বেলঘরিয়ায় বেড়ে ওঠা থেকে অভিনেত্রী হওয়ার গল্প বললেন স্নেহা চট্টোপাধ্যায়। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
পড়ন্ত বিকেল। বাঁশদ্রোণী মেট্রো স্টেশন থেকে নেমে মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই একটি কফিশপ। এখানেই বিকেল ৫টায় সময় দিয়েছিলেন তিনি। পায়ে একটি সাধারণ স্লিপার, পরনে ড্রেস, খোলা চুল, মুখে মেকআপের লেশমাত্র নেই, সাদা ফ্রেমের চশমা পরে তিনি এলেন। তিনি স্নেহা চট্টোপাধ্যায়। বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর পরিচয় ‘লছমী’ নামে। কফিশপে ঢোকা মাত্রই এক জন দেখে বললেন, “আপনার অভিনয় দারুণ লাগে।’’ একটু হেসে দুটো কফির অর্ডার দিয়ে বসা হল। কফিতে চুমুক দিতে দিতে চালু হল আনন্দবাজার অনলাইনের ফোন রেকর্ডার। বেলঘরিয়ায় ঠাম্মা, ঠাকুরদাদের সঙ্গে কাটানো ছোটবেলা থেকে অভিনেত্রী হওয়ার গল্প বলে চললেন স্নেহা।
প্রশ্ন: ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ সিরিজ়ের পর কেরিয়ারে আপনার অনেকটা উড়ান হল তা হলে?
স্নেহা: হ্যাঁ, উড়ান হয়েছে। কিন্তু আমি উড়ছি না। সবটাই জীবনের এক একটা পর্ব। এটা একটা জীবনের ভাল অধ্যায়। এটাও এক দিন কেটে যাবে। তবে এই মুহূর্তগুলো আমি সত্যিই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছি। এক দিন চলে যাবে এই সুখের মুহূর্ত। আবার কবে আসবে সেটা জানা নেই।
প্রশ্ন: এমন অধ্যায় আগে এসেছিল কখনও?
স্নেহা: ‘ওটিটি’-তে অভিনয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই হয়নি। সিরিয়ালে অভিনয়ের পর আমায় নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছিল। ‘জল নূপুর’ সিরিয়ালে আমার অভিনীত ভূমিসুতা বসুমল্লিক চরিত্রটি নিয়ে বেশ মাতামাতি হয়েছিল। কিন্তু ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয়ের পর এই প্রথম এত চর্চা হচ্ছে।
প্রশ্ন: অভিনেত্রী হওয়া না কি নায়িকা হওয়া, কোনটা লক্ষ্য?
স্নেহা: অভিনয় করব ভেবেছিলাম। নায়িকা হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। মানে যদি হয়ে গেলাম, তো ঠিক আছে। কিন্তু মূল লক্ষ্য ছিল ভাল অভিনয় করার। ‘দক্ষিণ খোলা’ নামে একটা সিরিয়ালে অবশ্য নায়িকা হিসাবে কাজ করেছিলাম। ‘সুবর্ণলতা’ এবং ‘জল নূপুর’-এর পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, ভাল কাজ ছাড়া করব না। নায়িকা হওয়ার লোভ কখনও ছিল না আমার।
প্রশ্ন: ‘ভাল কাজ’ বাছেন কী ভাবে?
স্নেহা: প্রযোজক-পরিচালকেরা এসে প্রথমে গল্প শোনান। সিরিয়ালের ক্ষেত্রে অনেক দিন চলে বলে গল্প একটু এ দিক-ও দিক হয়। কিন্তু মূল গল্প তো একই থাকে। গল্প শোনানোর সময়ই তাঁরা বলে দেন চরিত্রর গুরুত্ব কতটা। সেটা শুনে বিচার করার ক্ষমতা আমার তৈরি হয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার ছোটবেলায়ও কি অভিনয় বা শিল্প-ভাবনার পরিবেশ পেয়েছেন?
স্নেহা: আমার ছোটবেলাটা দারুণ কেটেছে। বর্তমানে বাচ্চারা যেমন কাটায়, ঠিক তেমন নয়। একান্নবর্তী পরিবারে থাকতাম। প্রচুর ভাই বোন ছিল। বেলঘড়িয়ায় থাকতাম। পরীক্ষার পর ঠাকুমার কাছে গল্প শোনা, আচার খাওয়া— সব ছিল। আমার জীবনের প্রতিটা আনন্দের মুহূর্তে এখন খুব ঠাকুরমা-দাদুকে মিস করি। খুব দুষ্টু ছিলাম আমি। বড় হওয়ার সময় পাড়ায় নতুন নতুন ছেলেকে ভাল লাগত। এ ভাবেই আমার সঙ্গে বরের আলাপ। সেখান থেকে প্রেম। তার পর বিয়ে।
প্রশ্ন: কী ভাবে প্রেম হল?
স্নেহা: সংলাপের (ভৌমিক, স্নেহার স্বামী) সঙ্গে আমার আলাপ পাড়াতেই। আমায় গিটার শেখাতে এসেছিল। তার পর গিটার শেখা হয়নি, প্রেম হয়ে গিয়েছে। ও তখন সদ্য সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউটে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল। তখনই প্রেম। ১২ বছর হল আমাদের বিয়ের। তার আগে ৬ বছরের প্রেম। মোট ১৮ বছর। এই বাজারে দু’যুগ একই পুরুষের সঙ্গে, ভাবা যায়!
প্রশ্ন: কাটালেন কী ভাবে?
স্নেহ: বাবা ছোটবেলায় একটা কথা বলত, ভালবাসা সে-ই, যে তোমায় জীবনে এগিয়ে যাওয়ার ডানা যোগ করে। ডানা ছেঁটে নেওয়ার চেষ্টা করে না। সংলাপ আমায় সব সময় ডানা দিয়ে গিয়েছে। সেই জন্যই আছে। আমরা ভাল আছি।
প্রশ্ন: সবটাই তো আপনার জীবনে পজ়িটিভ। কখনও চলার পথে হোঁচট খাননি?
স্নেহা: সবটা পজ়িটিভ নয়। আমি সব কিছুকে ইতিবাচক ভঙ্গিতেই দেখার চেষ্টা করি। জীবনে কোনও সময় যে হোঁচট খাইনি তা নয়। কলেজর সময়টা আমার খুব একটা ভাল কাটেনি। ভর্তি হয়েছিলাম সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। বেলঘরিয়ায় বাংলা মাধ্যম থেকে পাশ করা মেয়ে সোজা সেন্ট জেভিয়ার্সে। পরিবেশের সঙ্গে খানিকটা মানিয়ে নিতে অসুবিধাই হচ্ছিল। হীনম্মন্যতায় ভুগছিলাম। তখন কলেজ শেষ হলেই চলে যেতাম সংলাপের কলেজে। তখনই বিভিন্ন ধরনের সিনেমা দেখার অভ্যাস তৈরি হয় আমার। ভাল লাগত বেশ ওখানকার পরিবেশ। তার পর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পার্ট টাইম চাকরি শুরু করি সাংবাদিক হিসাবে। খবর পড়তাম। একটা সময় নিজেকে মনে হত, আমি যেন কিছুই পারি না। তখন ওটাই আমায় বাঁচিয়ে রেখেছিল। তার পরে তো অভিনয়ের সুযোগ আসে।
প্রশ্ন: সিরিয়ালে আপনার অভিনীত চরিত্রেরা চর্চিত। সিরিজ়ে অভিনয়ের জন্যও পেয়েছেন প্রশংসা। তবুও সিনেমায় কেন দেখা যায় না আপনাকে?
স্নেহা: সত্যিই জানি না। আমার চেনা পরিচালকেরা যেমন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়— এদের সকলকেই আমি বলেছিলাম, সিনেমায় কাজ করতে চাই। কিন্তু যাঁদের বলিনি তাঁরা আমায় সুযোগ দিয়েছেন। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, রাজর্ষি দে— এদের সঙ্গে কিন্তু আমার পরিচয় ছিল না। কিন্তু তাঁরাই আমায় সুযোগ দিয়েছেন। আমার কিন্তু কাজ চাইতে কোনও লজ্জা নেই। দেবালয়দাকে (ভট্টাচার্য) অনেক দিন আগে বলে রেখেছিলাম। তার পর আচমকাই সুযোগ আসে।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে তা হলে কোন মাধ্যমে আপনি বেশি কাজ করতে ইচ্ছুক?
স্নেহা: আমি এটাই বলতে চাই আমি সব ধরনের মাধ্যমে কাজ করতে চাই। অনেকেরই ধারণা, সিরিয়ালের অভিনেতারা সময় দিতে পারেন না। তাই এখন সিরিয়ালের কাজের সময়ও নিয়ন্ত্রণে এনেছি। যাতে বাকি সময় যদি কোনও ভাল চরিত্রের সুযোগ আসে, করতে পারি। আমি আপনাদের মাধ্যমে এই বার্তাই দিতে চাই যে, আমি সময় দিতে পারব, কাজ করতে চাই। ‘বিসমিল্লাহ’, ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’, ‘সাদা রঙের পৃথিবী’-তে অভিনয়ের পর আমি সত্যিই উপভোগ করছি।
প্রশ্ন: পরিচালকদের সঙ্গে ঠিক কোন সমীকরণ কাজ করে নতুন কাজ পাওয়ার জন্য?
স্নেহা: ঠিক মানুষের সঙ্গে পরিচিতি তো খুব কাজ করে। আমরা যাঁরা প্রধানত সিরিয়ালে অভিনয় করি, তাঁদের ক্ষেত্রে এই আলাপ থাকাটা খুব জরুরি। তার পর এই জগতের যে পার্টি হয়, সেখানেও তো আমার তেমন যাতায়াতের সুযোগ হয়নি। সেখানে যাতায়াত বাড়লেও কাজের সুযোগ বাড়ে।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে স্বজনপোষণ আছে?
স্নেহা: সিনেমার জগতে ঠিক বলতে পারব না। তবে সিরিয়ালের ক্ষেত্রে হয় এমনটা, তা দেখেছি। যদিও এই বিষয়টাকে আমি নেতিবাচক ভাবে ভাবি না।
প্রশ্ন: আপনার স্বামী সংলাপও এই ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করেন। তাতে কি খানিকটা সুবিধা হয়েছে?
স্নেহা: একটাই সুবিধা, দু’জনেই বুঝতে পারি কারও কোনও সময়ের ঠিক নেই। আর কোনও সুবিধা নেই। কাজ নিয়ে তেমন কোনও কথা হয় না। বিশেষত ছেলে হওয়ার পর চিত্রটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে।
প্রশ্ন: আগামী পাঁচ বছরে নিজের জন্য কী কী পরিকল্পনা করে রেখেছেন?
স্নেহা: পেশাদারিত্বের দিক থেকে বলব, নিত্যনতুন কাজ করতে চাই। সিরিয়াল আমি ছা়ড়ব না। আমি ‘টেলিভিশন চাইল্ড’। তবে সিরিজ়, সিনেমায় কাজ করতে চাই। আর ব্যক্তিগত ভাবে প্রচুর ঘুরতে চাই। নানা জায়গায় বেড়াতে যেতে চাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy