চান্দ্রেয়ী।
৪০-এ চান্দ্রেয়ী। নতুন জীবন শুরু। বিয়ে নিয়ে ভাবছেন?
চান্দ্রেয়ী: আমি হোপলেস রোম্যান্টিক। আজ একটা বিষয় বলেই ফেলি, আগে বলিনি…আমি খুব প্রেমে পড়ে যাই। তবে পড়ে যাওয়াটা ভাল নয়…খুব মেলোড্রামা, দুঃখ, কষ্ট হয়।ধুর! রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওই পঙক্তি‘বঞ্চিত করে বাচালে মরে’,ওটাই ঠিক আমার জন্য।
বিয়ে না করলে লিভ-ইন করবেন?
চান্দ্রেয়ী: এই বিষয়গুলো ব্যক্তিগত। তবে আমার মনে হয়, দুটো মানুষ বলতেই পারে আগে আমরা একসঙ্গে থাকি। দেখি এক ছাদের তলায় থাকতে পারি কি না!তারপর তারা বিয়ে করতেও পারেন, আবার না-ও করতে পারেন।প্রেম বা বিয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক নিয়ম চাপিয়ে না দিয়ে মানুষকে নিজের মতো করে এ বার বাঁচতে দেওয়া উচিত।
ইনস্টাগ্রামে কেউ যদি শরীরচর্চা করে কম পোশাকে ছবি দেয়, তা হলে সে তার ইচ্ছেমতো করতেই পারে
সমলিঙ্গের প্রেম নিয়ে আপনার কী মত?
চান্দ্রেয়ী: এখন দেখি, নতুন প্রজন্মের মধ্যে সমলিঙ্গের প্রেম নিয়ে জায়গা তৈরি হলেও তাদের প্রচুর পারিবারিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সমাজের দিক থেকে গ্রহণযোগ্যতা কিন্তু খুব ধীরে আসছে। আমাদের দেশে খুব তাড়াতাড়ি সমলিঙ্গের বিয়ে আইনের আওতায় আসুক।সব প্রাণ খুলে বাঁচুক।
আপনি মডেলিং দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেন, অভিনেত্রী হিসেবে শরীর নিয়ে কোনও ছুঁতমার্গ আছে আপনার?
চান্দ্রেয়ী: আমার শরীর আমার, ইচ্ছে, রুচিসম্মতভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করতেই পারি। কারও কিচ্ছু বলার নেই। আমার মডেলিং নিয়ে কেরিয়ার শুরু, তাই শরীর নিয়ে কোনও ছুঁৎমার্গ নেই আমার।কিন্তু কিছু ‘ডিসকমফর্ট জোন’ আছে সেখানে আমি ঢুকি না।
ইনস্টায় খোলামেলা শুট এখন অভিনেত্রীদের খুব প্রিয় বিষয়...
চান্দ্রেয়ী: ভাল তো! ইনস্টাগ্রামে কেউ যদি শরীরচর্চা করে কম পোশাকে ছবি দেয়, তা হলে সে তার ইচ্ছেমতো করতেই পারে।নিজের ইচ্ছের উপর জীবনটাকে ধরে রাখা উচিত।
‘মায়ার জঞ্জাল’ ছবির চরিত্রের মতো?
চান্দ্রেয়ী: আমার জন্য ‘মায়ার জঞ্জাল’ ছবির কাজ খুব শক্ত ছিল। বাংলাদেশের সাধারণ গৃহবধূ কলকাতায় এসে যৌনকর্মী হয়ে গিয়েছে৷ দেহব্যবসা শুরু করে প্রচুর লোকসান করে, নোটবন্দির সময়৷ তখনই সে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে চেষ্টা করে৷ এর জন্য তার প্রেমিক সত্যর সাহায্য নেয় সে। সত্য রিয়্যাল এস্টেটের দালাল এবং দু’নম্বরি কারবারের সঙ্গে যুক্ত৷ তার নজর রয়েছে যৌনকর্মী বিউটির টাকার দিকে৷ইমোশন আর বাস্তবে টাকার লড়াইয়ের দ্বন্দ্ব চলে তার মাঝে। অনেক শেডস বেরিয়েছে চরিত্র থেকে।প্রথমে এই গল্পটা ইন্দ্রনীল ভেবেছিল শর্ট ফিল্ম করবে। তারপরে ছবির কথা ভাবে।
কখনও ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীকে প্রশ্ন করেছেন,‘ফড়িং’-এর পরে তাঁর কী হল?
চান্দ্রেয়ী: আমিও ওকে এই প্রশ্ন করেছিলাম এক বার। কবি (ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী)আসলে কখনও কম্প্রোমাইজ করে কাজ করেনি। খুব কম বাজেটে ছবি করতে বলা হয় ওকে। কাস্টিং কী হবে সেটাও বলে দেয়। এ ভাবে ও কাজ করবেও না। ‘মায়ার জঞ্জাল’-এর কাজও দু’বছর ধরে চলছে।বাংলাদেশকেও ফিনান্স করতে হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি ছবি ‘মায়ার জঞ্জাল’ মুক্তি পেতে চলেছে সাংহাই আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে৷ ২৩তম সাংহাই আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে হবে ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার৷ এশিয়ান নিউ ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নিয়েছে। এ বার মনে হয় কবির ছবি করার জায়গা বদলাবে।
ক্যাবারের কস্টিউম পরে নাচব জেনে ৯ কেজি ওজন কমিয়েছিলাম
২০ বছরে মনে হয়নি বাংলা ইন্ডাস্ট্রি পাঁচ পরিচালক, পাঁচ নায়ক-নায়িকায় আটকে?
চান্দ্রেয়ী:আমার মনে হয় কাজের ক্ষেত্রে কমফর্ট জোনের প্রশ্ন আছে। যেমন, অমুকের সঙ্গে কাজ করলে আমার কাজটা তাড়াতাড়ি উঠে যাবে। সে জন্য এক পরিচালক কিছু সংখ্যক মানুষের মধ্যে টিম করে কাজ করেন। এতে আমার কিছু বলার নেই।আর জনপ্রিয় ৩০ জন হয় না, ৫ জন হয়।
এখন ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেতাদের সময়...ভাল অভিনেতা হিসেবে মনে হয় না এই সময় কাজে লাগাই?
চান্দ্রেয়ী: আমি কেন, ভাল অভিনয় অনেকেই করেন। তবে ভাল কাজ সব সময় করার চেষ্টা করেছি। তিন বছর টানা টেলিভিশন করার পর ‘ভবিষ্যতের ভূত’ করেছি। ক্যাবারের কস্টিউম পরে নাচব জেনে ৯ কেজি ওজন কমিয়েছিলাম। অতনু ঘোষের ‘বিনিসুতো’য়দারুণ একটা চরিত্র করলাম। ওই রোগা হওয়া আমায় হেল্প করল। আর একটা শুট করছি দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘৮৮৪৮’ছবিতে। সুনীতা হাজরাকে নিয়ে গল্প।ওঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে গিয়েছিল এক সময়।এখন উনি দিব্যি আছেন। এ ছাড়াও ওয়েব সিরিজের মধ্যে দেবালয়ের ‘মন্টু পাইলট’ আর মৈনাক ভৌমিকের ‘ব্রেক আপস্টোরিজ’-এ কাজ করলাম।তবে অনেক সময় ছবি পছন্দ হয়নি বলে ধারাবাহিকেই থেকে গিয়েছি। কোনও আফসোস নেই আমার। প্রচুর পেয়েছি ধারাবাহিক থেকে।আসলে, সব কিছুর একটা সময় থাকে।জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়কে উপভোগ করতে করতে যেতে চাই।
নেপোটিজমের শিকার হয়েছেন?
চান্দ্রেয়ী: নেপোটিজম নিয়ে আমার মত আছে একটা। কোনও স্টার কিডের ছেলেমেয়েকে তাঁর বাবা-মা শুধু লঞ্চ করতে পারেন। তার পরেরটা কিন্তু নিজেকেই করতে হয়। ঋত্বিক রোশনের বাবা তো ওঁকে নাচটা শিখিয়ে দিতে পারবেন না! রণবীর কপূর যা চরিত্র করেছেন তা ওঁর অভিনয়ের জোরেই।আমাকে নিয়েও বলতে পারে লোকে, আমিই কেন একটানা ধারাবাহিকে এত ভাল চরিত্রে অভিনয় করছি? অন্য কেউ তো করতে পারে! ২০ বছর আছি এই ইন্ডাস্ট্রিতে। তার মানে এই নয় যে আমি ২০ বছর ধরেই টানা ভাল কাজ করে আসছি! এ যা জীবিকা আমরা জানি এমন সময় আসতে পারে যে আমি কাজ পাচ্ছি না।প্রস্তুত থাকতে হয়।
লকডাউনে নাকি হোয়াইট ম্যাজিক নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেছেন?
চান্দ্রেয়ী: শুনুন, এই নিয়ে কিছু বলার আছে আমার। আমি বহুদিন হোয়াইট ম্যাজিক অভ্যেস করি। আমাদের দেশে আজও কালাজাদুর ব্যবহারের কথা ভেবে ডাইনি বলে পুড়িয়ে মারা হয় মেয়েদের।গ্রাম থেকে তাড়ানো হয় তাদের। আসল বিষয়টা তা নয়। রেকির মতো হিলিং বলে একটা বিষয় হয়, সেরকমই হোয়াইট ম্যাজিক। যা মানুষকে শারীরিক, মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি দেয়।আসলে পুরুষশাসিত সমাজে মেয়ে হয়ে যদি কেউ ছেলেদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয় তখন তার উপরে অত্যাচার হয়।এটাই মোদ্দা কথা।এই পুরো লকডাউনে আমি হোয়াইট ম্যাজিক নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেছি। মেডিটেড করেছি।এই সময়ে কিন্তু সকলের মেডিটেড করা উচিত। লকডাউন আমার জীবনদর্শন পাল্টে দিয়েছে। আমি এই উইকা করে আমার জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছি।
ছবি- তথাগত ঘোষ
স্টাইলিং- অয়ন হোড়
মেকআপ- অমিত কারাক
হেয়ার স্টাইলিং- রিনা মণ্ডল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy