আবীর-যিশু। ছবি: দেবর্ষি সরকার
ক, খ, গ, ঘ... তার পর শ, স... ক্রমানুসারে বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণ আওড়াতে আওড়াতে দুই তারকা সাক্ষাৎকারে বসলেন। বোঝা গেল, ‘বর্ণপরিচয়’-এর খেলা দিব্যি উপভোগ করছেন। প্রতিবেদকের মুখে প্রশ্নচিহ্ন দেখে আবীর ফুট কাটলেন, ‘‘আমরা তো পরপর সবটা বলতে পারছি। পরিচালক মৈনাক ভৌমিককে পুরোটা জিজ্ঞেস করুন না!’’
থ্রিলার বাই মৈনাক ভৌমিক
সাধারণত ছবির ক্রেডিটে লেখা থাকে, ‘ফিল্ম বাই’ বা ‘ডিরেক্টেড বাই’। ‘বর্ণপরিচয়’-এ লেখা ‘থ্রিলার বাই মৈনাক ভৌমিক’! কেন? যিশুর কথায়, ‘‘কেউ বোধহয় বিশ্বাস করতে চাইছে না মৈনাক থ্রিলারও বানাতে পারে!’’ পাশ থেকে আবীরের মন্তব্য, ‘‘তা ছাড়া এখন তো ট্রেলার দেখেই লোকজন বুঝে যায় কী ছবি, কী বৃত্তান্ত, কোথা থেকে কপি... আমরা সে সবের আগেই ছবিটা কী, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছি।’’ আবীরের ইঙ্গিত সোশ্যাল মিডিয়ার ‘সবজান্তা’দের দিকে। তবে দুই অভিনেতাই পরিচালকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আবীরের কথায়, ‘‘মৈনাক না থাকলে ছবিটা করতে পারতাম না। ছবিতে আমার আর যিশুর দু’জনের চরিত্রই মেন্টালি স্ট্রেসড। ফিজিক্যাল স্ট্রেস তো মারাত্মক! মৈনাক আমাদের দু’জনকে দিয়ে যে কী কী করিয়েছে, তার ঠিক নেই! আর নিজে ডিরেক্টরের চেয়ারে বসে স্যাডিস্টিক প্লেজ়ার নিচ্ছিল।’’
জমি-বাড়ি-ইন্টিরিয়র
ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতা এক বার বলেছিলেন, আগামী পাঁচ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে আপনারা দু’জনেই রাজত্ব করবেন। গত বছর জমি কিনেছেন। এ বছর বাড়ি তৈরি করবেন। তার পরে ইন্টিরিয়র...
এ বার একটু নড়েচড়ে বসলেন আবীর। ‘‘হলে তো খুবই ভাল। তবে এই এক্সপেক্টেশনের প্রভূত চাপও আছে। দারুণ করে ফেলেছি ভাবলে বাড়ি-গাড়ি তো গেলই, জমিও গেল।’’ যিশুর অভিমত, ‘‘এটা হচ্ছে ইজ়িচেয়ারে বসিয়ে দেওয়ার মতো কেস। বেঞ্চে বসাটা জরুরি। পিছনে কাঠটা যেন লাগে, হেলান যেন দিতে না পারি। রিল্যাক্স করার জায়গা নেই।’’
চুক্তি মানেই ঐতিহাসিক
এসভিএফ-এর সঙ্গে আবীর এবং যিশু চুক্তিবদ্ধ। অনুমতি ছাড়া তাঁরা অন্যত্র ছবি করতে পারবেন না... এ নিয়ে টলিউডে যথেষ্ট শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তবে দুই অভিনেতাই এ নিয়ে মুখ খোলেননি। ঘটনাচক্রে সেই চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি বলেই শোনা যায়। আপনাদের সেই ঐতিহাসিক চুক্তি নিয়ে বলবেন একটু? ‘‘আমাদের চুক্তিটা আমরা দু’জন ছাড়া সকলেই জানে। আমরা বরং ওটা নিয়ে না-ই বা বললাম,’’ আবীরের জবাব। সায় দিলেন যিশুও। পাল্টা বললেন, ‘‘আমরা কিন্তু চুক্তির বদলে এ বার একটা ভাল স্ক্রিপ্ট চাই।’’
এসভিএফ-এর সব ভাল ছবিই তো আপনারা পান! আবীরকে ইঙ্গিত করে যিশুর জবাব, ‘‘কোথায়? আবীর পেয়ে গিয়েছে। আমাকে কেউ দিচ্ছেই না।’’ আবীর ফাঁস করলেন যিশুর তেলুগু ছবি করার কথা। আগামী দিনে যিশু ব্যস্ত অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির সিনেমা নিয়ে। আবীর অনুযোগ করলেন, বলিউড বা অন্য জায়গা থেকে তাঁর কাছে কোনও প্রস্তাব নেই। ‘‘এখানে সব নিয়ে বসে আছ তো ভাই! আমি বলিউডে স্ট্রাগল করছি। ও এখানে ইজ়িচেয়ারে বসে আছে,’’ পাল্টা দিলেন যিশু। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবীরের জবাব, ‘‘এক দিন শুনলাম, আমার নাকি বছরে আটটা ছবি। সে দিন বুঝেছিলাম আমি গেলাম!’’
একটি গ্রেফতার এবং তার পর...
শ্রীকান্ত মোহতার গ্রেফতারির পরে সংস্থা আগের তুলনায় ছবি করা কমিয়েছে। এই পরিস্থিতি কি দুই অভিনেতার কেরিয়ারে ছাপ ফেলেছে? ‘‘অঞ্জনদার (দত্ত) ছবিটাই বাতিল হয়েছে। আর তো সবই ঠিক আছে,’’ বললেন আবীর। যিশু জানালেন, তাঁর সরাসরি কোনও সমস্যা হয়নি। এমনিতেও আগামী চার মাস তিনি কলকাতায় নেই। ‘সড়ক টু’ ছাড়াও একটি হিন্দি ছবির কথা চলছে। দু’টি তেলুগু ছবিও আছে। আবীরের স্বগতোক্তি, ‘‘যিশু তেলুগুটাও কী ভাল বলে!’’
বন্ধু-সহকর্মী-প্রতিদ্বন্দ্বী
আবীর আর যিশু দু’জনের প্রতিযোগিতা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলে। এই ছবিতে মুখোমুখি অভিনয় কি সেটা আরও বাড়িয়ে দেবে? আবীর এই বলটা ঠেলে দিলেন যিশুর দিকে। ‘‘হ্যাঁ আমিই বলি। কী আলোচনা হয় আমি জানি না। আর সোশ্যাল মিডিয়া করি না বলে জানতেও পারব না,’’ ফিচেল হেসে যিশুর জবাব। সঙ্গে জুড়লেন, ‘‘তবে এ সব কিছুই ম্যাটার করে না। ছবিটা কেমন হয়েছে সেটাই আসল। লোকের ভাল লাগলে আমি ভীষণ খুশি হব। সিনেমা দেখে আমাদের দু’জনের ভক্তরা যদি মারামারি করে, তা হলেও আপত্তি নেই। কে কাকে গালাগালি করল, তা দিয়ে আমার কেরিয়ার চলবে না।’’ সম্প্রতি দুই মেগাস্টারের ভক্তদের মারামারির ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করলেন?
‘জাতিস্মর’, ‘রাজকাহিনী’তে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন দু’জনে। যিশু বলছিলেন, ‘‘আলাপের বেশি কিছু ছিল না। খালি দেখছিলাম, আবীর পরপর ব্যোমকেশ, ফেলুদা বাগিয়ে নিচ্ছে। তার পর আমি ব্যোমকেশ হলাম। কিছু লোকে ওকে গিয়ে বলল, ‘শুনেছিস, যিশু ব্যোমকেশ হচ্ছে। তুই অনেক বেটার।’ আমাকেও উল্টোটা বলেছে। তার পরে আবীরের সঙ্গে বন্ধুত্ব হল। নন্দিনী আর নীলাঞ্জনার বন্ধুত্ব হল। ‘বর্ণপরিচয়’ করার সময়ে রাত দু’টোয় আমাদের প্যাক-আপ হয়েছে। আমার বাড়ি গিয়ে দু’জনে মিলে ভোর চারটে পর্যন্ত আড্ডা দিয়েছি।’’
তা হলে কি প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই? আবীরের মতে, ‘‘অবশ্যই আছে। কাজের জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে না, তা হয় না। তবে আমরা কেউ কারও বিপক্ষে নই।’’ যিশুরও তাই মত, ‘‘যে চরিত্রটায় আমাকে মানায়, সেটায় আবীরকেও মানায়। আমি শুধু নজর রাখি কোন ডিরেক্টর ওকে নিল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy