লড়াইয়ের এই পথ দীর্ঘ। ভালই জানেন অর্পিতা। ছবি: অর্পিতার ফেসবুক পেজ থেকে।
বালিগঞ্জের ‘উৎসব’ বাড়িতে জলের ফিল্টার মেশিন খারাপ হয়েছে।জল নিয়ে আশঙ্কা! মিশুক কী জল খাবে? এই চিন্তায় আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে ফোনে ঠিকমতো কথাই বলে উঠতে পারছেন নাটলিউডের ফার্স্ট লেডি অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। অর্পিতা নিজে যদিও নিজেকে টলিউডের ফার্স্ট লেডি বলতে নারাজ। বিশ্বজিতের প্রিয় বউমা তিনি। তাঁকে ছাড়া মুম্বইয়ের দুর্গাপুজো হয় না। শ্বশুরবাড়ির যাবতীয় দায়দায়িত্ব তাঁর।সংসার, পরিবার বন্ধন, এই বৃত্তে তিনি নিঃসন্দেহে ফার্স্ট লেডি অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়।
কিন্তু অন্য দিকে, ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি শুধু অভিনেতা অর্পিতা। ২০১৯-’২০ কেরিয়ারগ্রাফে যাঁর ঝুলিতে ১২টা ছবি! যদি হিসেব করা যায়,তা হলে প্রত্যেক মাসেএকটা করে ছবি! এই রিপোর্ট কার্ড কি টলিউডে নায়িকাদের ঘোড় দৌড়ে তাঁকে এগিয়ে দিল?
প্রশ্ন শুনেই কঠিন হল অর্পিতার গলা, “দৌড়? নম্বর?এ সব কারা দেয়? কোনও দিন এ সবে বিশ্বাস রাখিনি। চুটিয়ে কাজ করতে চাই। তবে ২০১৯-’২০ তে কোনও নায়িকার ১২টা ছবি শুনছি একটা রেকর্ডের জায়গায় নিয়ে গিয়েছে।” আসলে লকডাউনের আগে অর্পিতার ৫টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। আর লকডাউন না থাকলে আরও ৪টি ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। আর দু’টি ছবির কাজ চলছিল ফ্লোরে। আর একটি ছবি বর্তমানে পোস্ট প্রোডাকশন পর্যায়ে।
আরও পড়ুন: সাংবাদিক সেজে ঘুরছে চিনা স্পাই! কড়া নজরদারিতে রয়েছি আমরাও
ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও ‘নেক্সাস’-এর মধ্যে নেই তিনি। কোনও দিন চাননি প্রসেনজিৎচট্টোপাধ্যায়ের সুপারিশে কোথাও কোনও চরিত্র পান।এ নিয়ে আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, “ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অনেক প্রোডাকশন হাউজ দেখেছি যেখানে অনেক সময় কোনও অভিনেত্রীর উত্থানের কথা ভেবে তার জন্য চরিত্র লেখা হয়েছে, তাকে অন্য আরও ছবিতে কাস্ট করা হয়েছে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রযোজনা সংস্থা হয়তো আমাকে নিয়ে ছবি করবে ভাবেনি। ”
নানা রকম চরিত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালবাসেন অর্পিতা। ছবি- অর্পিতার ফেসবুক থেকে।
নতুন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন অর্পিতা। ‘পূর্ব পশ্চিম দক্ষিণ– উত্তর আসবেই’-এরপরিচালক রাজর্ষি দে-র ছবিতে এক যাত্রীর ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে। আবার অনুমিতা দাশগুপ্তের ‘বহমান’ ছবিতে আধুনিক স্ত্রী আর অধ্যাপিকার চরিত্রে অভিনয় করে সকলের নজর কেড়েছেন তিনি। অভিনেত্রী হিসেবে কখনও কি নেপোটিজমের মুখোমুখি হতে হয়েছে? “হ্যাঁ, আমায়ও নেপোটিজমের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু কোথায়, কীভাবে বলব না। তবে আমি বিরাট অভিনেত্রী হব, এ ভাবে কেরিয়ারের ঘুটি সাজাইনি।”
কফিতে চুমুক দিলেন অর্পিতা। লকডাউনের সময়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে সে ভাবে কেউ দেখেননি। ইনস্টালাইভ থেকে রেডিয়ো শো, অনেক কিছুর অনুরোধ এসেছিল তাঁর কাছে। তাঁর একটাই কথা,‘না’।“লকডাউনে ঝাঁট দিচ্ছি, রান্না করছি, এ সব কেন দেখাব?আমাদের ব্যক্তিগত জীবন আমাদেরই। অনেকেই জানতে চান আমি বুম্বাদার সঙ্গে ছবি করি না কেন? আরে, ব্যক্তিজীবনে আমরা তো আগে স্বামী-স্ত্রী, এখানে অভিনয়ের কথা কেন?এটা অনেকেই বোঝেন না।আমি বাইরের জীবনের সঙ্গে কোনও দিন ভিতরের জীবন গুলিয়ে ফেলিনি। আমি তো মিশুকের ছবি অবধি ব্যবহার করি না।” একটু যেন বিরক্তি অর্পিতার গলায়। বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো থেকে সরস্বতী পুজো, কোনও কিছুতেই মিডিয়ার প্রবেশ নিষেধ করেছেন এই অভিনেত্রী।
জীবনের প্রতিফলন। ‘অব্যক্ত’ ছবিতে অর্পিতা। ছবি- অর্পিতার ফেসবুক থেকে।
লকডাউনে সোশ্যাল মিডিয়া নয়, তাঁর কাছে অনেক বেশি করে পাওয়া মিশুক।“ওকে এত দিন কাছে পেলাম।বুঝতে পারলাম, ছেলেটা বড় হয়ে গেল। ফুটবল ওর প্রাণ। ওর বাবা বা আমি এই বিষয়ে তো ওকে বেশি হেল্প করতে পারি না, কিন্তু ও জানে, কোথায় কখন ও কী করবে। আমাকে তো সারাক্ষণ বলছে, মা তুমি এক্সারসাইজ করছ না।স্ট্রেচিং তো কর!” জানান, লকডাউনে জিম বন্ধ থাকায় শরীরচর্চা আর হয়ে ওঠেনি তাঁর। বাড়িকে জিম ভাবতে তিনি নারাজ। ছেলের কথা বলতে গিয়ে হেসে ওঠেন অর্পিতা।সেই ছেলে যার জন্য সিনেমার মধ্য গগন থেকে সরে এসেছিলেন তিনি।
অর্পিতা বলেন, “সে সময় আমার ছেলেকে দেখার কেউ ছিল না। আমি শুটে গেলে ওকে যে কেউ দেখবে এই দায়িত্ব দেওয়ার লোক পাইনি। তাই, ছবি করার চেয়ে ছেলেকে বড় করা বেশি জরুরি।” অর্পিতা জানতেন তিনি ফিরবেন। সেখান থেকেই ‘কামব্যাক ফিল্ম’‘একটি তারার খোঁজে’। ২৫ জুন ছবিটির ১০ বছর পূর্তিতে টুইটও করেছেন অর্পিতা।
‘অব্যক্ত’র আরেকটি চরিত্রে অর্পিতা। ছবি- অর্পিতার ফেসবুক থেকে।
ছেলের সঙ্গে এই বন্ধন কি তাঁকে ‘অব্যক্ত’ ছবিতে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে সাহায্য করেছিল? “জীবনের অভিজ্ঞতা যেমন অভিনয়ে আসে ঠিক তেমনই চরিত্র থেকেও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়।” অর্জুন দত্তের ‘অব্যক্ত’ ছবিতে একসঙ্গে ৬০ বছর এবং কম বয়সের মায়ের চরিত্র করে বাংলা সিনেমার দর্শকদের চমকে দিয়েছেন অর্পিতা। আসলে, তাঁর অভিনয়ের খিদে কোনও নাম করা প্রযোজক বা পরিচালককে খোঁজে না। খোঁজে এমন সব চরিত্রকে যা তাঁর আগে করা হয়ে ওঠেনি। তাই তিনি কখনও পুলিশ অফিসার, অধ্যাপক, শিল্পী, কখনও ১৬ বছর, কখনও লাবণ্য ঢেকে ৬০ বছরের ফ্যাকাশে মুখ বা রূপকথার রানি হয়ে সেলুলয়েডে ফেরেন। আবার অনীক দত্তের ‘বরুণবাবুর বন্ধু’-তে অনেক মুখের মাঝে এক গৃহবধূর চরিত্রে দর্শকদের মনে থেকে যান তিনি।
After getting married, I took a sabbatical from films for 7 years , that time I had 6 films about to hit the floor, still.. #EktiTararKhoje #MyFilm@aniruddhatony @idevadhikari@singer_shaan @shreyaghoshal pic.twitter.com/xcwdHxxWiF
— Arpita Chatterjee (@ArpitaCP) June 25, 2020
লকডাউনে ছেলের সঙ্গে সময় কাটালেও এ বার কাজে ফিরতে চান অর্পিতা।বললেন, “মে মাসেই তো দেবের প্রোডাকশনে ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’, ‘হৃদপিণ্ড’, ‘গুলদস্তা’ আর ‘অভিযাত্রিক’ আসার কথা ছিল। করোনা তো এখন সঙ্গী আমাদের। একে নিয়েই এ বার কাজ শুরু করতে হবে।”
After doing my duties to raise my son, I gathered the courage to try it out again - Ekti Tarar Khoje is that so called come back film - hence very close to my heart
— Arpita Chatterjee (@ArpitaCP) June 25, 2020
Today is 10th year of the release of Ekti Tarar Khoje
Sharing a song from the film :
Pagol Mon Re - enjoy
কাজের অপেক্ষার মাঝে তাঁর ‘বুম্বাদা’-র সঙ্গে লকডাউনে আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন।“আমাদের সংসারে আমরা দু’জনেই কন্ট্রিবিউট করি। দু’জনে কথা বলেছি, এই সময়ে কী ভাবে কী করব?" লকডাউন কীভাবে সামলাচ্ছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়? "বুম্বাদা জীবনে এত ওঠা পড়া দেখেছে, সেই অভিজ্ঞতায় এতটাই পরিণত, তাই কঠিন সময়টাকেও সামলে নিয়েছে।”,বললেন অর্পিতা।
আরও পড়ুন: ‘গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন’, অ্যাপ নিষিদ্ধ করা নিয়ে প্রতিক্রিয়া চিনের
‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’ আর ‘আবার বছর কুড়ি পরে’ নিয়ে ফ্লোরে ফেরার কথা অর্পিতার।
কথা বলতে বলতেই জানা গেল, জল ফিল্টারের মেশিন ঠিক হয়ে গিয়েছে ‘উৎসব’-এ!
অর্পিতার সব কিছুই এখন ঠিক যাচ্ছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy