চলতি বছরে একাধিক বার দেব এবং এসভিএফ প্রযোজিত ছবি বক্স অফিসে মুখোমুখি লড়াইতে নামবে। ছবি: সংগৃহীত।
রাজ্যে গরমের তেজ যেমন বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে বাংলা ছবির বাজারের উত্তাপ। ইতিমধ্যেই পুজোর বেশ কিছু ছবির ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। বছরের শেষে কোন কোন বড় ছবি আসতে পারে তারও ইঙ্গিত মিলেছে। তালিকায় চোখ রাখলে নিশ্চিন্তে বলা যায়, বছরভর বাংলা ছবির লড়াই!
কিন্তু এখনও পর্যন্ত যে যে ছবির ঘোষণা হয়েছে, সে দিকে চোখ রাখলে প্রতিপক্ষ কিন্তু সেই পরিচিত দুই শিবির— এসভিএফ এবং দেব। একাধিক সময়ে দুই পক্ষের মতানৈক্য নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়েছে টলিপাড়ায়। আবার এসভিএফ-এর ছবিতেও দেখা গিয়েছে দেবকে। চলতি বছরের বাংলা ছবির রিলিজ় স্লেটের দিকে একটু চোখ রাখলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে।
সম্প্রতি দেব ব্যোমকেশ রূপে তাঁর ফার্স্টলুক প্রকাশ করেছেন। আগামী অগস্ট মাসে স্বাধীনতা দিবসের সময় ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা। ওই একই সময়ে এসভিএফ প্রযোজিত ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘বগলা মামা’ ছবিটি আসতে পারে বলে খবর। ছবির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও চলতি মাসেই রেইকি শুরু হবে বলে জানা যাচ্ছে। দেব আগেই ঘোষণা করেছিলেন তিনি পুজোতে ‘বাঘাযতীন’ নিয়ে আসছেন। পুজোতেই এসভিএফ-এর অধীনে সৃজিত আবার নিয়ে আসছেন ‘দশম অবতার’। বছরের শেষে প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরীর সঙ্গে জুটি বেঁধে দেব নিয়ে আসবেন ‘প্রধান’ ছবিটি। ‘টনিক’-এর পর আরও এক বার দেব এবং পরান বন্দ্যোপাধ্যায় জুটিকে এই ছবিতে দেখবেন দর্শক। টলিপাড়া সূত্রে খবর, বড়দিনেই মুক্তি পেতে পারে মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত ছবি ‘কাবুলিওয়ালা’। এই ছবিরও প্রযোজক এসভিএফ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তা হলে প্রতিযোগিতার পথেই কি এগোতে থাকবে বাংলা ছবি? একসঙ্গে একাধিক ‘বড়’ ছবি মুক্তি পেলে তা যে ছবির ব্যবসার পক্ষে শুভ নয়, এ কথা আগেও বহু বার নজরে এসেছে। হয়তো বিষয়টার আঁচ পেয়েই এসভিএফ-এর অন্যতম কর্ণধার মহেন্দ্র সোনি সোমবার একটি টুইট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘আসুন বাংলা ছবির প্রত্যাবর্তনকে উদ্যাপন করা যাক। বেশিসংখ্যক ছবি ভাল ব্যবসার অর্থ বাংলা ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি।’’ এরই সঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘‘উৎসবের দিনে ছবি মুক্তি পাওয়ার অর্থ, দর্শকের কাছেও সুযোগ বাড়বে। এতে এক জনের ব্যবসা মার খেলেও প্রযোজক কিন্তু সামলে নেবেন।’’ এরই সঙ্গে তাঁর সতর্কবাণী, ‘‘ভাল দিকটা দেখা উচিত, ইতিবাচক ভাবনাই কাম্য।’’
ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন ছবির প্রস্তুতিতে দম ফেলার সময় পাচ্ছেন না। বিষয়টাকে কোনও ‘লড়াই’ হিসাবে দেখতে রাজি নন তিনি। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘তা হলে এক জন প্রযোজক কবে ছবি রিলিজ় করবেন? বছরে তো হাতে গুনে ভাল কয়েকটা দিন। যে কোনও প্রযোজক সেই দিনেই ছবি রিলিজ় করতে চাইবেন। কারণ উৎসবের দিনে মানুষ ছবি দেখেন বেশি।’’ তা হলে যে দেব বনাম এসইভএফ-এর লড়াইয়ের কথা বলা হচ্ছে। ‘গোলন্দাজ’-এর পরিচালকের কথায়, ‘‘এত ছোট পরিসরে বিষয়টাকে ভাবতে চাই না। যে কোনও ইন্ডাস্ট্রির প্রযোজক তো উৎসবের দিন দেখেই ছবি রিলিজ় করেন।’’
ব্লকবাস্টার ছবি ‘প্রজাপতি’ এখনও প্রেক্ষাগৃহে চলছে। সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে ছবির পরিচালক অভিজিৎ সেন বললেন, ‘‘ছবি ভাল হলে দর্শক দেখবেন। ‘টনিক’-এর সঙ্গে ‘পুষ্পা’ মুক্তি পেয়েছিল। ‘প্রজাপতি’র স়ঙ্গে গত ডিসেম্বরে আরও দুটো বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছিল। দর্শক তো ইচ্ছেমতো ছবি দেখেছেন।’’ বড়দিনে ছবিমুক্তি প্রসঙ্গে ‘প্রধান’-এর পরিচালক বললেন, ‘‘এর মধ্যে মাথা ঘামানোর মতো কিছু নেই। ১ জানুয়ারি ঘোষণা করা হয়েছিল আমরা বড়দিনে আসছি। তা ছাড়া ‘টনিক’ এবং ‘প্রজাপতি’ও তো বড়দিনে মুক্তি পেয়েছিল।’’ তা হলে যে প্রতিযোগিতার কথা বার বার বলা হচ্ছে? অভিজিৎ বললেন, ‘‘অতিমারির পর বাংলা ছবি যে আবার খুব ভাল ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সেটাই তা ভাল কথা। দর্শকের কাছে ছবির সুযোগ বাড়ছে। ইন্ডাস্ট্রির মঙ্গল। এর মধ্যে কোনও সম্মুখসমর নেই!’’
‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবির আউটডোর সেরে সম্প্রতি শহরে ফিরেছেন পরিচালক অরুণ রায়। দেব বা এসভিএফ এর দ্বৈরথকে তিনি ইতিবাচক দেখতে চাইছেন। ‘বাঘাযতীন’ ছবির পরিচালক বললেন, ‘‘একের পর এক নতুন পদক্ষেপ নিয়ে দেব এখন প্রযোজক হিসেবে নিজের স্বতন্ত্র ঘরানা তৈরি করেছে। ইন্ডাস্ট্রিতে বড় প্রযোজক মানে তো এসফিভএফ এবং দেব। তাই তারা বার বার মুখোমুখি হচ্ছে।’’ বিষয়টার মধ্যে কোনও ‘রাজনীতি’ খুঁজতে চাইছেন না পরিচালক। অরুণ বললেন, ‘‘মানুষ ছবি দেখছেন, বাংলা ছবির বাজারটা আরও বাড়ছে এটাই বড় কথা নয় কি? ভাল ছবি ঠিক তার দর্শক খুঁজে নেবেন। এর বেশি কিছু নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy