বাংলাতেও কি বন্ধ হবে হল? আশঙ্কায় টলিউড। প্রতীকী চিত্র
সবে স্বাভাবিক হচ্ছিল বিনোদন দুনিয়া। একের পর এক ছবি মুক্তি প্রেক্ষাগৃহে। দর্শকেরাও শঙ্কা ভুলে একটু একটু করে হলমুখী। বাণিজ্যের পালেও লাভের হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। বছরশেষে তাতেই ফের কুঠারাঘাত। ওমিক্রন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে দেশে। দিল্লিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে। সেখানে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। বাংলায় নতুন বছরে জানুয়ারি মাসেই শ্যুট শুরুর কথা একগুচ্ছ ছবি, সিরিজের। দিল্লির পদক্ষেপ কি ছায়া ফেলবে তাতে? ফের কি দুর্যোগের সিঁদুরে মেঘ টলিউডেও?
আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল একাধিক পরিচালক, প্রেক্ষাগৃহের মালিক, প্রযোজকের সঙ্গে। কী বলছেন তাঁরা?
পরিচালক সন্দীপ রায়ের মতে, আগাম দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। তাঁর ফেলুদা-র শ্যুট শুরু মার্চের শেষে। পরিচালকের কথায়, তখনও যদি অতিমারি থাকে তা হলে পরিস্থিতি বুঝে তিনি এবং প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ আলোচনা করে পদক্ষেপ করবেন। চিন্তার আভাস এসকে মুভিজের কর্ণধার অশোক ধানুকার কথায়। দিল্লির প্রেক্ষিতে তাঁর আশঙ্কা, ফের অনিশ্চিত হতে চলেছে বিনোদন দুনিয়ার ভবিষ্যত। অশোকের যুক্তি, গত দু’বছর ধরে তিনি এমনটাই দেখে চলেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিকের মুখে পৌঁছলেই অতিমারির নতুন ঢেউ আছড়ে পড়েছে। ফের ব্যাহত হচ্ছে পেশা দুনিয়া, উপার্জন। একই সঙ্গে এ-ও জানিয়েছেন, মানুষের জীবন বাঁচাতেই কড়াকড়ি মানতে বাধ্য সবাই। প্রয়োজনে ক্ষতি মেনে নিয়েই। এই ক্ষতি কি আগামী দিনে পূরণ হবে? প্রথম সারির প্রযোজকের কথায়, “এক মাস প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ মানে তার ধাক্কা চলে আগামী ছমাস পর্যন্ত। তা হলেই বুঝুন, কতটা ক্ষতিপূরণ সম্ভব!”
জানুয়ারিতে উত্তরবঙ্গে শ্যুট হওয়ার কথা ‘ডা. বক্সী’র বাকি অংশের। সেই মতো প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পরিচালক সপ্তাশ্ব বসু এবং ছবির অভিনেতারা। দিল্লি সরকারের নির্দেশ কিছুটা হলেও দমিয়ে দিয়েছে তাঁকে। সে কথা অকপটে স্বীকার করেছেন সপ্তাশ্ব। তাঁর কথায়, ‘‘২০২০-২১ মিলিয়ে এটাই ঘটছে। বারবার প্রেক্ষাগৃহ খুলছে, বন্ধ হচ্ছে। কোভিড-কড়াকড়ির জেরে আটকে যাচ্ছে শ্যুটিং। এতে কাজের স্বাভাবিক গতি বাধা পাচ্ছে।’’ আপাতত তাঁর একটাই প্রার্থনা, জানুয়ারির শ্যুট যেন কোনও কারণেই বন্ধ না হয়। এতে প্রযোজক, অভিনেতা, কলা-কুশলী— সকলেরই ক্ষতি। তাই যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করার চেষ্টায় আছেন সপ্তাশ্ব।
পুরোদমে শ্যুট চলছে শিলাদিত্য মৌলিকের আগামী ছবি ‘মাস্টারমশাই আপনি কিচ্ছু দেখেননি’র। জানুয়ারিতেও শ্যুটিং চলবে, ঠিক হয়ে রয়েছে। কী বলছেন পরিচালক? খবর শুনে থমকেছেন তিনিও। জানিয়েছেন খারাপ লাগার কথাও। শিলাদিত্যর দাবি, কোনও নির্দেশ হাতে না আসা পর্যন্ত যে ভাবে কাজ করছিলেন, সে ভাবেই করবেন তাঁরা।
শ্যুটিং শুরুর কথা পাভেলের আগামী ছবি ‘ডাক্তার কাকু’র। তাঁর ভাবনা কী? জানতে ফোন করা হয়েছিল তাঁকে। তবে উত্তর মেলেনি। দুশ্চিন্তায় ভুগছেন সায়ন্তন ঘোষালও। তাঁর ছবি-মুক্তি রয়েছে জানুয়ারিতে। পাশাপাশি শ্যুট শুরুর কথা সিরিজেরও। সায়ন্তনের মতে, দুর্ভাবনার বাইরে আর কোনও পথই দেখতে পাচ্ছেন না তিনি। ছবির শ্যুটও শুরুর কথা ছিল নতুন বছরের গোড়ায়। সব ঠিক থাকলে সেই কাজ পিছিয়ে এপ্রিল মাসে হবে।
জানুয়ারিতে মুক্তি পাওয়ার কথা রাজ চক্রবর্তীর ‘ধর্মযুদ্ধ’-র। দিল্লির খবরে কি ফের দোলাচলে বিধায়ক-পরিচালক? সম্প্রতি ভুগে উঠলেন জলবসন্তে। পরিবারের মুখ চেয়ে হালিশহরের বাড়িতে নিভৃতাবাসে রয়েছেন। রাজের দাবি, ''এক্ষুণি দুশ্চিন্তায় ভুগতে রাজি নই। ২০১৯ থেকে পিছতে পিছতে 'ধর্মযুদ্ধ' মুক্তি পেতে চলেছে ২০২২-এ। দু'বার করে প্রচার করেছি। অতিমারি থামিয়ে দিয়েছে চলার গতি। লোকসান হয়েছে। কিন্তু কিছু করার নেই। সরকারি নির্দেশ মানতেই হবে।'' আপাতত তাই পরিচালক নিজের মতো করেই প্রচারের কাজ এগোচ্ছেন। বাকিটা ছেড়ে দিয়েছেন ভবিষ্যতের উপরে। একই সঙ্গে তাঁর আশঙ্কা, বিনোদন দুনিয়া বিরাট বড় অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে চলেছে।
বছরশেষে হিন্দি, বাংলা, ইংরেজি এবং তামিল ছবির ডাবিং সংস্করণ দেখিয়ে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছিলেন প্রেক্ষাগৃহের মালিকেরা। আবার হল বন্ধ মানেই তো ফের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ? মেনে নিয়েছেন হল মালিক নবীন চোখানি। এ-ও জানিয়েছেন, সবার আগে দর্শকদের জীবন। তাই নির্দেশ এলে তিনি তা অক্ষরে অক্ষরে মানবেন। বেঁচে থাকলে ব্যবসাও হবে, বলছেন নবীন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy