এ বার বৈজ্ঞানিক রবীন্দ্রনাথের উপর আলোকপাত করবে অশোক বিশ্বনাথনের তথ্যচিত্র। ফাইল চিত্র।
রবীন্দ্রনাথকে আমরা কবি-সাহিত্যিক-দার্শনিক হিসেবেই দেখি। কিন্তু বিজ্ঞানী হিসেবে কতটা দেখি? বলতে গেলে প্রায় দেখি-ই না। এ বার বৈজ্ঞানিক রবীন্দ্রনাথের উপর আলোকপাত করবে একটি তথ্যচিত্র। নাম ‘দ্য পোয়েট অ্যান্ড হিজ ইউনিভার্স’। পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অশোক বিশ্বনাথন।
কী আছে তথ্যচিত্রে? অশোক বললেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ শেষ বয়সে অর্থাৎ তিরিশের দশকে ‘বিশ্ব পরিচয়’ বলে একটি বই লিখেছিলেন। সেই বইয়ের ছত্রে ছত্রে তাঁর বিজ্ঞান নিয়ে জ্ঞান ধরা পড়ে। কী নেই বইটিতে? বিজ্ঞান নিয়ে অতি উচ্চমার্গের আলোচনা তো বটেই, সঙ্গে পরমাণু থিওরি, রেডিওঅ্যাক্টিভিটি, পিরিওডিক টেবল, অণু-পরমাণু নিয়ে আলোচনা— সব বিষয় ধরা আছে। শুধু উপর-উপর জ্ঞান নয়, একেবারে বিষয়ের ভিতরে গিয়ে এই লেখা। এবং তিনি এটি লেখেন সম্পূর্ণ তাঁর বোধ থেকে।’’
এ ছাড়া বিজ্ঞানের ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথের উপর তাঁর বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের ভূমিকা অনস্বিকার্য। ছোটবেলায় ছেলেকে তিনি ডালহৌসি নিয়ে গিয়েছিলেন। খোলা আকাশের নীচে অ্যাস্ট্রোনমি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের জ্ঞান উন্মোচন করেন। সৌরজগতের নানা রহস্যময় দিক সম্বন্ধে কবি অবগত হন।
রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর সাহচর্যও পেয়েছিলেন। কবি খাতায়-কলমে, সে অর্থে শিক্ষিত বিজ্ঞানী ছিলেন না। কিন্তু বিজ্ঞান সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান ছিল সম্যক। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর কবি অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সান্নিধ্যে আসেন। দু’জনের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয় বিজ্ঞান নিয়ে। বিশেষ করে পারসেপশন— কী ভাবে এই প়ৃথিবীকে আমরা পর্যবেক্ষণ করি, তা নিয়ে বহু আলোচনা হয়। দু’জন যে সব বিষয়ে এক মত ছিলেন তা নয়। সে সব ধরা পড়েছে ওই তথ্যচিত্রে।
এর পর কলকাতার সায়েন্স কলেজে এক জন সাহেবকে দেখা যায়। তিনি হলেন বিখ্যাত জার্মান অঙ্কবীদ এবং দার্শনিক হাইজেনবার্গ। তাঁর দুনিয়া তোলপাড় করা অনিশ্চয়তা থিওরি বিখ্যাত। তিনি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে চান। জোড়াসাঁকোতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। বহু আলোচনা হয় দু’জনের মধ্যে।
অশোক বললেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ তাঁর বহু গানের মধ্যেও বিজ্ঞান এনেছেন। যেমন তাঁর ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ পুরোপুরি একটি অ্যাস্ট্রনমিক্যাল গান। কিন্তু এই বিজ্ঞান যদি রোবট তৈরি করে ফেলে তার বিরুদ্ধে ছিলেন কবি। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ‘রক্তকরবী’র রাজা। তথ্যচিত্রে সৌমিত্র-কন্যা পৌলমী চট্টোপাধ্যায় ‘রক্তকরবী’র এর কিছু অংশ অভিনয় করেছেন।’’
২৫-মিনিটের এই তথ্যচিত্রে রয়েছে এই বৈজ্ঞানিক রবীন্দ্রনাথকে খোঁজারই রসদ। কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান প্রসার-এর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ এটি তৈরি করতে সাহায্য করেছে। সঙ্গে ছিল এসআরএফটিআই। অশোক ৬ বছর এসআরএফটিআই-এর ডিন ছিলেন। গত অক্টোবরে ডিনের পদ ছেড়ে এখন অধ্যাপক হিসেবে আছেন সংস্থায়।
এ ছাড়া সত্যেন বোসের ছাত্র পার্থ ঘোষ এবং বিকাশ সিংহ তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করতে সাহায্য করেছেন। অশোকের কথায়, ‘‘রবীন্দ্রনাথের বহু লেখা রিক্রিয়েট করতে হয়েছে। এ ছাড়া আছে হাইজেনবার্গের লেখা, তাঁর পাণ্ডুলিপি এবং স্থিরচিত্র আমরা ব্যাহার করেছি। আমরা শান্তিনিকেতন, ডালহৌসি, জোড়াসাঁকোতে শ্যুটিং করেছি। আপাতত রবীন্দ্র ভবনে একটি বেসরকারি স্ক্রিনিং হয়েছে। বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে এটি পাঠানোর ব্যবস্থা চলছে।’’
এ ছাড়া, সাহিত্য আকাদেমির সমর্থনে সমরেশ মজুমদারকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছেন অশোক। শীর্ষেন্দু মুখ্যোপাধ্যায়ের উপরও একটি তথ্যচিত্র লাস ভেগাসের একটি উৎসবে দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর তৈরি ‘বাদল সরকার এবং বিকল্প থিয়েটার’ গত বছরের গোয়ার ইফিতে ভারতীয় প্যানোরামা এবং কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়ছে। ইফিতে সেটি ছিল বছরের সেরা ২০টি ছবির অন্তর্গত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy