Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Celebrity Interview

কঠিন সময়ে টলিউড নয়, পরিবারকেই পাশে পেয়েছি: যশ দাশগুপ্ত

পুজোয় মুক্তি পাবে তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি ‘ইয়ারিয়াঁ ২’। শুক্রবার সেই ছবির প্রচারে শহরে অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত। সঙ্গী ছবিতে তাঁর নায়িকা দিব্যা খোসলা কুমার।

Yash Dasgupta

যশ দাশগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।

অভিনন্দন দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৫৩
Share: Save:

টলিউডের গণ্ডি ছাড়িয়ে এ বার বলিউডে। তবে কোনও তাড়াহুড়োয় বিশ্বাসী নন। হাসিমুখে জীবনের প্রত্যেকটি দিনকে চ্যালেঞ্জ হিসাবেই দেখতে চান। তাঁর প্রথম হিন্দি ছবির প্রচারের মাঝে শুক্রবার বিকেলে আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের মুখোমুখি যশ দাশগুপ্ত।

প্রশ্ন: অবশেষে স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে। কেরিয়ারের প্রথম হিন্দি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। আপনি নিশ্চয়ই খুব উত্তেজিত?

যশ: (হেসে) প্রত্যেক বারেই মনে হয়, হয়তো এ বার কাজটা করে মনে হবে যে মারাত্মক কিছু একটা করে ফেললাম। কিন্তু সেটা মনে হয় না।

প্রশ্ন: শুনেছি এই ছবির জন্য আপনার কোনও অডিশন নেওয়া হয়নি। নির্মাতারা আপনার কাজ দেখেই আপনাকে নির্বাচন করেছেন?

যশ: সত্যিই তাই। নতুন কাজের জন্য আমার টিমের কাছে ফোন আসতেই থাকে। ভূষণ কুমার (টি সিরিজ়-এ কর্ণধার) প্রযোজিত ছবি শুনে আমিও প্রথমে ভেবেছিলাম ভুয়ো ফোন। সেই সময়ে আমিও মুম্বইতে ছিলাম। তার পর ওঁরা অফিসে ডাকলেন। ভাবলাম যাই, গিয়ে দেখাই যাক না কী হয়।

প্রশ্ন: ওঁরা কী বললেন?

যশ: পরিচালকেরা আমার সঙ্গে ছ’ঘণ্টা কথা বলেন। জানতে পারি ওঁরা আমার ‘গ্যাংস্টার’ এবং ‘ওয়ান’-এর মতো ছবিগুলি দেখেছেন। বলেছিলেন, আমি ৯০ শতাংশ নির্বাচিত। বাকিটা প্রযোজক সিদ্ধান্ত নেবেন। সে দিনই নির্বাচিত হই।

প্রশ্ন: বাইরে থেকে বলিউডে কাজ পেতে হলে তো অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় শুনেছি। সিংহভাগ সময়ে না বলে দেওয়া হয়। সে দিক থেকে তো এটা চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা!

যশ: সেটা ঠিক। আসলে এখন ওটিটির দৌলতে সিনেমার জগৎটাও হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। নির্মাতারাও নতুন নতুন মুখের সন্ধানে থাকেন। টি সিরিজ় কিন্তু বহু নতুন প্রতিভাকে সুযোগ দিয়েছে। সেখানে কিন্তু ‘স্বজনপোষণ’ কাজ করে না। আমার ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে। আমার বিপরীতে দিব্যা খোসলা কুমার রয়েছেন, শুরুতে আমিও বিশ্বাস করতে পারিনি।

কালীঘাট মন্দিরে যশ এবং দিব্যা।

কালীঘাট মন্দিরে যশ এবং দিব্যা। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: এ বার পুজোয় তো আপনার হিন্দি ছবির সঙ্গে একাধিক বাংলা ছবিও মুক্তি পাবে। টলিউড না কি বলিউড, কাকে সমর্থন করবেন?

যশ: দেখুন, বাংলা ছবির সঙ্গে হিন্দি ছবির এই তুলনাটা উচিত নয়। আমার ছবিটা অনেক বেশি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, একটা হিন্দি ছবি করে আমি বাংলা ছবিকে ছোট করব। পুজোর লড়াইটা বাংলা ছবির মধ্যেই হোক। এটা ভেবেই ভাল লাগছে যে, কেরিয়ারের প্রথম বাংলা ছবি পুজোর সময়ে মুক্তি পেয়েছিল। প্রথম হিন্দি ছবিও আবার সেই পুজোতেই মুক্তি পাচ্ছে (হাসি)।

প্রশ্ন: ‘জওয়ান’ দেখলেন?

যশ: না। ছবির প্রচারের ব্যস্ততায় কাল সময় পাইনি। আজ রাতে দেখার ইচ্ছে আছে।

প্রশ্ন: বাণিজ্যিক ছবি তো আবার মূল স্রোতে ফিরে এল?

যশ: শুরুটা ‘পাঠান’ করেছিল। এর মধ্যে ‘গদর ২’ ছিল। এমনকি ‘ড্রিম গার্ল ২’ ছবিটাও শুনলাম ভাল ব্যবসা করেছে।

প্রশ্ন: টলিউডে কি বাণিজ্যিক ছবির হাল ফিরবে না?

যশ: অবশ্যই ফিরবে। শিল্পী এবং নির্মাতা হিসাবে আমরাই যদি বাণিজ্যিক ছবির উপর থেকে বিশ্বাস হারাই, তা হলে দর্শকের দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। অতিমারির পর দর্শক যে আবার সিনেমা হলে আসছে, এটা যে কোনও ইন্ডাস্ট্রির পক্ষেই শুভ ইঙ্গিত। আমার মতে, ছবি তৈরি করে সেটা দর্শকদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। দর্শকই বিচার করুক।

প্রশ্ন: এই ছবিতে দিব্যার সঙ্গে আপনার রসায়ন নিয়ে তো বিস্তর কথা হচ্ছে। আপনার কানে এসেছে?

যশ: শুটিংয়ের সময়েও কথাটা ইউনিটের সদস্যের কাছে শুনতাম। সকলেই প্রশংসা করতেন। এখন তো সবে আমাদের গানটা (সিমরুঁ) বেরিয়েছে। ছবিটা দেখলে আমার বিশ্বাস দর্শক অভয় এবং লাডলির (ছবিতে যশ এবং দিব্যার চরিত্র) প্রেমে পড়বেন।

প্রশ্ন: সম্প্রতি আপনি প্রযোজনা সংস্থা খুলেছেন। দিব্যা কিছু টিপস দিলেন নাকি?

যশ: ভূষণজিও জানেন। টিপ্‌স দেননি। দেখুন, আমরা অনেক কম বাজেটে কম সময়ে অনেক ভাল ছবি তৈরি করি। বলিউড আর টলিউডকে টিপ্‌স দেবে কী? টলিউডের সদস্যরাই বলিউডকে বরং ভাল টিপ্‌স দিয়ে দেবেন বলে আমার বিশ্বাস। মনে আছে, আমার ‘গ্যাংস্টার’ ছবিটা পরিচালক মহেশ ভট্টকে দেখানো হয়। ৫৫ দিনে ছবির শুটিং শেষ হয়েছিল। তিনি শুনে অবাক হয়েছিলেন। বলেছিলেন, এত কম সময়ে হিন্দিতে ও রকম ছবি তৈরি সম্ভব নয়।

প্রশ্ন: আপনার ছবির ট্রেলার বেরোনোর পর টলিউড থেকে কী রকম প্রতিক্রিয়া পেলেন?

যশ: তেমন একটা নয়। এখানে তো সামনে সকলেই একে অপরের বন্ধু বলে। কিন্তু কঠিন সময়ে পরিবার ছাড়া আমার পাশে সে রকম কাউকে দাঁড়াতে দেখিনি। তবে কয়েক জন ভাল বন্ধু তাঁদের ভাল লাগের কথা জানিয়েছেন।

প্রশ্ন: সে কী! তার মানে কি বলিউডে পা রেখে টলিউডে যশের শত্রু তৈরি হল?

যশ: সে সব নিয়ে এখন আর ভাবি না। কাজ করতে চাই। করছি। যা পাওয়ার, সেটা তো দর্শকরা দেবেন। একে অপরের পিঠ চাপড়ে ভাল বললাম, এ দিকে দর্শকের খারাপ লাগল। তাতে তো কোনও লাভ নেই।

প্রশ্ন: টলিউডের এই উদাসীনতা নিয়ে নুসরতের (জাহান) কী মত?

যশ: আমরা এ সবে অভ্যস্ত। ইন্ডাস্ট্রিতে সকলেই নিজেরটা নিয়ে ব্যস্ত। আমি তার মধ্যে দোষ খুঁজি না।

প্রশ্ন: এই ছবিতে নাকি মিমি চক্রবর্তীর থাকার কথা ছিল?

যশ: অডিশন দিয়েছিল বলে শুনেছি।

প্রশ্ন: ‘ইয়ারিয়াঁ ২’-এর টিজ়ার দেখে নুসরত (জাহান) প্রথমে কী বলেছিলেন মনে আছে?

যশ: ওর খুব ভাল লেগেছিল। গানটাও ওর ভাল লেগেছে। ও বলেছিল, ‘‘তুমি দেখো, এই গানটা খুব জনপ্রিয় হবে।’’

প্রশ্ন: দাম্পত্য এই ছবির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনার মতে একটা আদর্শ সম্পর্কের সংজ্ঞা কী?

যশ: আমার মনে হয়, সম্পর্ক বা ভালবাসা যে কাউকেই আরও ভাল মানুষে রূপান্তরিত করে। কারণ, তখন মানুষ ‘আমি’-র পরিবর্তে ‘আমরা’— এই দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনটাকে দেখতে শুরু করে। দোষ সকলেরই থাকে। সেগুলিকে মানিয়ে নিয়ে নিজেকে বদলে ফেলাই মূল কথা। কেউ মানিয়ে নিতে না রাজি হলে, আমার মতে তাঁর কোনও সম্পর্কে থাকা উচিত নয়। জীবনে কোনও কিছুই আদর্শ হয় না। সবটাই দু’জনকে খেটে তৈরি করতে হয়।

প্রশ্ন: সম্প্রতি ‘মেন্টাল’ ছবির শুটিংয়ে ঈশানকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ছেলের ছবি ফাঁস হওয়ার ভয় কাজ করে না?

যশ: ওকে সংবাদমাধ্যম থেকে দূরেই রাখতে চাই। এ বিষয়ে আমি খুবই সতর্ক।

প্রশ্ন: নুসরতের কোন গুণ আপনার সবচেয়ে পছন্দের?

যশ: (একটু ভেবে) অনেক আছে। তবে সবার আগে রাখব ওর ধৈর্যকে।

প্রশ্ন: ‘মেন্টাল’ ছবির শুটিং কবে শেষ করবেন?

যশ: এখনও জানি না। আপাতত এই ছবির কাজ চলবে। দুবাইয়ে শুটিং আছে। তাই নতুন বাংলা ছবির প্রস্তাব এলেও ডেট দিতে পারছি না।

প্রশ্ন: পুজোর সময় কি কলকাতায় থাকবেন?

যশ: ইচ্ছে তো আছে। কিন্তু তখন এই ছবির প্রচারের শেষ মুহূর্তের কাজ থাকবে। তাই মুম্বইয়েও থাকতে পারি। এখনই কিছু বলা মুশকিল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE