Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Celebrity Interview

বলতে দ্বিধা নেই, বাবা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত ছিল বলেই আমার টলিউড যাত্রা মসৃণ হয়েছে: পারিজাত

মাত্র আট বছর বয়সে ক্যামেরার সঙ্গে আলাপ হয় তার। এখন পারিজাত চৌধুরীর বয়স ১৬। এই আট বছরে তাঁর অভিজ্ঞতা কেমন?

Parijat Chaudhuri

‘ইন্দুবালা ভাতেল হোটেল’ সিরিজ়ে কিশোরী ইন্দুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন পারিজাত চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত।

উৎসা হাজরা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩ ১৩:৩২
Share: Save:

কলকাতা থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব প্রায় ২৯ কিলোমিটার। যদিও হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরলে সময় লাগে ৪৫ মিনিট। শহরের কোলাহল থেকে মফস্‌সলে মা-বাবা, দাদাকে নিয়ে সাজানো ছোট্ট পৃথিবী পারিজাতের। ইদানীং অবশ্য তিনি ইন্দুবালা মল্লিক নামেও পরিচিত ঘনিষ্ঠ মহলে। দেবালয় ভট্টাচার্য পরিচালিত ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ সিরিজ়ে পারিজাত চৌধুরীকে দর্শক দেখেছেন কিশোরী ইন্দুর চরিত্রে। বিয়ে করে ও পার বাংলা থেকে এ পার বাংলায় চলে আসে সে। বাস্তবে এই ছোট ইন্দুর জীবনটা ঠিক কেমন? সেই খোঁজ নিতেই আনন্দবাজার অনলাইন পৌঁছল পারিজাত চৌধুরীর শ্রীরামপুরের বাড়িতে। বাবা পেশায় অধ্যাপক। তাঁর মা-ও গানের সঙ্গে যুক্ত। পারিজাতের বাবা অবশ্য টালিগঞ্জে বেশ কিছু ছবিতে লেখার কাজও করেছেন। ফলে পারিজাতের জন্য কি এই পথ বেছে নেওয়া সহজ ছিল? একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নিজের স্বল্প অভিজ্ঞতাই ভাগ করে নিলেন।

প্রশ্ন: আপনার অভিনীত ‘ইন্দু’ চরিত্রটি নিয়ে তো বেশ হইচই পড়েছে। অভিনয় যাত্রা শুরু হল কী ভাবে?

পারিজাত: রিনামাসি মানে পরিচালক অপর্ণা সেনের ছবি ‘আরশি নগর’-এর মাধ্যমেই ক্যামেরার সঙ্গে আমার পরিচয়। আসলে বাবা বহু বছর ধরেএই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত। কমলজেঠুর (পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে অনেক দিনের বন্ধুত্ব বাবার। আমার মুখের অভিব্যক্তি দেখে জেঠুই আমায় প্রথম বলেন অভিনয় করার কথা। আমি বেশ উত্তেজিত হয়েছিলাম কথাটা শুনে। তার পরেই আমি রিনামাসির ছবিটার জন্য অডিশন দিতে যাই। সেখানে বাবাকে দেখে চিনতে পারেন তিনি। বাবা ‘গয়নার বাক্স’ ছবিতে গান লিখেছিলেন। ফলে বাবার সঙ্গে আগেই পরিচয় ছিল। সেই শুরু অভিনয় যাত্রার। তার পর ‘ক্ষত’, ‘পরবাস’, ‘মহানায়ক’— এমন অনেকগুলো প্রজেক্টে কাজ করেছি।

প্রশ্ন: আপনার তো ‘আদর’ নামে নতুন আর একটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে?

পারিজাত: হ্যাঁ। অনেক দিন আগে শুট হয়েছে। তখন অনেক ছোট ছিলাম। জানি না কেমন হয়েছে। আমি একেবারে সিনেমা হলে গিয়েই দেখতে চাই। এই ছবির শুটিং করতে গিয়ে ত্রিপুরায় ভয়ানক কাণ্ডও হয়েছিল। আমি আর বাবা একটি সরকারি গেস্ট হাউসে ছিলাম। সে রাতে কী অদ্ভুত সব কাণ্ড। যা ভয় পেয়েছিলাম! দ্বিতীয় বার শুট করতে গিয়ে দেবদূত আঙ্কলকে (দেবদূত ঘোষ, ছবির পরিচালক) বলেছিলাম তোমাদের হোটেলেই থাকব।

Parijat Chaudhuri

পারিজাত চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: আপনি শ্রীরামপুরেই বড় হয়েছেন?

পারিজাত: হ্যাঁ, আমাদের আদি বাড়ি চাত্রাতে। ওখানে আমাদের দোল মন্দির খুব বিখ্যাত। বর্তমানে যে ফ্ল্যাটে থাকি, সেটা বাবা কিনেছিলেন বিয়ের আগে। বাবা অধ্যাপক। এখানেই কলেজে পড়ান। চারিদিকে সারা দিন বইখাতা ছড়ানো থাকে। মা মাঝেমাঝে রাগ করেন।

প্রশ্ন: আপনি বই পড়তে ভালবাসেন? না কি মুঠোফোনে শুধুই সিরিজ়?

পারিজাত: ইদানীং একটু সিনেমা-সিরিজ় দেখার ঝোঁক হয়েছে। আর অধ্যাপকের মেয়ে বলে কথা, বই যদি ভাল না বাসি তা হলে বাবা বলবে, বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে যেন থাকি।

প্রশ্ন: বাবা ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত থাকায় নিশ্চয়ই অনেকটা সুবিধা হয়েছে?

পারিজাত: প্রত্যেকের নিজস্ব একটা যাত্রাপথ থাকে। হয়তো আমায় সেই ‘স্ট্রাগল’ করতে হয়নি। এটা এক প্রকার যাত্রা বলাই ভাল। কারও যাত্রাপথ সহজ হয়, আর কারও কঠিন।

Parijat Chaudhuri

পারিজাত চৌধুরী।

প্রশ্ন: আপনারটা তা হলে সহজ?

পারিজাত: হ্যাঁ, ইন্ডাস্ট্রিতে আমার যাত্রা সত্যিই সহজ। কারণ, আমার চোখের সামনে অনেকের পরিশ্রম দেখি। তাঁদের তুলনায় আমারটা তো কিছুই নয়। সেগুলো সত্যিই অকল্পনীয়। আমি গর্ব করেই বলব যে, বাবা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত ছিল বলেই রাস্তাটা মসৃণ হয়েছে। সেই জন্যই ‘আরশি নগর’ পেয়েছি। তবে কিছু তো প্রতিভা থাকতে হয়।

প্রশ্ন: তৃতীয় শ্রেণি থেকে অভিনয় করছেনএখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেনদু’দিক কী ভাবে সামলালেন?

পারিজাত: আমি ‘টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ পাবলিক স্কুল’-এর ছাত্রী। স্কুলের কাছে আমি খুবই কৃতজ্ঞ। সব সময় সহযোগিতা পেয়েছি শিক্ষকদের থেকে। আমাদের প্রিন্সিপাল সব সময় বলেছেন যে, তাঁরা চান ছাত্রছাত্রীরা তাদের পছন্দ মতো বিষয় নিয়ে এগিয়ে যাক।

প্রশ্ন: ভবিষ্যতে কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা?

পারিজাত: আমার ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে খুব পড়ার ইচ্ছা আছে। ছোটবেলা থেকে সাহিত্য ভাল লাগে। বাবাও বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক। ছোটবেলা থেকে তেমন পরিবেশেই বড় হয়েছি। বাবার জন্যেই এই ভালবাসা তৈরি হয়েছে।

Prosenjit Chatterjee and Parijat Chaudhuri

প্রসেনজিৎ-পারিজাত। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: ভবিষ্যতে যদি অভিনয় করতে ইচ্ছে না হয়, তা হলে পেশা হিসাবে কী বেছে নেবেন?

পারিজাত: আমি অভিনেত্রী না হলে ব্যবসা করব। ছোট থেকে দেখে এসেছি, মামারবাড়ির সোনার ব্যবসা। মায়েরও নিজস্ব বুটিক আছে। মায়ের ব্যবসাই সামলাব। জানি না, ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে। মায়ের এত সুন্দর তৈরি করা একটা ব্যবসা আছে। ওটাকেই আরও বড় করার চেষ্টা করব। অভিনয় করতে করতেও তা করতে পারি। তবে ব্যবসায় অনেক রাজনীতি আছে। সেগুলো বুঝতে হবে। মা অবশ্য বলেছে, এখন অত কিছু বুঝতে হবে না।

প্রশ্ন: শোনা যায়, টলিউডের অন্দরেও রাজনীতি আছে। ১৬ বছর বয়সে তা বুঝতে পারলেন?

পারিজাত: আমি যাঁদের ছায়ায় আছি, তাঁরা আমায় একটা বলয়ের মধ্যে রেখেছেন। তাঁরা বলেছেন, বড় তো এক দিন হতেই হবে। তবে এখন সেই রাজনীতিতে মাথা না দেওয়াই ভাল। এখন আমি একটা নিরাপদ আস্তানায় আছি।

প্রশ্ন: আপনার স্বপ্নের নায়ক কে, যাঁর সঙ্গে অভিনয় করার খুব ইচ্ছে?

পারিজাত: স্বপ্নের নায়ক বলে তেমন কেউ নেই। সকলের সঙ্গেই অভিনয় করতে চাই। মন দিয়ে কাজটুকু করে যেতে চাই। এর থেকে বেশি কিছু চাই না।

প্রশ্ন: কিছু দিন আগেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছবি পোস্ট করেছেনএর মধ্যেই শোনা যাচ্ছে, বুম্বাদা নাকি আপনাকে লঞ্চ করবেন?

পারিজাত: এটা পুরো গুজব। সম্পূর্ণ রটনা। বুম্বা আঙ্কলের সঙ্গে আমি দুটো কাজ করেছি। ফলে খুবই স্নেহ করেন আমাকে। ‘ইন্দুবালা’ সিরিজ়ে অভিনয়ের পর আমিই বাবাকে মেসেজ করতে বলেছিলাম। আঙ্কল বাবার মেসেজ দেখে বলেন দেখা করে যেতে এক দিন। আমি আর বাবা গিয়েছিলাম। ব্যস, এটুকুই! অনেক কিছু টিপ্‌সও দিলেন আঙ্কল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE