দেবলীনা দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
শুধু উৎসব নয়। বহু মানুষের রোজগারের মাধ্যম দুর্গাপুজো। পুজোর ফোটোশুট থেকে শুরু করে, ফিতে কাটা, পুজো পরিক্রমা— এগুলি তারকাদের উপার্জনের বড় উৎস। রোজগারের প্রসঙ্গ থাকলেও, এ বারের পুজোয় উল্লিখিত একটি কাজও করছেন না দেবলীনা দত্ত। আরজি কর-কাণ্ডের ভয়াবহতা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তিনি। তাই এই সিদ্ধান্ত অভিনেত্রীর। যদিও যাঁরা পুজো সংক্রান্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই তাঁর। বরং তাঁদেরও সাধুবাদ জানিয়েছেন দেবলীনা।
আনন্দবাজার অনলাইনকে দেবলীনা বলেছেন, “এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে তার মানে এই নয় যে, পুজোয় যাঁরা শামিল থাকছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আমার কোনও বক্তব্য রয়েছে। পুজোর কাজ কিন্তু আমাদের রুজিরুটিও। এর সঙ্গে আন্দোলনকে গুলিয়ে ফেলার কোনও কারণ নেই। আমি থাকছি না। কারণ, মানসিক ভাবে আমি পেরে উঠছি না।”
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে পথে নেমে সরব হয়েছেন দেবলীনা। একাধিক কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ক্রমশ এই আন্দোলনের সঙ্গে যত জড়িয়েছেন, এমন বহু কিছু জানতে পেরেছেন, যার জন্য মানসিক ভাবে পুজোর কাজে যোগ দিতে এখনও প্রস্তুত নন দেবলীনা। অভিনেত্রী বলেছেন, “হুমকি সংস্কৃতি সব জায়গাতেই চলে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন এক কেশসজ্জা শিল্পীকে মাসের পর মাস কাজ করতে দেওয়া হয়নি বলে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আমিও নিজেও কিছুটা ভুক্তভোগী। কিন্তু এই হুমকি সংস্কৃতির ফল স্বরূপ একজনকে প্রাণ দিয়ে দিতে হল। এই ঘটনা আমার উপর প্রভাব ফেলেছে।”
আরজি কর-কাণ্ডের তদন্ত বর্তমানে সিবিআই-এর হাতে। সেই তদন্তের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে যা জানতে পারছেন, তাতে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছেন দেবলীনা। অভিনেত্রী বলছেন, “যত জানছি, তত মানসিক ভাবে প্রভাবিত হচ্ছি। খুঁটিপুজো থেকে শুরু করে ব্র্যান্ডিং, যাবতীয় কাজের সঙ্গে উৎসবমুখর মানসিকতা জড়িয়ে থাকে। আমি সেই মানসিক অবস্থায় কিছুতেই আসতে পারছি না। সেই কারণেই এই উপার্জন থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখতে হয়েছে।”
বরাবরই অনাচারের বিরুদ্ধে সরব থাকতে পছন্দ করেন দেবলীনা। অভিনেত্রীর কথায়, “আমি সব সময়ই ইন্ডাস্ট্রির লবিবাজি, হুমকি সংস্কৃতি, কাস্টিং কাউচের বিরুদ্ধে সরব ছিলাম। আমি সব সময় লড়েছি। তার ফলও ভুগেছি। কিন্তু তার চেয়েও বড় বিষয় হল, ক্ষমতাহীন মানুষ প্রতিবাদ করলে কী পরিণতি হতে পারে, তা দেখলাম। তাঁকে পরীক্ষায় ফেল করানো হয়। তাঁকে হয়তো চিকিৎসকই হতে দেওয়া হল না। এমনকি, তাঁকে প্রাণে মেরেও ফেলা যেতে পারে। এ কী ভয়ঙ্কর!”
নিহত চিকিৎসকের বাবা-মায়ের কথা ভেবেও স্বাভাবিক মানসিক অবস্থায় ফিরতে পারছেন না দেবলীনা। তিনি বলেছেন, “বাবা-মায়ের একটা মাত্র সন্তান। স্কুলের পোশাক সেলাই করে উপার্জন করে মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন বাবা। কত খরচ হয় এবং কতটা মেধা প্রয়োজন হয়! আর শেষে সেই মেয়ের এই পরিণতি হল। এটার বিচার চাই। আমি প্রতিবাদের উৎসবে আছি।”
পুজোর উদ্যাপনে এ বার থাকছেন না দেবলীনা। মহালয়া থেকে শুরু করে পুজোর দিনগুলিতে বিচারের দাবিতে নানা আন্দোলনে থাকার পরিকল্পনা তাঁর। অভিনেত্রীর কথায়, “এ বার মা দুর্গাও প্রতিবাদী রূপে আসছেন। শিল্পীরাও তাঁদের শিল্পকে ব্যবহার করছেন প্রতিবাদের জন্য। আমার অত্যন্ত প্রিয় শিল্পী সনাতন দিন্দা এ বার মায়ের হাতে অস্ত্র দিচ্ছেন। কোনও বার ওঁর প্রতিমায় অস্ত্র থাকে না। এই ভাবেই প্রতিবাদ। আর্জি, নির্যাতিতা বিচার পাক ও হুমকি সংস্কৃতি নিপাত যাক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy