ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে শ্যুটিং কী করে হবে তা নিয়ে এখন থেকেই চিন্তায় টলিউডের প্রযোজকেরা।
না, বড়দিনের ছুটি নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন না তারকারা। সেই সময় সবাই যে ব্যস্ত থাকবেন ক্রিকেট নিয়ে।
এতটাই হইচই নতুন টুর্নামেন্ট ঘিরে যে দেব লড়তে চলেছেন প্রসেনজিতের সঙ্গে। আর ব্যক্তিগত জীবনে দারুণ বন্ধু সুজিত সরকার ও অরিজিৎ দত্ত শীতকালের ওই ক’টা দিন হয়ে উঠবেন একে অপরের ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ।
সবাই এতটাই সিরিয়াস যে নিজের টিম ‘পুরুলিয়া প্যান্থার্স’কে নিজের বাড়িতে ডেকে ভোকাল টনিক দেওয়ার প্ল্যান করছেন টিমের মালিক প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
অন্য দিকে ‘হুগলি হিরোস’য়ের জন্য বিশেষ প্র্যাকটিসের মাঠ খুঁজছেন সুজিত সরকার।
হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের টিম ‘মেদিনীপুর মাইটিজ’য়ের ফাইনাল ইলেভেন কী হবে তা নিয়ে কনফারেন্স কলে ব্যস্ত দেব।
অন্য দিকে ‘জলপাইগুড়ি রয়্যালস’য়ের টিম-বন্ডিং যাতে ভাল হয় তাই টিমকে শহরের বাইরে কোনও রিসর্টে নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করছেন প্রিয়া সিনেমা হলের মালিক অরিজিৎ দত্ত।
‘কাটমুন্ডু’ ছবির প্রযোজক শ্যামসুন্দর দে আবার ‘মুর্শিদাবাদ নবাবস’য়ের জন্য স্পনসর জোগাড় করতে নিয়মিত মিটিং করছেন।
আর টালিগঞ্জের আর এক প্রযোজক কৌস্তুভ রায় নিজে হাতে ‘বর্ধমান ব্লাস্টার্স’য়ের লোগো বানাচ্ছেন।
হ্যাঁ, এই ছ’টা টিম নিয়েই ডিসেম্বর মাসে শুরু হতে চলেছে নতুন টি২০ টুর্নামেন্ট।
বেঙ্গল সেলিব্রিটি লিগ। বিসিএল।
বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সবাইকে নিয়ে এই ক্রিকেট টুর্নামেন্টের কনসেপ্টটা যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত তিনি ললিত মোদী নন, যিশু সেনগুপ্ত।
‘‘এটা নিয়ে গত দু’বছর ধরেই চিন্তাভাবনা চলছিল। অবশেষে শুক্রবার টিম মালিকদের নিয়ে মিটিংও হয়েছে শহরের এক হোটেলে। আমার নিজের মনে হয়, এ রকম একটা টুর্নামেন্ট হলে ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে বন্ডিংটা আরও ভাল হবে, যেটার সত্যি খুব দরকার,’’ বুধবার সকালে বলছিলেন যিশু।
কথায় কথায় জানা গেল, শুধু অভিনেতা নয়, টালিগঞ্জের বিভিন্ন গিল্ডের সদস্যরাও খেলার সুযোগ পাবেন এই টুর্নামেন্টে।
‘‘ক্যামেরা সেটিং, ট্রলি সেটিং, স্পট বয়, মেক আপ আর্টিস্ট— সবাই অংশ নিতে পারবে বিসিএল-এ। যদি টুর্নামেন্ট করতেই হয়, তা হলে সবাইকে নিয়ে করা উচিত। তা না হলে টুর্নামেন্টে সব থাকে, প্রাণ থাকে না,’’ বলছেন যিশু।
সবাইকে নিয়ে চলার যিশুর এই উদ্যোগটাই প্রথম দিন ভাল লেগে গিয়েছিল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের।
‘‘আমি এমনিতে খেলাধুলোতে ইনভল্ভড হই না। কিন্তু এই টুর্নামেন্টের ফরম্যাটটাই এমন, পুরো বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে একত্রিত করার ক্ষমতা আছে বিসিএল-এর। সেই ভাবনা থেকেই আমার জড়িয়ে পড়া। আর তা ছাড়া আমাদের সবার এত স্ট্রেসফুল লাইফ, একটু খেলাধুলো হলে মন্দ কী!’’ বলছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
তা করে থেকে শুরু হচ্ছে টুর্নামেন্ট? শোনা যাচ্ছে এ বছরের ডিসেম্বরে শুরু হবে টুর্নামেন্ট। ২০১৬-র ৯ জানুয়ারি হবে ফাইনাল।
আর খেলাগুলো হবে কোথায়?
‘‘ম্যাচগুলো হবে কিশোর ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। এই ব্যাপারে আমার কপিল দেবের সঙ্গেও বার তিনেক কথা হয়েছে। বিভিন্ন মাঠে ফ্লাড লাইট লাগানোর ব্যবসা আছে কপিল দেবের। ওঁর সংস্থাই ফ্লাডলাইট লাগাবে মাঠে। যদিও এখনও ফাইনাল ডিসিশন কিছু হয়নি,’’ বলছেন যিশু।
আর এখন অবধি কতজন প্লেয়ার সাইন করেছেন বেঙ্গল ক্রিকেট লিগে?
‘‘এখন অবধি ৪২ জন সাইন করেছে। বাকি প্লেয়াররা এই সপ্তাহের শেষে সাইন করে নেবে। তার পর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হবে টিমের অকশন,’’ বলছেন যিশু।
যা খবর, যিশু নাকি ওঁর পুরনো বন্ধু জিৎকেও বলেছিলেন একটি টিমের মালিক হওয়ার জন্য। ‘দেখছি দেখব’ করেও শেষ মুহূর্তে টিম কিনতে রাজি হননি জিৎ।
প্রসেনজিৎ, দেব যেখানে টিমের মালিক, সেখানে জিৎ রাজি হলেন না কেন? ‘‘এ ব্যাপারে তো আপনার জিতের সঙ্গেই কথা বলতে হবে,’’ বলছেন যিশু।
কেন জিৎ রাজি হলেন না, ফ্লাড লাইট কবে বসবে, জার্সি আর কিট কোথা থেকে কেনা হবে যদি যিশুর মাথাব্যথা হয়, টিমের বাকি মালিকরা কিন্তু ও সব নিয়ে এখন ভাবতেই রাজি নন। তাঁদের ধ্যানজ্ঞ্যান এখন ভাল টিম বানানো।
‘‘অনেক প্লেয়ার ইতিমধ্যেই সাইন করে ফেলেছেন। অকশনে প্লেয়ার কেনাবেচার ব্যাপারে আরও পড়াশোনা দরকার সব টিমের মালিকেরই। তবে আমরা সবাই চাইছি, এমন ভাবে টিম হোক যাতে ছ’টা টিমের মধ্যেই একটা সামঞ্জস্য থাকে,’’ বলছেন দেব।
তিনি ‘মেদিনীপুর মাইটিজ’য়ের মালিক। এটা কি ঘাটালের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের জন্য?
‘‘শুধু মাত্র ঘাটাল নয়। আমার বাবা-মা মেদিনীপুরের মানুষ। ওই জায়গাটার সঙ্গে আমার ও আমার পরিবারের বহু দিনের যোগাযোগ। সেই ইমোশনাল কারণের জন্যেই মেদিনীপুরের টিমের মালিক হওয়া,’’ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর পরের ছবি ‘ধূমকেতু’র স্ক্রিপ্ট শোনার ফাঁকে বলছিলেন দেব।
অন্য দিকে সুজিত সরকার এই টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন খেলার প্রতি তাঁর ভালবাসার টানে।
‘‘যিশু আমাকে কনসেপ্টটা বলা মাত্রই আমি রাজি হয়ে যাই। কোথাও কোনও খেলা হলে আর কেউ থাকুক না থাকুক, আমি আছি। এ বার ক্রিকেট টিম মালিক হলাম। ভবিষ্যতে কোনও ফুটবল টিমের মালিক হতে বললেও আমি রাজি। আর যেহেতু কলকাতায় থাকি না নিয়মিত, তাই টিম বানানোর ক্ষেত্রে বাকি টিম মালিকদেরও অনুরোধ করছি একটু সাহায্য করতে,’’ বলছেন সুজিত।
অন্য দিকে তাঁর পরের ছবি ‘কাটমুন্ডু’র প্রচারের ফাঁকেই বিসিএল নিয়ে নিয়মিত মিটিং করছেন শ্যামসুন্দর দে। যদিও টুর্নামেন্টের আগে বেশি কথা বলতে রাজি নন কৌস্তুভ রায়। ‘‘ আমার টিম, ‘বর্ধমান ব্লাস্টার্স’ মাঠে নামবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। মাঠে আমি কাউকে চিনি না,’’ বলছেন আরপি টেকভিশনের কৌস্তুভ। সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, বিসিএল নিয়ে জল গরম হওয়া শুরু হয়ে গেছে। আর তো মাস তিনেকের অপেক্ষা।
প্রসেনজিৎ বনাম দেব শুরু হল বলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy