তরুণ মজুমদার-দেবশ্রী রায়
আমার সিনেমা দুনিয়ার ‘মা-বাবা’ সন্ধ্যা রায়, তরুণ মজুমদার। সবাই বলেন, ওঁরা আমায় আবিষ্কার করেছেন। আমি জানি, আমি তখন এক তাল মাটির ঢেলা। ওঁরা দু’জনে মিলে সেই মাটি থেকে মূর্তি বানিয়েছেন। তাতে প্রাণ ঢেলেছেন। ‘চুমকি’ থেকে ‘দেবশ্রী’ হয়ে নতুন জন্ম হয়েছে আমার। সেই ‘বাবা’ আর নেই। ওঁর পারলৌকিক কাজ করব। তনুদা সব সময় বলতেন, ‘‘মা রে, আমার তো কোনও সন্তান নেই। তুই, মৌসুমী আর মহুয়া আমার তিন মেয়ে। যখন থাকব না তোরাই শেষ কাজ করবি।’’ বাবার কথা ফেলি কী করে?
মুখাগ্নি করতে পারব না। ওই নিষ্ঠুর কাজ আমার দ্বারা হবে না। আমার বাবা, মা, দাদার সময়েও এই কাজ করিনি। আমি দেখতে পারি না। বাকি সব নিয়ম পালন করব।
সকাল থেকেই সন্ধ্যা রায় ফোনে অঝোরে কাঁদছেন। আর সমানে বলছেন, ‘‘তুই আমার কাছে চলে আয়। তোকে আমার এখন খুব দরকার। আমি একা একা আর পারছি না।’’ আমি উল্টে মৃদু ধমক দিয়েছি, ‘‘এত কান্নাকাটি করছ কেন? কিচ্ছু হবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে। মানুষের কি শরীর খারাপ হয় না?’’ আমিই ভুল ছিলাম। ভাল-মন্দ সবটাই সবচেয়ে কাছের মানুষ সবার আগে বুঝতে পারেন, এটা বুঝতে পারিনি। সকালে মানত করা পুজো দিতে বেরিয়েছি। ফোন পেয়েই গাড়ি ঘুরিয়ে ওঁর কাছে যাচ্ছি। সন্ধ্যাদিও খুবই অসুস্থ। কোভিডের পর থেকে প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে গিয়েছেন।
তরুণ মজুমদার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। খবর শুনেই দৌড়েছিলাম সেখানে। দাঁড়িয়ে দেখতে পারিনি। ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলেছি। মা বা বাবা সারা শরীরে যন্ত্র লাগিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। কোন সন্তান দেখতে পারে? চলে আসার আগে দূর থেকে কয়েক বার ডেকে বলেছিলাম, ‘‘তনুদা, আমি চুমকি। আপনাকে দেখতে এসেছি।’’ তখনও জ্ঞান ছিল। ঠিক চিনতে পেয়েছিলেন আমায়।
সিনেমার ‘মা-বাবা’র আচমকা দূরত্ব কোনও দিন মেনে নিতে পারিনি। খুব কষ্ট হত আমার। কী সুন্দর ওঁরা মিলেমিশে কাজ করতেন। কত নতুন অভিনেতাকে ইন্ডাস্ট্রিতে এনেছেন। আমাদের সবাইকে কী পরিশ্রম করে তৈরি করে দিয়েছেন! শুনেছি, শেষের দিকে নাকি তনুদা আবারও আগের মতো ছবি করতে চাইতেন। ইচ্ছে থাকলেও পারেননি। শরীরে আগের মতো জোর ছিল। ইন্ডাস্ট্রিও অনেক বদলে গিয়েছে। কিন্তু আমি জানি, ওঁর কাজগুলোই থেকে যাবে। বাংলা এবং ভারতীয় ছবির ইতিহাসে কালজয়ী হয়ে থাকবে ওঁর পরিচালিত সমস্ত ছবি। জানি না, এখনকার ছবি সেই জায়গা নিতে পারবে কিনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy