাকি আছে ছায়ার মধ্যে ছায়া হয়ে থাকা…
থামলেন সুমন মুখোপাধ্যায়। তাঁর উল্টো দিকে লেখক, নির্দেশক কৌশিক সেন। বুঝিয়ে দিচ্ছেন ওই সংলাপের পরে কিছুটা সময় নিয়ে, ঠিক কখন মঞ্চে আসবেন রেশমী সেন।
এমন অচেনা দৃশ্য প্রথম দেখল আনন্দবাজার ডিজিটাল।
প্রথম বার নাটক লিখেছেন কৌশিক সেন, ‘কবির বন্ধুরা’। এই নাটকেই প্রথম বার কৌশিকের নির্দেশনায় কাজ করছেন আর এক নাট্যকার, পরিচালক, অভিনেতা সুমন মুখোপাধ্যায়। কলকাতায় এখন সময় কাটাচ্ছেন তিনি। এক জন শিল্পী হিসেবে সব সময়ে চেয়েছেন ভাল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে। সেই কারণেই কৌশিক সেনের নতুন নাটকে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন সুমন। লম্বা স্ক্রিপ্ট হাতে সুমন বললেন, “এ বার বিসর্জন নাটকের উল্টো ছবি দেখবেন দর্শক। তখন কৌশিক কাজ করেছিলেন আমার নির্দেশনায়। ‘কবির বন্ধুরা’ নাটকে ও আমার আমার নির্দেশক”।
এক জন শিল্পীর জীবন নিয়ে লকডাউনে নাটক লিখেছেন কৌশিক। রূপকথা লেখার অপরাধে যে শিল্পীকে এমন এক দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে মানুষ গল্প, কবিতা, সিনেমা, নাটক, গান কিছুই তৈরি করে না। সে দেশে স্বপ্ন দেখাও বারণ। সে কতটা বলবে? বলার দরকার তো অনেক কিছুই। কিন্তু দম বন্ধ হয়ে আসা সময়ের মধ্যে সে কতটাই বা বলতে পারে? এই প্রশ্নগুলো ঘুরতে থাকে তার মনে।
এই নাটকটি লেখার প্রেরণা হল শ্রীজাতর কবিতা, জানালেন কৌশিক। খুব রূঢ় বাস্তবের কথা বললেও নাটকের ভাষায় কবিতা আছে। কাব্যময়তার ভিতরের ভায়বহতা বার করে আনতেই কৌশিকের এই প্রয়াস। নাটক লিখলেও নিজেকে নাট্যকার বলতে রাজি নন কৌশিক। তিনি বললেন, “এক জন নির্দেশক এবং অভিনেতা স্টেজ স্ক্রিপ্ট লিখলে যা হয়, তা-ই লেখা হয়ে এসেছে। শ্রীজাতর কবিতা আর আমার ভাবনা, এই দুটোকে এক জায়গায় করে লিখেছি। তাতে অভিনেতারা অভিনয় করছেন।”
রবীন্দ্রনাথ থেকে ব্রেখট, উৎপল দত্তের নাটক নিয়ে কাজ করতে করতে নিজের লেখার কথা মনে হয়নি কৌশিকের। অভিনেতা ঋদ্ধি সেন যেমন বললেন, “লকডাউনের ওই দমবন্ধ করা পরিবেশে বাবা এই নাটক লিখেছিল। সকলেই তখন আটকে। কিন্তু চিন্তার জায়গা খোলা ছিল বলেই এই লেখা তৈরি হল”।
ছাই রঙা গ্রাম থেকে এক কবিকে গ্রেফতার করা হল। তিনি রূপকথা লিখছিলেন। কবিকে মেরে ফেলার আগে সেনা প্রধান (কৌশিক) আর তাঁর স্ত্রী (রেশমী সেন) জানতে চায়, কবি কী রূপকথা লিখেছে? নাটকের শুরু এখান থেকেই। মঞ্চসজ্জায় বুঝিয়ে দেওয়া হবে দমবন্ধ করা সেই পরিস্থিতি। আবহ তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সঞ্চয়ন ঘোষ মানানসই পরিবেশ তৈরি করছেন এই নাটকে।
শেষের দুটো নাটকেই নির্দেশকেরা অভিনয় করেছেন ‘স্বপ্ন সন্ধানী’-তে। ‘তারায় তারায়’ যেমন অঞ্জন দত্ত, তেমন ‘একলা চল রে’-তে অশোক মুখোপাধ্যায়। এ নাটকে রয়েছেন সুমন মুখোপাধ্যায়। কৌশিক বললেন, “বেশির ভাগ দলেই দেখি নির্দেশকেরা সর্বেসর্বা। তার ধাঁচাই দলের অভিনেতারা শিখতে থাকে। এখানে দলের ছেলেমেয়েরা অঞ্জনদা বা সুমনের মতো নির্দেশকেদের ধরনটা আমার সঙ্গে দলের সবাইকেও ঋদ্ধ করছে”। পাশেই ছিলেন রেশমী। যিনি সেনা প্রধানের চরিত্রে অভিনয় করছেন। এই চরিত্র করার জন্য নিজেকে কড়া ডায়েটের মধ্যে বেঁধে ফেলেছেন তিনি। নাটকে তাঁর চরিত্রের জন্য পোশাক আর চুলের উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিতিপ্রিয়া সরকার এই নাটকে অভিনয় করবেন। সঙ্গীতের দায়িত্বে থাকছেন গৌতম ঘোষ।
বাবার লেখা এই মানবিক নাটকে ঋদ্ধি সেই কবির ‘অল্টার ইগো’ হিসেবে অভিনয় করবেন। তিনি বললেন, “এই নাটক এমন মুক্ত চিন্তার কথা বলবে, যা শুধু রাজনৈতিক নয়। এই ভাবনা রাজনীতি বা সরকার, কেউই আটকাতে পারবে না।”
হতে পারে এই সভ্যতা আগামীতে এমন দেশের জন্ম দেবে, যেখানে গান নয়, শোনা যাবে কেবল মানুষের চিৎকার। মঞ্চে এই দেশের আলো করছেন সুদীপ সান্যাল। শিশুরা স্কুলে নয়, সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। রাষ্ট্র নিজের মতো করে রূপকথা লিখবে। থেমে যাবে মানুষের কল্পনা। এমনই এক দেশে রুপকথার কবি যদি বন্দি হন, তবে কি বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আসবে সব কিছু? নাকি কবি আঘাতের আগুন হয়ে জ্বলবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy