চ্যাম্প
কিছু দিন আগে তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল— ‘চ্যাম্প’, ‘বস টু’, ‘টিউবলাইট’। স্রেফ নাম শুনে বোঝার উপায় নেই, ছবিগুলো ইংরেজি, হিন্দি না কি বাংলা! সিনে-দুনিয়া সম্পর্কে যৎকিঞ্চিৎ আগ্রহ না থাকলে, ধোঁকা খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা!
উপরের নামগুলোর মধ্যে ‘টিউবলাইট’ হিন্দি। বাকি দুটো বাংলা। গোটা চিত্রটা বোঝানোর জন্য এটা ন্যূনতম উদাহরণ। বাংলা সিনেমায় ইংরেজি নামই এখন চলছে। বিশেষত ‘মসালা’ বাণিজ্যিক ছবির ক্ষেত্রে। জিতের যেমন প্রায় কোনও ছবিরই বাংলা নাম নেই। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টা নেহাতই কাকতালীয়!’’
শুধু সিনেমার নামের কথা বললে ভুল হবে। বাংলা ছবির গানেও ইংরেজি আর হিন্দি শব্দের দাপাদাপি। ‘উ লাল লা... আই লভ ইউ মাই সোনিয়া’, ‘ওরে মনওয়া রে, ক্যায়সা হ্যায় তু বতা’...তালিকা বেশ লম্বা। বাণিজ্যিক ছবির ক্ষেত্রে তো বটেই, অনেক সময় আরবান ঘরানার ছবিতেও গানের লাইনে হিন্দি, ইংরেজির অনুপ্রবেশ ঘটে।
এই অনুপ্রবেশের পিছনের কারণটা কী? বাঙালির বাংলার প্রতি অনীহা, না কি স্রেফ সস্তা জনপ্রিয়তার লোভ? টলিউডের চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘ছবির নাম ঠিক করা হয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। মানে পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার বা আরও অনেকে সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। সকলের মতামত নিয়ে যেটা ছবির জন্য একদম যথাযথ, সেই রকম একটা নাম বাছাই করা হয়। দর্শককে আকর্ষণ করার বিষয়টা প্রাথমিক ভাবে মাথায় রাখা হয়। তাতে অধিকাংশ সময়েই দেখা যাচ্ছে, বাণিজ্যিক ছবির নামের ক্ষেত্রে ইংরেজি বা হিন্দিরই ব্যবহার বেশি হচ্ছে।’’
বস টু
টলিউডের পরিচালক বা অভিনেতারা অনেক সময় বলে থাকেন, বাণিজ্যিক ছবি-শহুরে ছবি বলে কোনও বিভাজন হয় না। কিন্তু নামের ক্ষেত্রে বিভাজনটা স্পষ্ট। রাজা চন্দ বা বাবা যাদবের ছবির নামের চেয়ে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবির নাম একেবারেই আলাদা। একই কথা গানের ক্ষেত্রেও বলা যায়। ‘‘ছবির ঘরানার উপর ভিত্তি করে নাম ঠিক হয়। দেবের ছবির নাম ইংরেজিতে হলে আমরা অবাক হই না। অথচ কৌশিকদার কোনও ছবির নাম ‘চ্যাম্প’ হলে একটু ধাক্কা তো লাগবেই,’’ বলছিলেন পদ্মনাভ। তবে পদ্মনাভ নিজেও কিন্তু পুরনো দিনের বাংলা ছবির নামগুলো মিস করেন।
আজও পড়ুন:গুটি থেকে প্রজাপতি
বাংলা ছবির গান লেখেন প্রসেন। তিনি ঝালে-ঝোলে-অম্বলে আছেন। অর্থাৎ মসালা ছবির গানও লেখেন। আবার অন্য ধারারও। গানের মধ্যে ইংরেজি বা হিন্দি শব্দ দিলে কি বেশি ‘ক্যাচি’ হয়? প্রশ্ন করতেই প্রসেন পাল্টা বললেন, ‘‘দেখুন, ক্যাচি-র বদলে ‘আকর্ষক’ শব্দটা ব্যবহার করা যেতেই পারত এ ক্ষেত্রে। আসলে কী জানেন তো, আমরা রোজকার জীবনের কথার মধ্যে ইংরেজি-হিন্দি প্রচুর ব্যবহার করি। সিনেমার ক্ষেত্রেও সেই অভ্যেসটাই চলে এসেছে। আমরা যে ভাবে নিজেদের বাচনভঙ্গি বদলাচ্ছি, সিনেমার নাম-গান সেই ভাবেই বদলাচ্ছে।’’ ছবির নাম, গল্প শোনার পর গান লেখার কাজে হাত দেন প্রসেন। বললেন, ‘‘আমি কৃষক। যেমনটা বলা হবে, তেমন ভাবেই চাষ করে দেব।’’ কিন্তু এই ধরনের চটুল গান লিখে কি সন্তুষ্ট তিনি? হেসে বললেন, ‘‘এগুলো প্রফেশনাল হ্যাজার্ড বলা যেতে পারে। ইন্ডাস্ট্রিতে সব ধরনের কাজই করতে হয়। ওই গানগুলো টাকা রোজগারের জন্য। তবে শিল্পীসত্তা সন্তুষ্ট হয় ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর মতো ছবি করে।’’
অনেকে বলতে পারেন, হিন্দি ছবির গানের ক্ষেত্রেও গুজরাতি, পঞ্জাবি, উর্দু শব্দের প্রচুর প্রয়োগ থাকে। আসলে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে গোটা বিষয়টাই পাঁচমিশেলি। চরিত্রগুলোতেও সেই ছাপ। ‘হ্যারি মেট সেজল’-এ গুজরাতির সঙ্গে পঞ্জাবির প্রেম। তাই একটা গোটা গান পঞ্জাবিতে থাকলেও অবাক হওয়ার নেই। তবে নতুন নতুন শব্দের জোগান তো চলতেই থাকে। সে ভাবেই একটা ভাষার ভাঙা-গড়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy