অঙ্কুশ হাজরা। ছবি: সংগৃহীত।
এক বছর আগে নিজের প্রযোজনা সংস্থার কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। বর্ধমানের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। তার পর ধাপে ধাপে সিনেমাপাড়ায় নিজের জায়গা তৈরি করেছেন অভিনেতা অঙ্কুশ হাজরা। প্রথম বার তাঁকে দেখা যাবে অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকারের বিপরীতে। ছবির নাম ‘কুরবান’। পরিচালনার দায়িত্বে নবাগত পরিচালক শৈবাল মুখোপাধ্যায়। ২৪ নভেম্বর মুক্তি পাবে এই ছবি। শুধু ‘কুরবান’ নয়, নিজের কেরিয়ার, প্রযোজনা এবং আগামী দিনের পরিকল্পনার কথাও আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন অঙ্কুশ।
প্রশ্ন: এক বছর আগে ‘কুরবান’-এর শুটিং হয়েছে। ‘লুক’ নিয়েও চর্চা হয়েছে। যে কোনও ছবিতে কাজ করার সময় লুক নিয়ে কতটা মতামত দেন আপনি?
অঙ্কুশ: লুক নিয়ে মতামত দিই। পরীক্ষা করারও ইচ্ছা থাকে। কিন্তু সব সময় সেই সুযোগও থাকে না। ‘কুরবান’-এর মতো ছবি হলে সেই সুযোগ পাওয়া যায়। তখন মনে হয় নিজের ভাবনাচিন্তাকে কাজে লাগাই। চরিত্রটার জন্য নিজেকে কতটা নতুন ভাবে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করা যায়, সেটা ভাবতে ইচ্ছা করে।
প্রশ্ন: এ বছর পুজোয় মুক্তিপ্রাপ্ত চারটে বাংলা ছবিই ভাল ব্যবসা করেছে। আপনি নতুন প্রযোজক। একটু চিন্তা কমেছে ছবির ব্যবসা দেখে?
অঙ্কুশ: আমি যত দূর শুনেছি, চারটে ছবি মিলিয়ে প্রথম আট দিনে উপার্জন করেছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। তার মানে শুধু যদি একটা ছবি মুক্তি পেত তা হলে অনেক বেশি টাকা আসত ঘরে। একটু তো আশ্বস্ত লাগছেই। সেই সঙ্গে খুব ভালও লাগছে। মানে এখানে ছবির বাজার আছে। প্রযোজকেরা লাভ করছে, সেটাও ভাববার বিষয়।
প্রশ্ন: টলিপাড়ার প্রত্যেক নায়কই এখন প্রযোজক। অভিনেতাদের ব্যবসার প্রতি এই ঝোঁক বাড়ার কারণ কী?
অঙ্কুশ: আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে হাতেগোনা কিছু সংস্থা আছে। ‘এসভিএফ’, ‘সুরিন্দর ফিল্মস্’, ‘বেঙ্গল টকিজ়’, ‘উইন্ডোজ়’—এই সংস্থাগুলো ছাড়া ভালবেসে ছবি খুব কম তৈরি হচ্ছে টলিপাড়ায়। আমি সেই সংস্থাগুলোর নামই বললাম যারা শুধুই ছবি তৈরি করে। সেই কারণে আমরা নায়ক হিসাবে যে ধরনের ছবিতে অভিনয় করতে চাই, সেগুলোকে গুরুত্ব দেয় না। যাদের কথা বললাম তারা ছাড়া সবাই সাবধানী হতে চান। কিন্তু তাতে কাজের মান পড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ছবির ব্যবসা করা উচিত নয়। নতুন প্রযোজকদের ভাবনাচিন্তা তেমনই। জিৎদা এবং দেব সৃজনশীল কাজের খিদে মেটানোর জন্যই কিন্তু এই পদক্ষেপ করেছে। আমারও কারণ এটাই। এ ছাড়া নিজের ব্র্যান্ডটাও এ ভাবে ধরে রাখা যায়। তা বলে কি ওদের ছবি ফ্লপ হয়নি? সেটা না, আসলে উদ্দেশ্যটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তো সেই প্যাশন থেকেই প্রযোজনা সংস্থা খুলেছি। না হলে তো আমার কাছে বাইরের ছবির অফার আছে। কিন্তু খিদে কিছুতেই মিটছে না।
প্রশ্ন: আপনার প্রথম ওয়েব সিরিজ় ‘শিকারপুর’ নিয়ে প্রশংসা পেয়েছেন। কিন্তু অনেক দিন হল আপনার অভিনীত কোনও সিনেমা সে ভাবে সাফল্য পায়নি বড় পর্দায়। অবসাদ হয় না?
অঙ্কুশ: ভাবায়, কিন্তু অবসাদ হয় না সিনেমা ফ্লপ হয়েছে বলে। কারণ, ‘ডিপ্রেস্ড’ হলে পরবর্তী কাজে তো মন দিতে পারব না। আমি সব সময় ভাবি যে, আমি কী ছিলাম। বর্ধমানের মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে থেকে নায়ক হয়েছি। পরিবারের কেউ এই জগতের বিষয়ে বিন্দুমাত্র কিছু জানত না। সেই ছাপোষা পরিবারের ছেলের দু’-তিনটে ছবি না চললে অবসাদগ্রস্ত হয়ে যাবে! এত বড় হয়ে গিয়েছি? আরে, আমি ছবি পেয়েছি সেটাই অনেক। ধন্য হওয়া উচিত। আমি সিনেমার হিরো হয়েছি এটা ভেবেই এখনও উত্তেজিত। যখন ছোট ছিলাম, কিছু ছিল না, তখন তো মনমরা হয়ে পড়িনি। ২০ টাকার চকোলেট কিনতে গেলে কত বার ভাবতে হত। এখন ‘বিএমডাব্লিউ’-তে চড়ে ডিপ্রেসন হবে? অবশ্যই নিজের ভুল দেখে ঠিক করার চেষ্টা করি। তা বলে সেটা মাথায় চেপে বসতে দিই না।‘মির্জ়া’ নিয়ে দর্শকের কৌতূহল দেখে আশা করছি, এটা ভাল লাগবে।
প্রশ্ন: কিন্তু শোনা যাচ্ছে, আপনি নাকি আপনার আগের বিজ়নেস পার্টনারকে দেখানোর জন্য জেদের বসে এই ছবিটা তৈরি করছেন?
অঙ্কুশ: না, একবারেই নয়। আমি বরং বলতে চাই আর এক জনকে যে, আমার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে জেদের বসে কিছু কোরো না। প্রতিভাবান অভিনেতাদের কেরিয়ার নষ্ট কোরো না। আমার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে কারও স্বপ্ন নিয়ে খেলা কোরো না। আমি জেদের বশে কিছু করছি না। ছবি আমার, প্রযোজক আমি, সে ক্ষেত্রে জেদের কী আছে!
প্রশ্ন: বর্তমানে দর্শকের রুচি বদলেছে। আপনার মনে হয়, কলকাতায় ‘মির্জ়া’র মতো ছবি দেখার দর্শক রয়েছে?
অঙ্কুশ: হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। আমরা যদি ঠিক করে কাজটা করতে পারি, তা হলে দর্শকের পছন্দ হবে। শুনলাম ‘জওয়ান’ কলকাতা থেকে ৪০ কোটি টাকা উপার্জন করেছে। তার মানে দর্শক আছে। বাঙালি তো দেখেছে তার মানে। আসলে আমরা এত সহজে বিচার করে ফেলি। আর তা ছাড়া আমরা নিজেদের ভুল-ত্রুটিও স্বীকার করি না। সেটাও ঠিক নয়।
প্রশ্ন: ‘মির্জ়া’র লুক দেখে তো অনেকে ‘কে.জি.এফ’-এর সঙ্গেও তুলনা করছেন...।
অঙ্কুশ: না না। একেবারেই তেমনটা নয়। এটাই সমস্যা জানেন তো, আগে থেকেই কত কী ভেবে নেয়।
প্রশ্ন: শৈবাল তো নতুন পরিচালক। নতুনদের সঙ্গে কাজ করার সুবিধা কী?
অঙ্কুশ: নতুনদের ভাবনা সেটাই আমায় খুব আকর্ষণ করে। কারণ, তাঁদের ভাবনাচিন্তা এতটাই ফ্রেশ হয়। কাজ করতেও ভাল লাগে। শৈবালের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন চর্চা, আপনার হাতে নাকি কোনও কাজ নেই, এ দিকে কেউ ডেট চাইলেই বলছেন সব তারিখ ‘ব্লক্ড’?
অঙ্কুশ: (কিছুটা হেসে) জানি না কোথা থেকে কী রটেছে। সত্যি বলতে, ভেবেচিন্তে কাজ করা তো খুবই জরুরি। ‘মির্জ়া’ তৈরি করতে গিয়ে বুঝছি যে, একটা ছবি তৈরি করতে হলে কতটা মনোযোগ প্রয়োজন। মাঝে ১০টা কাজ করে ফেললাম, তা হলে হয় না। আমাদের এখানে সেটা হয় না। আচ্ছা, আমি কি পাগল? আমারও তো সংসার চালাতে হবে। হাতে কাজ নেই, এ দিকে এক বছর পর সময় দেব! এ ছাড়া আমার অনেক ছবির শুটিং হয়ে পড়ে আছে। সেগুলো আগে মুক্তি পাক। তাই এখন আমি শুটিংই করছি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy