কবীর
প্রথম ওয়েব সিরিজ় ‘দ্য ফরগটেন আর্মি’র প্রচারে এসেছিলেন তিনি। পরিচালক কবীর খান। ঠান্ডা লেগে চোখ লাল, সাক্ষাৎকার দিলেন সে অবস্থায়...
প্র: সিরিজ়ের বিষয় নেতাজি বলেই কি কলকাতা দিয়ে শুরু করলেন?
উ: তা বলতে পারেন। সদ্য লেহ-তে মাইনাস ২৪ ডিগ্রিতে শুট করে এলাম ‘এইটিথ্রি’র। ফিরেই প্রোমোশন শুরু। নেতাজি এবং তাঁর আজ়াদ হিন্দ বাহিনী সম্পর্কে বাঙালিরা অনেক বেশি জানেন। এ দেশের অন্য প্রান্তের মানুষ তাঁকে ভুলেই গিয়েছেন।
প্র: এর কারণ কী মনে হয় আপনার?
উ: ল্যাক অফ ইনফরমেশন। রিসার্চ করতে গিয়েও তো দেখলাম, অর্ধেক ডকুমেন্টই নষ্ট হয়ে গিয়েছে বা নাগালের বাইরে। লন্ডনের ইম্পিরিয়াল ওয়র মিউজ়িয়ম কিংবা জাপানের আর্কাইভ থেকে কিছু তথ্য জোগাড় করেছি। স্বাধীনতার পরে ফ্রিডম ফাইটারের মর্যাদাও পাননি আইএনএ-র সেনারা। ‘গদ্দার’ও বলা হয়েছে।
প্র: আপনার রিসার্চের সবচেয়ে বড় রেফারেন্স তো আইএনএ-র দুই প্রাক্তনী...
উ: গুরুবক্স সিংহ ধিলোঁ ও লক্ষ্মী সেহগলের সঙ্গে তিন মাস ঘুরেছিলাম। সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া, রেঙ্গুন, ইম্ফল... প্রায় পুরোটাই ড্রাইভ করে। ফারার পার্কের যেখানে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির পত্তন হয়েছিল, ৫৫ বছর পরে সেখানে দাঁড়িয়ে ক্যাপ্টেন ধিলোঁ স্মৃতিচারণ করছিলেন... এটা কোনও লাইব্রেরি বা আর্কাইভ থেকে পেতাম না।
প্র: সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নেতাজি আর গাঁধীকে নিয়ে আলাদা পক্ষ নেওয়ার বিরোধী আপনি...
উ: নীতিগত ভাবে আলাদা মানেই যে শত্রু নয়, সেটা এই সময়ে দাঁড়িয়ে বিশ্বাস করানোই মুশকিল। এখন পার্লামেন্টের মধ্যে দাঁড়িয়ে রাজনীতিকরা একে অন্যের বিরুদ্ধে যে ভাবে শব্দপ্রয়োগ করেন, তাতে তাঁদের একে অন্যের শত্রু ছাড়া আর কী মনে হয়? আইএনএ-র সবচেয়ে বড় ব্রিগেডের নাম ‘গাঁধী ব্রিগেড’। সিঙ্গাপুরে নেতাজি যখন কুড়ি হাজার সেনার কাছ থেকে স্যালুট নিচ্ছেন, তখন পিছনে গাঁধীর ছবি টাঙানো ছিল।
প্র: নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে বাংলায় সম্প্রতি একটি ছবি হয়েছে। জানেন?
উ: শুনেছি ছবিটার ব্যাপারে। নেতাজি সেই ধরনের মানুষই ছিলেন না, যিনি দেশে ফিরে আসার পরেও নিজেকে আড়ালে রেখে বসে থাকবেন। ওঁর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এটা মেলে না। উনি লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীকে স্বপ্ন দেখাতে পারতেন। আর যাই হোক, উনি গুমনামী বাবা হতে পারেন না।
প্র: আপনার নিজের বিশ্বাস কী?
উ: এত থিয়োরি প্রচারিত হয়েছে যে, এখন এটা কিংবদন্তির পর্যায়ে চলে গিয়েছে। আমার মতে, বিমান দুর্ঘটনাই হয়তো ওঁর মৃত্যুর কারণ। হাবিবুর রহমানের সাক্ষ্য তো তাই বলে। আসলে ‘ফগ অফ ওয়র’ অনেক তথ্যপ্রমাণকেই ঝাপসা করে দেয়।
প্র: আপনার ছবিতে বরাবরই রাজনৈতিক আঙ্গিক ধরা পড়েছে...
উ: বিকজ় ফিল্ম ইজ় আ পলিটিক্যাল ক্রিচার। আমি নিজেও পুরোদস্তুর রাজনৈতিক মানুষ। আমার বাবা জেএনইউ-র অন্যতম ফাউন্ডিং প্রোফেসর, পার্লামেন্টের দুটো টার্মে মনোনীত হয়েছিলেন। বাড়িতে আমাদের কথা শুরুই হত রাজনীতি দিয়ে।
প্র: ইদানীং যে ধরনের প্রোপাগান্ডা ফিল্ম হচ্ছে বলিউডে, সে ব্যাপারে কী বলবেন?
উ: সেগুলিও তো ভীষণ ভাবে রাজনৈতিক। এই জন্যই পলিটিক্যাল অ্যাওয়্যারনেস দরকার, তবেই বোঝা যাবে কোনটা প্রোপাগান্ডা ফিল্ম! পর পর তিনটে ছবিতে মুঘলরা আমাদের শত্রু দেখালে, তখন তো তাঁদের ভিলেন মনে হবেই। এখন লোকে হোয়্যাটস অ্যাপের তথ্যকে সত্যি বলে ভাবে!
প্র: ছবিতে উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রদর্শনের ব্যাপারেও কি তাই বলবেন?
উ: আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে এই জাতীয়তাবাদ খুব ভাল খাপ খাচ্ছে, তাই হচ্ছে। ইসলামোফোবিয়ার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। রাইট উইং ন্যারেটিভ ইজ় বিইং পুশড। ছবিতেও তা-ই প্রতিফলিত।
প্র: জামিয়া মিলিয়ার প্রাক্তনী হিসেবে সম্প্রতি গুলি চলার ঘটনায় কষ্ট পেয়েছেন?
উ: ঘৃণা কত স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে এখন! ক্যাম্পাসে বন্দুক নিয়ে ঢোকার কথা কয়েক বছর আগেও ভাবা যেত না। আর এখন এ সব আমরা অ্যাকসেপ্টও করে নিচ্ছি।
প্র: রণবীর সিংহ কতটা কপিল দেব হয়ে উঠলেন ‘এইটিথ্রি’তে?
উ: যে কোনও চরিত্র হয়ে ওঠার প্রসেসটা জানপ্রাণ দিয়ে করে রণবীর। ও এখন সুপারস্টার। সেখানে চার-পাঁচ মাস শুধু ট্রেনিংয়ের জন্য রাখাটা ওর ডেডিকেশন লেভেলকে বোঝায়। ওই সময়টায় ও আর একটা ছবি করে ফেলতে পারত হয়তো।
প্র: সলমন খানের সঙ্গে ঝগড়া মিটেছে?
উ: পুরোটাই গুজব! যখন একই স্ক্রিপ্টে আমরা দু’জনে রাজি হব, তখন ছবিও হবে।
ছবি: সুমন বল্লভ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy