সাহেব ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত।
২০০৮ সালে শেষ বারের মতো ছোট পর্দায় দেখা গিয়েছিল অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্যকে। ১৬ বছর পর আবারও ‘কথা’ সিরিয়ালের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে অভিনেতাকে। মাঝে বেশ কিছু ওয়েব সিরিজ়, সিনেমায় কাজ করেছেন তিনি। এক দিকে এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের রমরমা অন্য দিকে বড় পর্দার কাজ— সব কিছু ছেড়ে কেন ১৪ ঘণ্টার বাঁধাধরা রুটিনে নিজেকে বাঁধলেন? শট দিতে যাওয়ার আগে আনন্দবাজার অনলাইনের সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন সাহেব।
প্রশ্ন: ২০০৮ সালে চ্যানেল শুরুর সময় আপনাকে সিরিয়ালে দেখা গিয়েছিল, তার পর মাঝের ১৬ বছর কেন ছোট পর্দায় দেখা গেল না আপনাকে?
সাহেব: হ্যাঁ, সে সময় আমার দুটো সিরিয়াল দিয়েই চ্যানেল শুরু হয়। একটা ছিল ‘বন্ধন’ আর একটা ছিল ‘নীড় ভাঙা ঝড়’। সেটাই শেষ। তখন ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় কাজের সুযোগও পেয়ে যাই। আর তখন একটা ধারণা ছিল যে, প্রতি দিন টেলিভিশনের পর্দায় কোনও অভিনেতাকে দেখা গেলে তাঁকে আর সিনেমায় নেওয়া যাবে না। সেই কারণে ওই দুটোই আমার শেষ সিরিয়াল। ১৬ বছর পর আবারও চ্যানেল থেকে আমায় এই নতুন কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। আমার মনে হয়েছিল বৃত্ত যেন পূর্ণ হল। আর এখন তো অভিনেতারা যে কোনও মাধ্যমে কাজ করতে পারে।
প্রশ্ন: শোনা যায়, ছোট পর্দার অভিনেতাদের বড় পর্দায় কাজ পেতে গেলে এখনও কাঠখড় পোড়াতে হয়, আদৌ কি আগের ধারণার বদল ঘটেছে বলে আপনার মনে হয়?
সাহেব: না না, এখন বদলেছে। ১৫ বছর আগে কেউ ভাবতেই পারতেন না ‘সুপারস্টার’রা রিয়্যালিটি শোর সঞ্চালনা করছেন। সিরিয়ালের নায়িকারা টলিপাড়ার তারকাদের বিপরীতে কাজ করছেন। আর এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের রমরমা। আমাদের সিরিয়ালও অনেকেই ওটিট-তে দেখেন। ফলে আমার মনে সেই পুরনো ধারণা ভেঙে গিয়েছে। অভিনেতাদের জন্য এটা খুব ভাল সময়।
প্রশ্ন: সিরিয়ালে অভিনয় করার জন্য রাজি হওয়ার প্রাথমিক কারণ কী ছিল আপনার?
সাহেব: আমার মনে হয়েছিল দর্শকের কাছে পৌঁছতে হবে আমায়। আমি এত দিন যে ধরনের ছবিতে অভিনয় করেছি সেগুলো গুটি কয়েক দর্শকের কাছে পৌঁছেছিল। আর দর্শক কিন্তু আমায় আগে খুবই ভালবাসা দিয়েছে। রিয়্যালিটি শোয়ের সঞ্চালক হিসাবেও বেশ প্রশংসা পেয়েছিলাম। একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে দর্শকের সামনে। অনেকে আমায় বলতেন আবার ছোট পর্দায় তাঁরা আমায় দেখতে চান।
প্রশ্ন: নায়কের চরিত্রের সুযোগ না পেয়ে যদি খলনায়কের চরিত্র বা কোনও পার্শ্বচরিত্রে সুযোগ পেতেন তা হলে রাজি হতেন?
সাহেব: হ্যাঁ, কেন করব না? নিজেকে যদি আমি কোনও কিছুর মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলি তা হলে নিজের অভিনেতা সত্তাকেই শেষ করে দেওয়া হবে। এই চরিত্রও আগামী দিনে কোন দিকে মোড় নেবে সেটাও তো প্রথমে বোঝা যায় না।
প্রশ্ন: মাঝে বেশ কিছু ওয়েব সিরিজ়ে কাজ করেছেন আপনি। সিনেমার চেয়ে সিরিজ়ে অভিনয় করে কি দর্শকের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন?
সাহেব: আমার অভিনীত ‘তোপসে’ চরিত্র দর্শকের কাছে বিপুল ভালবাসা পেয়েছে। সিনেমার একটা আলাদা দর্শক আছে। আর সিরিজ়ের ক্ষেত্রে বিষয়টা হল সঙ্গে সঙ্গে দর্শকের কাছে পৌঁছনো যায়। বড় পর্দার থেকে বাকি মাধ্যমগুলোয় অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের কাছে সহজে পৌঁছনো যায়। আমার কাছে আগেও কিন্তু সিরিয়ালের সুযোগ এসেছে। কিন্তু এই চরিত্রটা এক অন্য রকমের।
প্রশ্ন: সিরিয়ালের জন্য রান্নাও তা হলে শিখতে হচ্ছে?
সাহেব: আমি তো সব রান্না, কাটাকুটি করতে পারি। ২০১৯ সালে প্রথম যখন আমি একা থাকতে শুরু করি, তখন ডিম সিদ্ধও করতে পারতাম না। কিন্তু একা থাকলে মানুষের মধ্যে একটা পরিবর্তন আসে। সে নিজে আরও দায়িত্বশীল হয়। তাই এখন আমি সবই পারি।
প্রশ্ন: একা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কেন?
সাহেব: আমার মনে হয় সব অভিনেতাদেরই জীবনে কখনও না কখনও একা থাকা উচিত। তবে নিজের মূল্যায়ন করা যায়। নিজেকে ভাঙার দরকার। বাড়ির পরিবেশে সেটা হয় না। তাই নিজেকে আরও স্বনির্ভর করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তখনই রান্না করা শিখেছি। নিজেকে একেবারে নতুন করে তৈরি করেছি বলা যেতে পারে।
প্রশ্ন: কী কী পদ ভাল রান্না করতে পারেন?
সাহেব: আমি পাস্তা দারুণ তৈরি করতে পারি। কচি পাঁঠার মাংসের ঝোল বেশ ভাল করতে পারি। বন্ধুরা আমার হাতের রান্না খেতে খুব ভালবাসে।
প্রশ্ন: একই শহরে থেকে আলাদা থাকতে চান, মা-বাবাকে (ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য) বুঝিয়েছিলেন কী ভাবে?
সাহেব: অবশ্যই প্রথমে তো একটু সমস্যা হয়েছিল। বাবা তো বলছিলেন এত বড় বাড়ি তৈরি করলাম, ছেড়ে চলে যাবে, এ আবার কী! স্পেস চাই এটা মা-বাবাদের বোঝানোটাই কঠিন। এতগুলো ঘর আছে যে কোনও ঘরে থাকো, আর কত স্পেস চাই! কিন্তু শেষে অবশ্য বুঝেছিলেন।
প্রশ্ন: ব্যক্তি সাহেবের মধ্যে কী কী পরিবর্তন এল?
সাহেব: জীবনে একটা হিসেব থাকে। বেহিসাবি জীবন বেশি দিন চলতে পারে না। আর হচ্ছে মানুষ চিনতে শেখার ক্ষমতা তৈরি হয় একা থাকলে। অভিনেতা সাহেবকে পরিণত করেছে আমার একা থাকা।
প্রশ্ন: সিরিয়ালে তো বিয়ের দৃশ্যের শুটিং চলছে, আপনি নিজে কবে ছাঁদনাতলায় যাচ্ছেন?
সাহেব: এই বিষয়টা পুরোটাই ভগবানের হাতে। মা-বাবা পাত্রী খুঁজচ্ছেন। কারও কাছে সুপাত্রীর সন্ধান থাকলে প্লিজ জানাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy