‘ইনোলা হোমস ২’ এর দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে নেটফ্লিক্সে হাজির হলেন পরিচালক হ্যারি ব্র্যাডবিয়ার। ছবি: সংগৃহীত।
চারিদিকে শুধু সবুজ, কোথাও ঘাসে ঘেরা, কোথাও আবার মাথা পর্যন্ত উঁচু গাছ। তার মধ্যে দিয়েই ঝড়ের গতিতে সাইকেল নিয়ে ছুটে চলেছে এক তরুণী। নাম ইনোলা হোমস (মিলি ববি ব্রাউন)। ইংরেজি অক্ষরে পিছন থেকে পড়লে তার নাম দাঁড়ায় ‘অ্যালোন’ অর্থাৎ একা। ছোটবেলা থেকে একা একাই কেটেছে তার, মায়ের (হেলেনা বনহ্যাম কার্টার) সঙ্গে। ইনোলার দুই ভাই— শার্লক হোমস (হেনরি কেভিল) এবং মাইক্রফট হোমস, দু’জনেই নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। ছোট ইনোলার জন্য তাঁদের সময়ই বা কোথায়? কিন্তু হঠাৎ ইনোলার মা নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ায় দুই ভাই ছুটে আসে বাড়িতে। ইনোলার জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু হয়। মাকে খুঁজে পেতে ইংল্যান্ডের ব্যস্ততম শহর লন্ডনে পাড়ি দেয় সে। ঘটনাচক্রে, তার পরিচয় হয় লর্ড টুইক্সবরির (লুই পার্ট্রিজ) সঙ্গে। লর্ড টুইক্সবরিকে কে খুন করতে চায়, সেই রহস্যের সমাধান ইনোলা করলেও তার নাম, যশ জুটেছিল শার্লকের ঝুলিতে।
দু’বছর আগে ইনোলা হোমসের সঙ্গে দর্শকের পরিচয় হয় এ ভাবেই। ২০২০ সালে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া ‘ইনোলা হোমস’ ছবির প্রথম পর্বে ইনোলা এবং শার্লক হোমসের যুগলবন্দি সকলের মন জয় করেছিল। আবার কবে হোমস পরিবারকে পর্দায় দেখতে পাওয়া যাবে, সেই অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন দর্শক। সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটল শুক্রবার। এই ছবির দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে নেটফ্লিক্সে হাজির হলেন পরিচালক হ্যারি ব্র্যাডবিয়ার। তবে, দ্বিতীয় পর্বে নয়া রূপে আসে ইনোলা।
স্বাবলম্বী হতে ইংল্যান্ডের বুকেই ডিটেকটিভ এজেন্সি খুলে ফেলে সে। কিন্তু যে শহরে শার্লক হোমসের মতো গোয়েন্দা রয়েছে, সেখানে ইনোলা আদৌ কাজ পাবে কি? একেই বয়স অনেক কম, তার উপর মেয়েমানুষ। অভিজ্ঞতাও শূন্য। আগের কেসের সমাধান করলেও লোকে তার নাম জানে না। সকলে জানে, শার্লকই সেই কেসের সমাধানকর্তা। অবশেষে বাড়িতেই ফিরতে হবে ইনোলাকে। ব্যাগপত্র গোছানোও শেষ। ঠিক সেই সময় হাতে কয়েক মাসের পুরনো খবরের কাগজের ছেড়া টুকরো নিয়ে ইনোলার দফতরে হাজির হয় একটি বাচ্চা মেয়ে। ইনোলা নাকি হারিয়ে যাওয়া মানুষদের খুঁজে বার করে দিতে পারে, তাই তার কাছেই ছুটে এসেছে বাচ্চা বেসি। তার দিদি নিরুদ্দেশ, ইনোলাই একমাত্র খুঁজে দিতে পারে তার দিদিকে। সেই আশা-ভরসা নিয়েই আসা ইনোলার কাছে। বেসির আবির্ভাবের পর গল্পও অন্য দিকে মোড় নেয়। বেসির দিদি সারা চ্যাপম্যান কি নিজেই কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে, না কি তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েছে, সেই সন্ধানে নেমে পড়ে ইনোলা।
গল্পের সুবাদে একে একে ভিড়তে থাকে বহু চরিত্র। তবে চরিত্রের ভিড়ে গল্পের কোথাও খেই হারায়নি। বরং গল্প এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চরিত্র গঠনের দিকেও বেশ জোর দেওয়া হয়েছে। ইনোলার চরিত্র আগের চেয়ে অনেকটাই পরিণত দেখানো হয়েছে। প্রথম পর্বের তুলনায় দ্বিতীয় পর্বে স্ক্রিনে অনেকটা সময় পেয়েছেন হেনরি। ফলে শার্লকের চরিত্রে অভিনয়ে তিনি কতটা দক্ষ, তা প্রমাণ করার সুযোগও পেয়েছেন এই ছবিতে।
ইনোলার মা ইউডোরিয়ার চরিত্রে হেলেনা বনহ্যাম কার্টার, লর্ড টুইক্সবরির চরিত্রে লুই পার্ট্রিজ, এডিথের চরিত্রে সুস্যান ওয়োকোমার অভিনয় যথাযথ। তবে ডেভিড থিউলিসের কথা আলাদা ভাবে বলতেই হয়। ‘হ্যারি পটার’ ফিল্ম সিরিজে সকলের প্রিয় ‘প্রফেসর লুপিন’ এই ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। সারা চ্যাপম্যানের চরিত্রটি গোড়ার দিকে ভাল লাগলেও ছবির অন্তিম পর্বে এসে মনে হয়েছে, চরিত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ রূপে একাত্ম হতে পারেননি অভিনেত্রী হ্যানা ডড। কোথাও যেন মনে হয় তাঁর অভিনয় আরোপিত।
ডিটেকটিভ থ্রিলার ঘরানার ছবি হিসাবে ‘ইনোলা হোমস ২’ বেশ রোমাঞ্চকর, উত্তেজনায় ভরপুর। পুরনো ব্রিটিশ ভাবধারার সঙ্গে মিল রেখে যে ভাবে ছবির প্রোডাকশন ডিজাইন এবং কস্টিউম-মেকআপের খুঁটিনাটি তুলে ধরা হয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। ১৮৮৮ সালে সারা চ্যাপম্যানের উদ্যোগে যে ‘ম্যাচ গার্লস স্ট্রাইক’ হয়েছিল, তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছবির শেষাংশে। যদিও চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে সত্য ঘটনার সঙ্গে কল্পনার মিশ্রণ ঘটেছে বৈকি। এর ফলে, ছবির শেষে একটা নাটকীয়তা ফুটে উঠেছে। ডিটেকটিভ ঘরানার ছবি যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁদের এই দৃশ্যটি একটু চোখে লাগতে পারে। তবে, আসল চমক রয়েছে ছবির একদম শেষে। ছবি শেষ হওয়ার মুহূর্তে এমন এক চরিত্রের আবির্ভাব হয়, যা পরবর্তী পর্বের জন্য দর্শকের উৎসাহ বহু গুণ বাড়িয়ে দিতে বাধ্য।
তবে এই ছবির মূল আকর্ষণ হেনরি কেভিল এবং মিলি ববি ব্রাউন। তাঁদের যুগলবন্দি এই ছবিতেও দর্শককে এক মুহূর্তের জন্যও হতাশ করবে না। কিন্তু যাঁরা প্রথম পর্ব দেখেননি, তাঁরা যদি দ্বিতীয় পর্ব দেখতে শুরু করেন, তবে চরিত্র এবং কথোপকথনের যোগসূত্র বুঝতে গেলে সামান্য হোঁচট খেতে হবে। তবে সব শেষে মানতেই হয়, প্রথমটির মতো ‘ইনোলা হোমস’-এর দ্বিতীয় পর্বটিও দর্শকের মন ভাল করে দেওয়ার মতো ছবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy