অঙ্কুশ হাজরা।
‘তোমার কথা বলা/ যেন মধুবালা’ বলছেন তিনি। বলছেন ‘ডান্স বাংলা ডান্স ১১’-এর এক প্রতিযোগীর মুখের দিকে তাকিয়ে। তিনি— অঙ্কুশ হাজরা।
৭০ বছরের বৃদ্ধের সঙ্গে বাচ্চা মেয়ের নাচের গল্প দেখে হাউ হাউ করে মঞ্চে কেঁদে ফেলছেন তিনি। মনে পড়ছে নিজের বাবার কথা। তিনি— অঙ্কুশ হাজরা।
‘এমন মধুর সন্ধ্যায় একা কি থাকা যায়?’ অকপটে অভিনেত্রী বন্ধুকে ডাক দিচ্ছেন তিনি। বন্ধুর নাম শুভশ্রী। তিনি— অঙ্কুশ হাজরা।
শত্রুঘ্ন সিংহকে নকল করছেন তিনি। দর্শকরা মাতোয়ারা। তিনি— অঙ্কুশ হাজরা।
অভিনেতা, নায়ক, ‘ডান্সার’, সঞ্চালক সব কিছু ছাপিয়ে ‘ডান্স বাংলা ডান্স সিজন ১১’-র মঞ্চের প্রাণ হয়ে উঠেছেন অঙ্কুশ। কোনও একটি মাত্র ভূমিকায় তাঁকে আর ধরতে পারা যাচ্ছে না। ‘ডান্স বাংলা ডান্স সিজন ১১’-র আরেক সঞ্চালক বিক্রম চট্টোপাধ্যায় তো বলেই দিলেন, “অঙ্কুশ যে ভাবে মঞ্চ কাঁপাচ্ছে, আমার তো ভয় হচ্ছে কাঞ্চনদার কাজ না কমে যায়!”
তবে অঙ্কুশ জানাচ্ছেন, কাঞ্চন মল্লিক, যিশু সেনগুপ্তরা তাঁর গুরু। ‘ডান্স বাংলা ডান্স সিজন ১১’ -য় অঙ্কুশের সঞ্চালনা দেখে মুগ্ধ কাঞ্চন নিজেই ফোন করে কাজের প্রশংসা করেছেন। ফ্লোর থেকে আনন্দবাজার অনলাইনকে অঙ্কুশ বললেন, “কাঞ্চনদা আর বিশ্বনাথদা ফোন করে প্রশংসা করায় খুব ভাল লেগেছে। ওরাই তো প্রথম ইন্ডাস্ট্রিতে সঞ্চালকের গুরুত্ব বুঝিয়েছিল।” অঙ্কুশ মনে করেন একজন সঞ্চলকের উপর রিয়্যালিটি শোয়ের টিআরপি বাড়ানোর দায়িত্ব অবশ্যই বর্তায়। তাঁর কথায়, “টানা দেড় ঘন্টার অনুষ্ঠান। সেখানে গৃহবন্দি মানুষকে যদি আনন্দ দিতে না পারি, কাঁদাতে না পারি, অনুপ্রেরণার গল্প বলতে না পারি, তা হলে মানুষ কেন দেখবেন এই অনুষ্ঠান?” এগুলোর জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত তিনি। যাঁরা নাচ ভালবাসেন, তাঁরা এই অনুষ্ঠান দেখছেন। যাঁরা বিনোদন ভালবাসেন, তাঁরা বিনোদন পাচ্ছেন। অঙ্কুশ আছেন নাচ থেকে বিনোদন— সবটা জুড়ে।
খানিক উৎসাহ নিয়েই বলছিলেন, “শাহরুখ খানকে দেখেছি সঞ্চালকের ভূমিকায় মেয়েদের পোশাক পরে ঘুরতে, খালি গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে নাচতে। ফেস মাস্ক লাগিয়ে আসতে। রণবীর সিংহও তা-ই। সফল সঞ্চালক হতে চেয়ে আমি যদি ভাবি আমার নায়ক ইমেজ নষ্ট হবে, তা হলে হবে না।” শুধু কথা বা নাচ নয়। ডিজাইনার অভিষেক রায় অঙ্কুশের পোশাক নিয়েও নানা রকম পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন। অভিষেক বলছিলেন, “ও মজাদার সঞ্চালক। ওকে এমন রং আর প্রিন্টের পোশাক পরাচ্ছি, যা ছেলেরা সচরাচর পরে না। কিন্তু ও সেগুলো খুব ভাল ক্যারি করতে পারে। রিয়্যালিটি শো বলেই এত রকম পোশাক পরাতে পারছি।”
ঠিকই। তবে ‘ডান্স বাংলা ডান্স সিজন ১১’ আর শুধুমাত্র জি বাংলার রিয়্যালিটি শো নেই। নাচের প্রতিযোগিতাকে ছাপিয়ে প্রাত্যহিক বিনোদনের রঙ্গমঞ্চ হয়ে উঠেছে। অনুষ্ঠানের টিআরপি-ও তেমনই বলছে। অঙ্কুশ সেই মঞ্চের অন্যতম নায়ক, যিনি অন্য বহু মঞ্চে নিজের স্বকীয়তা প্রমাণ করেছেন। কিন্তু এ বার ছোটপর্দার মঞ্চ কাঁপাচ্ছেন পাশের বাড়ির ছেলে হয়ে।
‘ডান্স বাংলা ডান্স সিজন ১১’-য় পুনর্জন্ম হল অঙ্কুশ হাজরার। যিনি একাই একাধারে ‘হাজার হাজার হাজরা’।
এই সঞ্চালক অঙ্কুশের মধ্যে অভিনেতা অঙ্কুশ, বিচারক অঙ্কুশ, নায়ক অঙ্কুশ আর ‘কমেডিয়ান’ অঙ্কুশ মিলেমিশে একাকার। অনুষ্ঠানের পরিচালক অভিজিৎ সেন বললেন, “অঙ্কুশ এই অনুষ্ঠানের ‘জান’। ও একেবারে সাধারণ বাড়ির ছেলের মতো হাসে, কাঁদে, দুঃখ পায়। আর এই আবেগগুলো ওর ভেতর থেকে অনায়াসে আসে। ওকে আলাদা করে কিছু করতে হয় না। সঞ্চালক হতে গেলেই যে বিরাট কিছু বাংলা জেনে আসতে হবে, এই ধারণাকে ও ভুল প্রমাণ করেছে। তাই ও এত সফল। ও নিজেই জানত না এত ভাল সঞ্চালনা করতে পারবে!”
জি বাংলার মতোই স্টারে চলছে ‘ডান্স বাংলা জুনিয়র’। স্টার জলসার ওই অনুষ্ঠানের সম্প্রচারের সময়ও একই। কোন অনুষ্ঠান দর্শক বেশি দেখছেন? প্রশ্ন উঠল। সরাসরি উত্তর না দিয়ে অঙ্কুশ বললেন, ‘‘আমরা শুরু করেছিলাম ৬.৪ টিআরপি দিয়ে। এখন গড়ে ৭.৪ টিআরপি। দেব (ডান্স বাংলা জুনিয়রের সঞ্চালক) আমায় ফোন করে বলেছে, তুই খুব ভাল করছিস।’’ অঙ্কুশের বিশ্বাস, লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে যাচ্ছে এই অনুষ্ঠানের গল্প। সাফল্যের গল্প।
সাফল্যের কারণ কী? অঙ্কুশ জানাচ্ছেন, যে যে বিচারক এবং নৃত্যগুরু মঞ্চে থাকেন, তাঁদের সকলের সঙ্গেই আগে থেকে ভাল সম্পর্ক আছে তাঁর। প্রত্যেকেই তাঁর পছন্দের। অঙ্কুশের কথায়, “জিৎ-দা, শুভ, রিমঝিম, সৌমিলি, ওম, দেবলীনা এমনকি, গোবিন্দজি— সকলের সঙ্গেই আমি মজা করছি। আমাকে নিয়েও মজা করা হচ্ছে। সবাই হাল্কা ভাবে বিষয়টা না নিলে এমন সঞ্চালনা সম্ভব হত না।” বিক্রমের সঙ্গে ১১ বছরের বন্ধুত্ব তাঁর। বন্ধুত্বের সেই রসায়নও অসাধারণ কাজ করেছে এই অনুষ্ঠানে। হাসতে হাসতে অঙ্কুশ বলছিলেন, “যে ভাবে বিক্রমের পিছনে লাগি, ও কিন্তু তার সবটাই মজা হিসেবেই নেয়। আসলে সঞ্চালক হলে নিজেকে পুরো ভেঙে ফেলতে হয়। যিশু সেনগুপ্ত যেটা করে। সঞ্চালককে ছোট হয়ে যেতে হয়। আমি চাই, লোকে বলুক তুমি বিচারক ছিলে সঞ্চালক হয়ে গেলে? ছ্যা-ছ্যা-ছ্যা!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy