Advertisement
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Raj Chakraborty

আরজি কর-কাণ্ডকে সামনে রেখে কিছু মানুষ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে নিশানা করছেন: রাজ চক্রবর্তী

মুক্তি পেয়েই ‘বাবলি’র আয় লক্ষাধিক। “এত কিছুর পরেও দর্শক ছবি দেখেছেন”, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন পরিচালক রাজ।

Image Of Raj Chakraborty

(বাঁ দিকে) রাজ চক্রবর্তী। ‘বাবলি’ ছবির পোস্টার (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৪ ১৬:০৬
Share: Save:

স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পেল রাজ চক্রবর্তীর ছবি ‘বাবলি’। খবর মিলেছে, প্রথম দিনেই ছবির আয় লক্ষাধিক। কমবেশি ৮৫ শতাংশ প্রেক্ষাগৃহে ‘হাউসফুল’ বোর্ড ঝুলেছে। তৃপ্তির হাসি পরিচালক, অভিনেতা শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, রেশমি সেন, সৌরসেনী মৈত্র— প্রত্যেকের মুখে। আনন্দবাজার অনলাইনকে পরিচালক রাজ বলেছেন, “আরজি কর-কাণ্ডের কারণে আমরা কোনও রকম প্রচারমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করিনি। তার পরেও এই পরিস্থিতিতে দর্শক প্রেক্ষাগৃহে এসেছেন। ছবি দেখেছেন। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।”একই সঙ্গে অনুযোগও শোনা গিয়েছে বিধায়ক-প্রযোজক-পরিচালকের কণ্ঠে। তাঁর কথায়, “নারকীয় ঘটনাকে সামনে রেখে কিছু মানুষ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে সফ্‌ট টার্গেট বানাচ্ছেন। এটা কাম্য নয়। প্রত্যেকে নিজের মতো করে ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। একজন ব্যক্তির সঙ্গে অপরের প্রতিবাদের ভাষা না মিললেই তাঁকে আক্রমণ করার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। খুব খারাপ লাগছে দেখে।” তাঁর মতে, বিনোদন দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির ভবিষ্যৎ সবচেয়ে বেশি অনিশ্চিত। ছবি তৈরির সময় বোঝার উপায় নেই, ছবিটি বাণিজ্যিক দিক থেকে সফল হবে কি না। একই ভাবে এই পেশায় ছবি মুক্তির আগে সাফল্য নিয়েও কেউ কোনও আশা করেন না।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। তাই প্রচারের পাশাপাশি প্রিমিয়ারও বাতিল করেছে টিম ‘বাবলি’। ছবিমুক্তির পর অভিনেতাদের নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দর্শকের মুখোমুখি হননি প্রযোজক-পরিচালক। রাজ জানিয়েছেন, তার পরেও তাঁর কাছে ব্যক্তিগত ভাবে প্রচুর ফোন এসেছে। এমন দমচাপা পরিস্থিতিতে তাঁর অন্য রকম প্রেমের গল্প একটু হলেও টাটকা অক্সিজেন ছড়াচ্ছে, এমনই বক্তব্য বহু জনের। প্রয়াত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর গল্প ‘বাবলি’ যাঁরা পড়েছেন, তাঁরাও সাধুবাদ জানিয়েছেন তাঁকে। রাজের আশা, শুক্রবার এসইউসিআই-এর ডাকা বন্‌ধ, কাজের দিন— সব মিলিয়ে তুলনায় দর্শকের সংখ্যা কমতে পারে। আবার বাড়বে সপ্তাহান্তে, শনি-রবিবার। এ-ও জানান, এই অলিখিত নিয়ম প্রত্যেক সপ্তাহে প্রতিটি মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সঙ্গেই ঘটে। কেবল বাংলা ছবি বা তাঁর ছবির সঙ্গে নয়।

তার পরেও ‘বাবলি’ দেখানো বন্ধ করে দেওয়া হোক, এমন বার্তা ছড়িয়েছে টলিউডে, দাবি রাজের। তিনিও পাল্টা প্রশ্ন রেখেছেন, “স্বাধীনতা দিবসের দিন কোনও রেস্তরাঁ কি বন্ধ ছিল? মানুষ কি পথে নামেননি? তা হলে আমার ছবি নিয়ে কেন এত বক্তব্য?” নিজের বক্তব্যের সপক্ষে তাঁর যুক্তি, প্রতিবাদ থাকবে। তারই সঙ্গে থাকবে বাকি জীবনযাপনও। এই প্রতিবাদ প্রত্যেকের অন্তরে প্রতি দিন লালিত হবে। প্রকাশ ঘটবে। পাশাপাশি, দিনযাপনের বাকি উপকরণেরও আবশ্যিকতা থাকবে। রাজ উদাহরণ দিয়ে বলেন, “খুব ক্লান্ত লাগলে আমরা বই পড়ি বা গান শুনি। একই ভাবে ছবি দেখতেও ভালবাসি। সেই অনুভূতি থেকেই দর্শক প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবি দেখছেন। এগুলো না থাকলে আমরা সুস্থ চিন্তা করতে পারব না। আমাদের মধ্যে জমে থাকা বিষ সরিয়ে দেয় বই, গান বা ছায়াছবি।” তাঁর অনুরোধ, সব কিছুর সঙ্গে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি, অভিনেতা-কলাকুশলী-পরিচালক-প্রযোজকদের জড়িয়ে দেওয়া ঠিক নয়।

রাজের আরও অভিমান, “বাংলা বিনোদন দুনিয়ার সমস্ত মানুষ প্রথম দিন থেকে পথে নেমে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সেই খবর যত না লেখা হচ্ছে তার থেকে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে আলিয়া ভট্ট, করিনা কপূর খানের কথা।” এই প্রসঙ্গে উঠে আসে অভিনেত্রী সোহিনী সরকারের বক্তব্যও। তাঁকে জানানো হয়, অভিনেত্রী নিজেই চাইছেন না, বিনোদন দুনিয়ার শিল্পীরা বেশি ক্যামেরার সামনে আসুন। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের আন্দোলন তারকাদের উপস্থিতিতে যেন চাপা না পড়ে যায়। এ বিষয়ে রাজের মত, “সোহিনীকে সম্পূর্ণ ভুল বোঝা হচ্ছে। উনি বলতে চেয়েছেন, আন্দোলনরত চিকিৎসকদের বক্তব্যের পাশাপাশি তারকাদের বক্তব্য প্রচারিত হোক। শুধুই তারকাদের বক্তব্য যেন প্রাধান্য না পায়। দিনের শেষে অভিনেতারাও কিন্তু রক্তমাংসের মানুষ।” তিনি এ-ও জানাতে ভোলেননি, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মানুষ ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন! কিছু পুরুষ মৃতার উদ্দেশে কুকথা লিখছে সমাজমাধ্যমে। তাঁর মতে, এগুলো বন্ধ হলে সমাজ সুস্থ হবে। সিনেমা দেখানো বন্ধ হলে নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE