Emraan Hashmi's Journey Has Always Been Surrounded by Controversies dgtl
bollywood
মেন্টর মহেশ ভট্টের সঙ্গে অশান্তি, এক সময় ১০ কোটি পারিশ্রমিক পেতেন পরিচালক হতে চাওয়া ‘সিরিয়াল কিসার’
এই ছবিতে অভিনয়ের আগে জ্যোতিষীর পরামর্শ নেন ইমরান। জ্যোতিষীর কথা মতো নিজের নাম পাল্টে করেন ‘ফারহান হাশমী’। সেই নামেই তিনি অভিনয় করেন ‘ফুটপাথ’-এ। তবে এ ছবিতে তিনি ছিলেন সহনায়কের ভূমিকায়। নায়ক নায়িকা ছিলেন আফতাব শিবদাসানি এবং বিপাশা বসু।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ১০:৩৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৬
জনপ্রিয়তায় পাল্লা দিতেন প্রথম সারির তারকাদের সঙ্গে। ১৭ বছর ধরে বলিউডে নিজের ফ্যান ফলোয়িং ধরে রেখেছেন ‘সিরিয়াল কিসার’ ইমরান হাশমী। কিন্তু কী এমন হল যে, এক সময় ছবিপ্রতি ১০ কোটি পারিশ্রমিক নেওয়া নায়ক পরে অনেকটাই কম পারিশ্রমিকে কাজ করতে রাজি হয়ে যান?
০২২৬
ইমরানের জন্ম ১৯৭৯ সালের ২৪ মার্চ, মুম্বই শহরে। তাঁর ঠাকুরদা সাংবাদিক সৈয়দ শওকত হাশমী দেশভাগের পরে পাকিস্তানে চলে যান। কিন্তু ঠাকুমা মেহরবানু মহম্মদ আলি রয়ে যান ভারতেই, ছেলে সৈয়দ আনোয়ার হাশমীকে নিয়ে।
০৩২৬
মেহরবানু ছিলেন হিন্দি সিনেমার নায়িকা। ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর পরিচয় ছিল পূর্ণিমা। ওই পরিচয়েই অভিনয় করতেন তিনি। তিনি ভারতে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। প্রযোজক-পরিচালক ভগবান দাস বর্মা ছিলেন পূর্ণিমার দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী।
০৪২৬
ইমরানের বাবা একটি মাত্র ছবিতে অভিনয় করেছেন। ১৯৬৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল সেই ছবি ‘বাহারোঁ কি মঞ্জিল’। তবে ইমরান তাঁর ঠাকুমার মতো অভিনয়কেই পেশা করেন। পারিবারিক দিক দিয়ে ইমরান হলেন পরিচালক মোহিত সুরী ও মহেশ ভট্টের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।
০৫২৬
মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ইমরানের ইচ্ছে ছিল অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করার। আগ্রহ ছিল সম্পাদনা ও পরিচালনায়। বলিউড জুড়ে আত্মীয় ছড়িয়ে থাকলেও ইমরানের সে সময় অভিনয় করে তারকা হওয়ার কোনও ইচ্ছে ছিল না।
০৬২৬
‘রাজ’ ও ‘কসুর’ ছবিতে তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন। সে সময় মেন্টর মহেশ ভট্ট তাঁকে অভিনয়ে মন দিতে বলেন। মহেশের কথা ফেলতে পারেননি ইমরান। ২০০৩ সালে বিক্রম ভট্টের থ্রিলার ‘ফুটপাথ’-এ আত্মপ্রকাশ নায়ক ইমরানের।
০৭২৬
এই ছবিতে অভিনয়ের আগে জ্যোতিষীর পরামর্শ নেন ইমরান। জ্যোতিষীর কথা মতো নিজের নাম পাল্টে করেন ‘ফারহান হাশমী’। সেই নামেই তিনি অভিনয় করেন ‘ফুটপাথ’-এ। তবে এ ছবিতে তিনি ছিলেন সহনায়কের ভূমিকায়। নায়ক নায়িকা ছিলেন আফতাব শিবদাসানি এবং বিপাশা বসু।
০৮২৬
কিন্তু প্রথম ছবিতে নজর কাড়তে না পেরে আবার পুরনো নামেই ফিরে যান ইমরান। তবে নামের বানানে যোগ করেন বাড়তি ‘এ’ অক্ষর। ২০০৪ সালে মুক্তি পায় অনুরাগ বসুর পরিচালনায় ‘মার্ডার’। এই ছবিতে মল্লিকা শেরাওয়াতের সঙ্গে ইমরানের জুটি ছিল সুপারহিট। বক্স অফিসে এই ছবির দুর্দান্ত সাফল্য বলিউডে ইমরানের লম্বা ইনিংস নিশ্চিত করে।
০৯২৬
পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে আসা ইমরান ‘মার্ডার’-এর দৌলতে রাতারাতি তারকা হয়ে যান। তবে এই ছবির নায়িকা মল্লিকা শেরাওয়াতের সঙ্গে বাস্তব জীবনে সম্পর্ক ভাল ছিল না ইমরানের। তাঁরা এর পরে আর একসঙ্গে অভিনয়-ই করেননি। প্রকাশ্যেই একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন।
১০২৬
কেরিয়ারে সূত্রপাত ভাল হলেও মাঝে মাঝেই ইমরানের নামের পাশে বসেছে ব্যর্থতার উদাহরণ। ২০০৩ থেকে ২০০৮ অবধি প্রায় পনেরোটি ছবিতে অভিনয় করেন ইমরান। তার মধ্যে মাত্র পাঁচটি ছবি সফল হয়েছিল।
১১২৬
‘মার্ডার’-এর পাশাপাশি ‘জহর’, ‘আশিক বানায়া আপ নে’, ‘আওয়ারাপন’ সফল হয়েছিল। কিন্তু পাশাপাশি ‘গুড বয় ব্যাড বয়’, ‘দ্য ট্রেন’, ‘কিলার’-এর মতো ছবি মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তত দিনে নিজের ফ্যান ফলোয়িং বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। তা ছাড়া তাঁর ছবির গান সুপারহিট হতই। ফলে ব্যর্থ ছবিও জনপ্রিয়তা পেয়ে যেত।
১২২৬
কিন্তু ক্রমশ তাঁর নামের সঙ্গে মহেশ ভট্টের ছায়া জড়িয়ে গিয়েছিল। সমালোচকরা বলতে থাকেন, ভট্ট-ক্যাম্পের বাইরে তিনি কিছু করতে পারবেন না। ‘সিরিয়াল কিসার’ পরিচয়ও কয়েক বছর পর থেকে অসহ্য লাগতে শুরু করল ইমরানের। বলিউডে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদে মরিয়া হয়ে উঠলেন তিনি।
১৩২৬
২০০৮ সালে ইমরানের ‘জন্নত’ দুরন্ত সাফল্য পায়। তার আগে অবধি তাঁর ছবি ১২-১৩ কোটি টাকার ব্যবসা করত। ‘জন্নত’-এ সেই অঙ্ক পৌঁছল ৩০ কোটিতে! ‘টশন’ ছবির জন্য ‘জন্নত’-এর মুক্তি পিছিয়ে দিয়েছিলেন মহেশ ভট্ট। ভেবেছিলেন বড় বাজেটের ছবির সঙ্গে তাঁর ছবি পাল্লা দিতে পারবে না।
১৪২৬
কিন্তু বাস্তবে ফল হল উল্টো। আইপিএল-এর মরসুমে ‘টশন’ হলে দর্শক টানতে পারল না। কিন্তু আইপিএল-কে টেক্কা দিয়েই সুপারহিট হল ‘জন্নত’। ইমরানের কেরিয়ারকে এই ছবি নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছিল।
১৫২৬
২০১১-এ পৌঁছে মহেশ ভট্টের সঙ্গে তিক্ততা শুরু হল ইমরানের। তিনি মহেশের কথা অমান্য করে অভিনয় করেছিলেন একতা কপূরের ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বই’ ছবিতে। ছবিটি হিট করেছিল। কিন্তু মহেশ ক্ষুব্ধ হন ইমরানের উপর। এই ছবি দিয়ে ইমরান প্রমাণ করেন তিনি ভট্ট-শিবিরের বাইরেও সফল হতে পারেন।
১৬২৬
এর পর ইমরানের জন্য অপেক্ষা করেছিল সাফল্যের দীর্ঘ যুগ। ‘দিল তো বাচ্চা হ্যায় জি’, ‘মার্ডার টু’, ‘ডার্টি পিকচার’, ‘জন্নত টু’ বক্স অফিসে সফল হয়। সে সময় অন্য তারকাদের কড়া প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন ইমরান। বিহার ও মধ্যপ্রদেশে তাঁর ছবির জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া।
১৭২৬
সময় বুঝে নিজের পারিশ্রমিক এক লাফে ছবি পিছু ১০ কোটি টাকা করে দেন ইমরান। সে সময় শাহরুখ-সলমন-আমির-অক্ষয়-অজয়ের মতো তারকা ছবি পিছু ২৮ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিতেন। রণবীর ও শাহিদ কপূরের পরে ইমরান সে সময় ছিলেন তৃতীয় নায়ক, যিনি প্রতি ছবিতে দশ কোটি টাকা পারিশ্রমিক ধার্য করেছিলেন।
১৮২৬
‘সিরিয়াল কিসার’ পরিচয় মুছতে মরিয়া ইমরান এ বার নায়কের পাশাপাশি চরিত্রাভিনয়ও শুরু করলেন। ‘সাংহাই’ ছবিতে তাঁর কাজ প্রশংসিত হয়। কিন্তু এই ছবি বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি। এখান থেকেই শুরু তাঁর কেরিয়ারের ব্যর্থতার ধাপ।
১৯২৬
‘উংলি’, ‘ঘনচক্কর’, ‘হমারি অধুরি কহানি’-র মতো ছবি প্রত্যাশা জাগিয়েও বক্স অফিসে হতাশ করে। ক্রমশ ইমরানের কাছে সুযোগ কমতে থাকে। বাধ্য হয়ে তিনি পারিশ্রমিক কমিয়ে মাত্র তিন কোটিতে অভিনয় করেন ‘আজহার’ ছবিতে। কারণ তখন ভাল চরিত্রের খোঁজে ছিলেন তিনি। কিন্তু সে বায়োপিকও ব্যর্থ হয়।
২০২৬
যে ইমরানের ছবি পর পর হাউসফুল হত, সেখানে এমন হল তাঁর ছবির শো বাতিল করতে হল। ‘দ্য বডি’ দেখতে এত কম দর্শক হত, যে ছবিটির শো বাতিল করা হয় শেষ অবধি। কেরিয়ারের পাশাপাশি ঝড়ে টালমাটাল হয়ে ওঠে ইমরানের ব্যক্তিগত জীবনও।
২১২৬
সাড়ে ছ’বছরেরও বেশি সম্পর্কের পরে ২০০৬-এ ইমরান বিয়ে করেন তাঁর প্রেমিকা পরভিনকে। ২০১০-এ জন্ম হয় একমাত্র সন্তান, আয়ানের। চার বছর পরে ধরা পড়ে একরত্তি আয়ান ক্যানসার আক্রান্ত। শুরু হয় নতুন যুদ্ধ।
২২২৬
২০১৯ সালে যুদ্ধজয়ী হন ইমরান হাশমী ও তাঁর স্ত্রী। তাঁদের ছেলেকে ‘ক্যানসারমুক্ত’ বলে ঘোষণা করা হয়। ক্যানসারের বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রসারে বলিউডের অন্যতম মুখ এখন ইমরান হাশমী।
২৩২৬
ব্যক্তিগত জীবনের ঝড় সামলে নিলেও কেরিয়ারের ভাঙা পাল আর জোড়া লাগেনি। মহেশ ভট্টের শিবির থেকে তিনি বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তার পরেও মহেশের ‘মিস্টার এক্স’ ছবিতে সই করেছিলেন ইমরান। কিন্তু এই ছবি ঘিরে দু’জনের তিক্ততা প্রকাশ্যে চলে আসে।
২৪২৬
মহেশের অভিযোগ ছিল, ইমরান তাঁর ছবির জন্য বেশি সময় দিচ্ছেন না। কারণ তিনি ভুলে গিয়েছেন মহেশ-ই তাঁকে তারকা বানিয়েছেন। পাল্টা জবাব দেন ইমরানও। বলেন, মহেশই তাঁকে শিখিয়েছেন সফর যা-ই হোক না কেন, ভাবতে হবে কাজের ফল নিয়ে। সেটাই করছেন তিনি।
২৫২৬
সমালোচকদের মতে, ইমরান হাশমী লম্বা রেসের ঘোড়া। ষোলোটি ছবি ব্যর্থ হওয়ার পরেও তিনি মিলিয়ে যাননি ইন্ডাস্ট্রি থেকে। এখনও কাজ করছেন তিনি। আগের ছবি ‘দ্য বডি’ ব্যর্থ হওয়ার পরেও তিনি অভিনয় করছেন অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে, আসন্ন ‘চেহরা’ ছবিতে।
২৬২৬
বার বার হারিয়ে যাওয়ার মুখে দাঁড়িয়েও ইমরান হাশমী বুঝিয়ে দেন তিনি জীবনযুদ্ধে হারতে শেখেননি।