সহজের সঙ্গে প্রিয়ঙ্কা
লকডাউন, কোভিড ১৯, কোয়রান্টিন... শব্দগুলো যেন আমাদের রোজনামচার অংশ হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতির সঙ্গে সমঝোতা করে কী ভাবে একটু ভাল থাকা যায়, তার চেষ্টায় তারকা থেকে আমজনতা... ব্যস্ততায় মোড়া নিত্য রুটিনটা থেকে একটু ফাঁক পেলে যে স্বস্তিটুকু মিলত, আজ অখণ্ড অবসরে তার বড় অভাব। তবে প্রিয়ঙ্কা সরকার সে দিক থেকে নিজেকে ভাগ্যবানই মনে করেন। ছেলে সহজ আর দুই পোষ্যকে নিয়ে তাঁর সময় যেন দৌড়চ্ছে। একসঙ্গে সিনেমা দেখা, এক্সারসাইজ়, খেলাধুলো, কম্পিটিশন... চলছে অনেক কিছুই।
তবে টানা এত দিন বাড়িতে থাকায় সমস্যাও হয়েছে প্রিয়ঙ্কার। ‘‘শ্যাডো (ল্যাব্রাডর) আর হোপ (ডালমেশিয়ান) দু’জনেই সহজের খুব আদরের। তিনজনে ভাল বন্ধুও। আমি না থাকলে সোফায় বসে তিনজনে টিভি দেখবে। কিন্তু যদি আমি থাকি, তা হলে তিনজনের মধ্যে কম্পিটিশন চলে, কে আমার কাছ থেকে বেশি মনোযোগ পাবে তা নিয়ে। তখন নিজেদের মধ্যে মারামারিও করে। এখন তো ওদের খাওয়ানো, স্নান করানো... সবই আমাকে করতে হচ্ছে, যেগুলো আমি করতাম না। ওরা বাইরেও যেতে পারছে না। বাড়ির মধ্যেই দৌড়ঝাঁপ চলছে। কারণ ফিজ়িক্যালি অ্যাকটিভ রাখাটাও দরকার। এ সব নিয়েই কেটে যাচ্ছে সময়।’’
লকডাউন পিরিয়ডে অধিকাংশ বাচ্চারই যেটা সমস্যা, স্ক্রিন টাইম অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। সহজও তার ব্যতিক্রম নয়। বেশিক্ষণ টিভি দেখা, ফোনে গেম খেলা চলছে। তবে আর একটি দিকও রয়েছে। দীর্ঘ সময়ে বাড়ি বন্দি থেকে সহজের যাতে মনখারাপ না হয় কিংবা একঘেয়ে না লাগে, প্রিয়ঙ্কাকে সেটাও খেয়াল রাখতে হচ্ছে। বেস্ট ফ্রেন্ডদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না বলে, সহজের ভাল লাগছে না। বিকেলের সাইকেল চালানো, খেলা, রেস সবই বন্ধ। তাই প্রিয়ঙ্কা চেষ্টা করেন, ছেলেকে নানা কিছুতে ব্যস্ত রাখতে। একসঙ্গে বইপড়া বা কখনও দু’জনে মিলে সিনেমা দেখা। ‘‘সহজকে দেখলাম, ও ‘সিক্রেট সেভেন’ পড়ছে। বইটা আমিই কিনে দিয়েছিলাম ওকে, আমার ছোটবেলার খুব প্রিয় বই বলে। তার পর আমিও ওর সঙ্গে আবার পড়তে শুরু করলাম। আমরা ‘মাটিল্ডা’, ‘চার্লি অ্যান্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরি’, ‘পিনোকিও’ দেখলাম। ‘চার্লি অ্যান্ড দ্য...’ সিনেমাটা দেখে সহজের প্রশ্ন, ‘উইলি ওয়াঙ্কার চকলেট কি দোকানে কিনতে পাওয়া যায়?’ ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ওর আগেই দেখা ছিল, আবার দেখলাম। ‘হীরক রাজার দেশে’ দেখলাম। কাল চার্লি চ্যাপলিনের ‘পুলিস’ দেখালাম সহজকে। এই লকডাউন পিরিয়ডে চ্যাপলিনের ছবিগুলো দেখানোর ইচ্ছে আছে। আসলে সারা দিন আমাদের মধ্যে কিছু না কিছু চলতে থাকে। সে দিন যেমন কম্পিটিশন চলছিল, কে কাকে কতবার এপ্রিল ফুল করতে পারে! আমি অজস্রবার হয়েছি,’’ হাসতে হাসতে বললেন প্রিয়ঙ্কা।
এ সবের সঙ্গে নিজের পুরনো শখও ঝালিয়ে নেওয়া চলছে তাঁর। গ্লাস-পেন্টিং বহুদিন সে ভাবে করা হয়নি। এই অবসরে গ্লাস-পেন্টিং করেছেন বোনের জন্য। বোন একটা গণেশের ছবি চেয়েছে বলে। তবে লকডাউনে হাউস-হেল্প তো অধিকাংশেরই নেই। তাই ঘরকন্নার কাজও বড় কাজ। তবে রান্নাবান্নার সঙ্গে অবশ্য প্রিয়ঙ্কার সম্পর্ক নেই। ‘‘আসলে আমি একদমই রান্না করতে পারি না। ভালও লাগে না। আমার কাছে যিনি সব সময়ের জন্য থাকেন, তাঁর অনেক দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে। তবে আমি বাসন মাজার কাজটা করছি। আর এনজয়ও করছি,’’ হেসে ফেললেন নায়িকা।
এ রকম নানা কিছুর মধ্যেও কিন্তু তাঁর মন উদ্বিগ্ন। বললেন, ‘‘অনেক কাজ আটকে গেল। এবং সবটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। লকডাউন উঠে গেলে কী ভাবে ডেট অর্গানাইজ় করা হবে, কোথায় শুট প্ল্যান করা হবে, জানি না। যশের সঙ্গে ছবিটার কলকাতার অংশ শুট হয়ে গিয়েছে। কিছুটা বিদেশে শুটিং বাকি রয়েছে। লাস্ট দু’মাস ধরে সেই কাজটা আটকে। এখন কোনও কিছুই হাতে নেই।’’ তাই দীর্ঘ দিন ঘরবন্দি থেকেও তাঁর একঘেয়ে লাগার প্রশ্ন নেই। কারণ তিনি পরিবারের সঙ্গে আছেন, যা এই পরিস্থিতে বহু মানুষই পারছেন না। খারাপ লাগছে তাঁর মা-বাবা-বোনের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না বলে, যাঁরা বেহালায় রয়েছেন। তাই লকডাউন উঠে গেলে ওঁদের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন।
আর কিছু মিস করছেন না? হেসে বললেন, ‘‘বন্ধুদের সঙ্গে বসে আড্ডা, ড্রাইভ করে চা খেতে যাওয়া, হলে গিয়ে সিনেমা দেখা... এগুলো মিস করছি। তবুও আমি বলব, এখন এমন একটা সিচুয়েশন চলছে, যাতে মনে হচ্ছে থ্যাঙ্ক গড আমি বাড়িতে রয়েছি! সেফ আছি।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy