সুব্রতকে শেষ বিদায়ে মুনমুন সেন।
১৯৮৮ সাল। সুব্রতদা তখন কংগ্রেসে। যার কথায় বাংলার রাজনীতি সে সময়ে অনেকটাই নড়াচড়া করে। এমন দুঁদে রাজনীতিবিদই ক্যামেরার সামনে একেবারে বাধ্য ছাত্র। যা বলছি, একেবারে অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন। সেই ওঁর প্রথম ধারাবাহিক। ‘চৌধুরী ফার্মাসিউটিক্যালস’। পরিচালক হিসেবে আমারও।
দু’জনেই নতুন। এবং সুব্রতদা ঘোরতর নার্ভাস। দূরদর্শনে ওই ধারাবাহিকের নায়িকা মুনমুন সেন তখন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। নিয়মিত বম্বে যাতায়াত করছেন, ছবি করছেন। ধারাবাহিকে সুব্রতদা এক ওষুধ সংস্থার কর্তা, তার মালিক মুনমুন। সুব্রতদার হাত দিয়েই পর্দা ফাঁস হবে এক ওষুধ কেলেঙ্কারির। এক দিন সুইমিং পুলের এক দৃশ্যের শ্যুটিং হবে। সুব্রতদা তো ঘেমেনেয়ে একশা! একে সাঁতারপোশাকে সকলের সামনে, তাতে সেই সময়ের আন্দাজে রীতিমতো ‘সাহসী’ দৃশ্য। শেষমেশ মুনমুনই হাল ধরেছিলেন। তিনিই বুঝিয়ে সুঝিয়ে, প্রায় পাখি পড়া করে সুব্রতদাকে ওই দৃশ্যে অভিনয়ে স্বচ্ছন্দ করে তোলেন। দলবল মিলে এমনিতেই তখন পিকনিকের মেজাজে শ্যুটিং চলত। সেটাও খানিকটা ওঁর ভয় বা উদ্বেগ কাটিয়ে দিয়েছিল।
রাজনীতির জগতে সুব্রতদা তখন বড়সড় নাম। তাঁকে অভিনয়ে নিয়ে এলাম কেন? বড় পর্দার অভিনেতারা তখন ছোট পর্দায় অভিনয় করতেন না। ছোট পর্দার তৎকালীন অভিনেতাদের কাউকে ওই চরিত্রে ঠিক বসাতে পারছিলাম না। তখন ঠিক হল, অন্য জগতের কাউকে এই চরিত্রে নিয়ে আসা যাক। সুব্রতদা আমাদের পারিবারিক বন্ধু। অতএব, চলো সোজা তাঁর কাছে! গল্প শুনে সুব্রতদাও রাজিই হলেন। তবে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড ও সরকারি অনুমতি সাপেক্ষে।
তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী। অনুমতি দিলেন তিনি। সুব্রতদাও পা রাখলেন অভিনয়-জগতে। তবে হ্যাঁ, রাজনীতির ময়দানে ওঠা প্রচুর বিতর্ককে সঙ্গী করেই। সে জন্যই পরে কখনও বোধহয় আর সুব্রতদা অভিনয়ের কথা ভাবেননি। এক বার শখ হয়েছিল। করে ফেলেছিলেন। ব্যস!
চরিত্রটা তৈরি করেছিলাম বাস্তবের সুব্রতদার মতোই। ধুতি-পাঞ্জাবি, ওঁর মতোই চলনবলন। সাংবাদিকদের সঙ্গে বা সভামঞ্চে যেমন ভঙ্গিতে কথা বলে জমিয়ে দেন, ক্যামেরার সামনেও ঠিক তাই করবেন। বলেও দিয়েছিলাম, তুমি একেবারে নিজের মতো হাঁটবে, চলবে, কথা বলবে। যাতে ওঁর পক্ষে কাজটা সহজ হয়। সুব্রতদার ভাঙা গলা নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছিল বটে। পর্দায় ডায়লগ বোঝা যেত না মাঝেমধ্যে। বার দুয়েক ডাবিংয়ের চেষ্টা করেওছিলাম। তবে ওঁর গলাটা তো মানুষ চেনে। সেটাকে বদলে ফেলাটা সমস্যার হতো। সেই ভেবেই ওঁর নিজের গলাতেই ডায়লগ রেখে দিই।
রাজনীতির ময়দানের এমন প্রতাপশালী মানুষ মুখ দেখাবেন টেলিভিশনের পর্দায়। আর মানুষ দেখবেন না, তা-ও কি হয়! ‘চৌধুরী ফার্মাসিউটিক্যালস’ যে দর্শক টানবে, সেটা আগেই আন্দাজ করেছিলাম খানিকটা। তখন টেলিভিশন চ্যানেল বলতে গোটা দুই, তাতে হাতে গোনা ধারাবাহিক। কিন্তু এই ধারাবাহিক যে ঘরে ঘরে পছন্দের অনুষ্ঠান হয়ে উঠবে— এতটাও আশা করিনি। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম— বৃহস্পতিবার রাত আটটায় রাস্তাঘাট খালি হয়ে যাচ্ছে। এমনকি, সেই সময়ে সত্যজিৎ রায় তাঁর একটা ছবির শ্যুটিং করছেন। পরে শুনেছি, এক বৃহস্পতিবার তিনি নাকি তাড়াতাড়ি প্যাকআপ করে দিয়েছিলেন এই ধারাবাহিক দেখবেন বলে!
তুমুল শোরগোল ফেলে দিয়েছিল ‘চৌধুরী ফার্মাসিউটিক্যালস’। নাঃ, পর্দার সুব্রতদা। সবটাই ওঁর কামাল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy