ইঞ্জিনিয়ার থেকে কী ভাবে অভিনেত্রী হয়ে উঠলেন অঙ্গনা? ছবি: ফেসবুক।
আরতি মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাওয়া সেই বিখ্যাত গানের কথা মনে আছে? ‘হিরে মানিক’ ছবির গান ‘এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে, চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাব’। টলিপাড়ার এই নতুন নায়িকাও ছোট ছোট পায়ে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পরেও ১০টা-৫টার চাকরি মোটে পছন্দ নয়। মাথায় ঢুকল অভিনয়ের পোকা। ইঞ্জিনিয়ার থেকে অভিনেত্রী হওয়ার সেই যাত্রার গল্পই আনন্দবাজার অনলাইনকে শোনালেন অঙ্গনা রায়। ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’, ‘রক্তকরবী’-সহ একাধিক সিরিজ়ে তাঁকে দেখে ফেলেছেন দর্শক।
প্রশ্ন: আপনার অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা কবে থেকে?
অঙ্গনা: কাজের শুরু কিন্তু অনেক ছোটবেলায়। পরিচালক তরুণ মজুমদার ‘আলো’ ছবিতে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম শিশুশিল্পী হিসাবে। ওই আমার জীবনের প্রথম কাজ। তখন আমার পাঁচ বছর বয়স। বলা যেতে পারে, সেটাই প্রথম ধাপ। কিন্তু মা-বাবা সব সময় আমায় বলে এসেছেন সবার আগে পড়াশোনা। তখনই ভাল লাগার শুরু। যদিও পেশাদার অভিনেতা হিসাবে কাজ শুরু ২০১৮ সালে।
প্রশ্ন: আপনার পড়াশোনাও কি অভিনয় নিয়ে?
অঙ্গনা: না। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রী।
প্রশ্ন: তা হলে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে মোটা বেতনের চাকরি ছেড়ে এমন অনিশ্চিত পেশা বেছে নিলেন কেন?
অঙ্গনা: এখন আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও মোটা মাইনের চাকরি হয় না। আর এই পেশাকে আমি অজান্তেই ভালবেসেছি। আমি না খুব আশাবাদী। ইংরেজিতে যাকে অপ্টিমিস্টিক বলে, তেমন ধরনের মানুষ। তাই ভাবি একটাই জীবন, যেমনটা চাই অন্তত স্বপ্নের যেন কাছাকাছি পৌঁছতে পারি। আর আমাদের পরিসরে একটা কথা মাঝেমাঝেই বলা হয়। লোকে আগে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে, তার পর নিজের স্বপ্নকে ধাওয়া করে। আমার মনে হয়, এই অনিশ্চয়তাই ভাল লাগে। আমার কোনও তা়ড়া নেই যে, এখনই যদি সাফল্য না পাই তা হলে কী হবে!
প্রশ্ন: আপনি এক জন উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবার ভাল ব্যবসা, সংসার চালানোর চিন্তা নেই বলেই কি অনিশ্চয়তার ঝুঁকি নিতে পারছেন?
অঙ্গনা: যতই এখন আমার বাবা-মা কলকাতায় থাকুন না কেন, দিনের শেষে তাঁরা এখনও মফস্সলের মানুষ। বাবা সব সময় বলে থাকেন, একটা সময় আমি নিজেরটা নিজে বুঝে নিয়েছি। তোমাকেও নিজেরটা বুঝে নিতে হবে। আমি যেমন এখন নিজে আলাদা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকি। শুটিং থাকলে মা-বাবার সঙ্গে থাকি। যে দিন থেকে আমি অল্প অল্প কিছু রোজগার করা শুরু করেছি, সে দিন থেকে আর হাত পাতিনি বাবার কাছে। বাবা এখনও চান, আমি যেন একটা মাস মাইনের চাকরি করি। সব মা-বাবাই হয়তো তেমনটা চান। আমার বাবা অতটাও উদার নন।
প্রশ্ন: তার মানে বাবা মেয়ের মধ্যে মতবিরোধ ছিল?
অঙ্গনা: প্রথম দিকে ছিল। বাবা তখন চাননি আমি অভিনয় করি। এখন সেই মতবিরোধ আর নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কমে গিয়েছে। বাবা এখন আমার কাজ দেখলে লাফায়।
প্রশ্ন: যে হেতু প্রথম দিকে বাবার সঙ্গে একটু বিরোধ ছিল, সে ক্ষেত্রে মা-বাবার কমফোর্ট জ়োন থেকে নিজেকে বার করে আনা কতটা কঠিন? বা পরিবারকে সেই সিদ্ধান্তে রাজি করানো কতটা শক্ত কাজ?
অঙ্গনা: কঠিন। বেশ কঠিন। আসলে শুটিং থেকে ফিরতে অনেক সময় দেরি হয়। তখন ওঁরা জেগে থাকেন। সেটা আমি চাই না। যাতে মা-বাবার সেই কষ্ট না হয়, কোনও সমস্যা না হয় তখনই এই সিদ্ধান্ত নিই।
প্রশ্ন: আপনার মা লাজবন্তী রায় তো জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী। বিখ্যাত রিয়্যালিটি শো ‘রোজগেরে গিন্নি’র সঞ্চালিকাও ছিলেন। তাই জন্য আপনার পথ নিশ্চয়ই কিছুটা সহজ ছিল?
অঙ্গনা: অভিনয় জগতে কী ভাবে কাজ হয়, মায়ের সে সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। মা কখনও অভিনয় করেননি। সঞ্চালনা করেছেন। দুটো আলাদা ক্ষেত্র। প্রথমে মারও বেশ ভয় ছিল যে, আমি পারব কি না। তবে আজকাল যখন অনেকে মাকে অঙ্গনার মা বলে বেশ খুশিই হয়। সত্যি বলতে, তেমন কোনও সাহায্য পাইনি লাজবন্তী রায় মা বলে। কারণ অনেকে জানেনও না। সেটা জানার কথাও নয়। আর মা যে সময় কাজ করেছেন, সেই সময়কার অনেকেই এখন আর নেই। সব বদলে গিয়েছে। তবে বাবা একটু বিরোধিতা করলেও মা সব সময় আমার পাশে থেকেছে।
প্রশ্ন: লাজবন্তীর মেয়ে আপনি, এটা ইন্ডাস্ট্রিতে জানলে কি আপনার সুবিধা হত বলে মনে হয়?
অঙ্গনা: আমি কখনও কোনও অযথা সুবিধা নিতে বিশ্বাসী নই। ‘পারিয়া’ ছবিটির বেশ কিছু শুটিং হয়ে যাওয়ার পর এক দিন পরিচালকে তথাগত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিটিং করেছিলাম। সে দিন তথাদা জানতে পেরে বলেন, আমি কেন বলিনি। কিন্তু কেন বলব? দরকার পড়েনি, তাই বলিনি। সেই ভাবেই বড় হয়েছি। মানুষ কাজের জন্য আমায় চিনুক সেটাই চাই।
প্রশ্ন: আপনার আসল বাড়ি আসানসোলে। সেখানকার সঙ্গে যোগাযোগ আছে?
অঙ্গনা: ২০২১ সালে বাড়িটি বিক্রি হয়ে যায়। তার পর আর যাওয়া হয়নি। ২০১৬ সালে দিদা মারা যান। তার পর থেকে মনটা ভেঙে যায়। দিদা-দাদু আমার মা-বাবার থেকেও বেশি কাছের। ওঁদের কাছেই আমি বড় হয়েছি। আমার হাতে ট্যাটুটাও ওঁদের উদ্দেশে করা।
প্রশ্ন: আপনি কি কোনও সম্পর্কে আছেন, না কি সিঙ্গল?
অঙ্গনা: এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্যই করতে চাই না। কেরিয়ারের সবে শুরু। আপাতত কাজের কথাটুকুই থাক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy