ঋদ্ধি। ছবি: পৃথ্বীরাজ পাল
তিন বছর বয়সে প্রথম গান গাওয়া শুরু ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কোন্নগরে তাঁর ছোটবেলাটা কেটেছে। সেখানেই তালিমের শুরু। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়ে মায়ের সঙ্গে কলকাতায় মঞ্জু গুপ্ত, কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়, মায়া সেনের কাছে গান শেখার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। সঙ্গীত জগতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া, অপবাদ শোনা... সব কাটিয়ে নিজের জায়গা তৈরি করা নিয়ে অকপট গায়িকা।
প্র: রবীন্দ্রসঙ্গীত, দ্বিজেন্দ্রগীতি, অতুলপ্রসাদ বা রজনীকান্তের গান... এই প্রজন্মের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য?
উ: এখন গানে ফিউশন করতে গিয়ে কনফিউশন হচ্ছে বেশি। কারণ গানটাকে না বুঝেই বহু শিল্পী গেয়ে ফেলছেন। তাঁরা হয়তো ভাবছেন, এই গানগুলো গাওয়া খুব সহজ! কিন্তু নিজের মৌলিক সৃষ্টি নিয়ে মানুষ যা ইচ্ছে করতে পারে। রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত, নজরুলের গান, যাঁদের গান আমি মূলত গাই, তাঁদের অবিকৃত রাখাই শ্রেয়।
প্র: এখন ছবির গানেও রবীন্দ্রসঙ্গীত আধুনিক যন্ত্রাণুষঙ্গে ব্যবহার হচ্ছে। ক্লাবে বাজছে, অল্পবয়সিরা শুনছেও...
উ: এক্সপেরিমেন্ট সব সময়েই ভাল। কিন্তু জিনিসটা জেনে করলে আরও ভাল। অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, নতুন কিছু করব ভেবে একটা কিছু করেন সঙ্গীত পরিচালকরা। লোকে হয়তো শুনছে, কিন্তু আমার মতে, সেই গানটি যদি দশ বছর পরে লোকে মনে না-ই রাখল, লাভ কী?
প্র: সম্প্রতি আপনিও একটি ছবিতে প্লেব্যাক করলেন...
উ: হ্যাঁ, ‘শ্লীলতাহানির পরে’ ছবিটিতে একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছি। খুবই সেনসিটিভ একটা জায়গা থেকে গানটির দৃশ্যায়ন হয়েছে। তবে এর আগেও প্লেব্যাক করেছি কয়েকটা। কিন্তু ছবি যদি হিট না করে, গানগুলো মানুষের কাছে পৌঁছয় না।
প্র: মিউজ়িক ইন্ডাস্ট্রিতে নেটওয়র্কিং ছাড়া খুব একটা কাজ পাওয়া যায় না... এটা মানেন?
উ: অবশ্যই। দেখুন এখন ইন্ডাস্ট্রিটা এমন হয়ে গিয়েছে যে, সকলেই মনে করে— ‘আমি খুব ভাল গাই, ও খুব খারাপ গায়!’ কেউ গাওয়ার সুযোগ পেলে ভাবে, নিশ্চয়ই সেটিং আছে। প্রথম দিকে আমাকেও কিন্তু বহু লোকে বলেছে, দেখতে সুন্দর বলে আমি কাজ পাই! এত বছরের কেরিয়ারে তাদের এটা বোঝাতে পারলাম না যে, আমার মুখ দেখার জন্য লোকে পয়সা দিয়ে গান গাইতে নিয়ে যায় না।
প্র: কারা বলেন এগুলো?
উ: শিল্পীরাই শিল্পীদের সবচেয়ে বেশি নিন্দে করে। গানবাজনার জগতে এত সিন্ডিকেট, এত লবি— এখানে আসার আগে জানতাম না। বাংলা গানের উত্থান যে হচ্ছে না, তার পিছনে এটাই কারণ। একটা সময়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়রা ছিলেন এই ইন্ডাস্ট্রিতেই। কত বন্ধুত্ব ছিল এই মানুষগুলোর মধ্যে। এখন পুরো গিভ অ্যান্ড টেক! আমি নিজে এগুলো দেখে খুব ধাক্কা খেতাম। কারণ আমি একটা অন্য ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি। কলেজে পড়াতাম একটা সময়ে। কাস্টিং কাউচের সম্মুখীনও হয়েছি। যদিও আমার স্বামী দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এই পেশাতেই আছেন এবং সিনিয়র মানুষ বলে বেশি কিছু বলার সাহস তারা পায়নি। কিন্তু কাজ আটকে গিয়েছে।
প্র: দেবজিৎ যেহেতু একই পেশায় আছেন, নিশ্চয়ই শুনতে হয়েছে যে, স্বামীর সহযোগিতায় আপনি গানের জগতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন?
উ: প্রথম দিকে খুব অফেন্ডেড হতাম। এখন গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। আসলে আমার স্বামী কখনও নিজের জন্যই কাউকে বলে না। আমরা যখন বিয়ে করেছিলাম, তখনই এই জিনিসগুলো নিয়ে নিজেরা খুব ক্লিয়ার ছিলাম।
প্র: সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন যে, স্বামীর সঙ্গে ছবি দিলে লোকে প্রচুর লাইক দেয়। কিন্তু আপনার কাজের ব্যাপারে তাঁদের তেমন উৎসাহ নেই...
উ: (হাসি) তাদের উদ্দেশ্যটা আমি ঠিক বুঝতে পারি না আসলে জানেন তো। কারণ আমার বিয়ে ভাঙা, অমুক-তমুকের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বহু কথা হয়, সেগুলো আমি জানতেও পারি। কিন্তু নয়-নয় করে একুশ বছর হয়ে গেল আমাদের... ব্যাপারটা লাইক-ডিসলাইকের নয়। আমার কাজে যদি কোনও উৎসাহ তার না থাকে, বরের সঙ্গে আমার ছবিতে লাইক দিয়ে লাভ কী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy