আজমেরী
প্র: শুনেছিলাম আপনি অসুস্থ। এখন ঠিক আছেন?
উ: আসলে আমার এক ধরনের ক্রনিক ডিপ্রেশন আছে। ওটা হিট করছিল।
প্র: অবসাদ নিয়ে সকলে কথা বলতে চান না। আপনি দেখছি অকপট...
উ: বাকিরা হয়তো বলতে চায়, কিন্তু পারে না। আমাদের সমাজ বলতে দেয় না। বললেই তো তাকে জাজ করা হবে।
প্র: কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘রেহানা মারিয়ম নূর’ প্রদর্শনের পর থেকে কতটা বদলে গিয়েছে আপনার জীবন?
উ: ‘রেহানা...’ করার সময় থেকেই বদলেছে। আমার বয়স এবং কেরিয়ার যে জায়গায় রয়েছে এখন, সেখানে দাঁড়িয়ে এই সুযোগ পাওয়াটা খুব বড় ব্যাপার। আমাদের উপমহাদেশে তিরিশোর্ধ্ব মেয়েদের জন্য ভাল চরিত্র লেখা হয় না। হলেও সেখানে প্রতিষ্ঠিত বা পরিচালকের সঙ্গে সখ্য রয়েছে এমন অভিনেত্রীদেরই নেওয়া হয়। তবে আমার ক্ষেত্রে আব্দুল্লাহ মহম্মদ সাদ বা সৃজিত মুখোপাধ্যায় যে ঝুঁকিটা নিয়েছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আগে স্রেফ টাকা রোজগারের জন্য অভিনয় করতাম। ২০১৭ সাল থেকে কাজ নিয়ে সিরিয়াস হয়েছি। সকলের কাছে ভাল কাজ চাইছি।
প্র: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’-তে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
উ: ওঁর মতো পরিচালক আমাকে অ্যাপ্রোচ করবেন এবং মুসকান জ়ুবেরির মতো চরিত্র দেবেন, ভাবিনি কখনও! সৃজিত খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘অভিনেতাকে দিয়ে অ্যাক্টিং করানো আমার কাজ। তোমাকে ডেডিকেশনটা দেখাতে হবে।’ এটা যে পরিচালক বলেন, তাঁর উপরে আস্থা রাখা যায়। এখানে আমি আলাদা করে রাহুল বসুর কথা বলব। উনি সেটে আমাকে খুব সহজ করে দিয়েছিলেন। অনির্বাণ ভট্টাচার্য বা অঞ্জন দত্তর সঙ্গে সরাসরি দৃশ্য ছিল না, তবে ওঁদের কাজ দেখব বলে সেটে গিয়ে বসে থাকতাম।
প্র: সেটে বকুনি খেতে হয়নি?
উ: অজস্র বার (হাসি)! তবে বকুনির পাশাপাশি প্রশংসাও পেয়েছি। বকুনি গায়ে লাগে না, যখন বুঝি সেটা আমার ভালর জন্য দেওয়া হচ্ছে। পরিচালক স্বার্থপর না হলে ভাল কাজ বেরিয়ে আসে না।
প্র: আপনি বলছিলেন রোজগারের জন্য অভিনয় করতেন। কিন্তু ভালবাসা না থাকলে কি এই প্যাশন সম্ভব?
উ: ভালবাসাটা এখন জন্মেছে। ২০০৬ সালে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছিলাম, বিচারকের আসনে থাকা হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দেখা করব বলে। ডাক্তারির ছাত্রী ছিলাম, পড়াশোনার ফাঁকে অল্পস্বল্প কাজ করতাম। কিন্তু পড়া শেষ করেই আমি বিয়ে করি এবং মা হই। তার পরই শুরু হয় অন্য লড়াই। চার বছরের মধ্যে আমার ডিভোর্স হয়। তখন মেডিকাল প্র্যাকটিস শুরু করা সম্ভব ছিল না। টেলিভিশনে কাজ করতে শুরু করি। অভিনয় নিয়ে চিন্তা করতাম না, রোজগারের কথাই ভাবতাম। আমার মেয়ের (মিশেল আমানি সায়রা) তখন এক বছর বয়স। ওকে ব্রেস্ট ফিড করাতে হত বলে সেটে নিয়ে যেতাম। ২০১৭ সালে এসে উপলব্ধি হল, ৩৪ বছর ধরে আমি আদর্শ নারী হওয়ার জন্য নিজের জীবনটা দিয়ে দিয়েছি। বাবা-মা, ইন্টিমেট পার্টনার, সন্তান, সমাজ এদের জন্য বেঁচেছি। নিজের জন্য নয়। এখন আমি বাকি জীবনটা নিজের মতো করে যাপন করতে চাই।
প্র: কান-এ স্ট্যান্ডিং ওভেশনের পরে আপনার কান্না থামছিল না। ওই সময়টায় ঠিক কী মনে হয়েছিল?
উ: আমি প্রথম বার ছবিটা দেখেছিলাম সে দিন। ভীষণ দমবন্ধ করা, চাপা কষ্টের একটা ছবি। চোখের জল বাঁধ মানছিল না। হলের যে দিকে তাকাচ্ছি, হাততালি... চোখের সামনে নিজের স্ট্রাগলের দিনগুলো ভেসে উঠছিল। যেন রাউন্ড ট্রলি করে নিজের পুরো জীবনটা দেখে নিলাম। কত অসম্মান, বঞ্চনা সহ্য করেছি এই পথটা পেরোতে। আমার বিশ্বাস, আমার এই জয় আরও অনেক মেয়েকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
প্র: মেয়ের অভিভাবকত্ব এবং কাস্টডির লড়াইয়ে আপনি জিতেছিলেন। আপনার দেশের বিচারব্যবস্থার নিরিখে এ এক রকম বৈপ্লবিক ঘটনা...
উ: এখানে কাস্টডি যদিও বা পাওয়া যায়, অভিভাবকত্ব একেবারেই অসম্ভব। অধিকাংশ মেয়ে এই লড়াইয়ে নামেই না।
প্র: আপনার কাজ নিয়ে মেয়ের কী প্রতিক্রিয়া?
উ: ও ছোট থেকে আমাকে অনেক লড়াই করতে দেখেছে। ওর কাছ থেকে আমি সব আড়াল করতে পারিনি। তাই বয়স আন্দাজে অনেক বেশি পরিণত। মেয়ে আমার অন্যতম সাপোর্ট। কান-এ থাকার সময়ে ফোন করে বলছিল, ‘মা, ইউ রক’! খুব মজা পেয়েছিলাম (হাসি)। আমার মাকে আমি শুধু আপস করতে দেখেছি। চাই না, আমার মেয়ে সেটা আমাকে করতে দেখুক। ওকে স্বাধীন ভাবে বড় করতে চাই, যাতে নিজেকে মানুষ ভাবতে শেখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy