কী ভাবে দিন কাটছে রূপঙ্করের?
সকাল ১১টা
অ্যালার্মের আওয়াজে ঘুম ভাঙল। অ্যালার্ম না থাকলে মনে হয় না তিনটের আগে ঘুম ভাঙত! আমি ঘুমোতে ভালবাসি, কিন্তু লকডাউনের পর যে ঘুম শরীর চেপে ধরেছে তা সারারাত জাগিয়ে রাখে। চেষ্টা করি, চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। চৈতালি পাশে শুয়ে বই পড়ে। আমিও পড়ি। ওর দিকে চোখ গেলে দেখি ও ঘুমিয়ে পড়েছে। ও ঘুমের ওষুধ খায়। দেখি, রাত আরও গভীর হয়ে আমার চারপাশে ঘুরছে! বারান্দায় যাই, সিগারেট খাই। ভাবতে থাকি, খুব কি চিন্তা করছি? স্বস্তি নেই। এই লকডাউনে আর্থিক বৈষম্য যত বাড়বে মানুষে মানুষে তত বিভেদ তৈরি হবে। কী ভয়ঙ্কর দিন আসছে! কিছু খাই। খিদে পাচ্ছে।
বেলা সাড়ে ১১টা
গরমজলে লেবুটা বেশ আরামদায়ক। বরাবর সকালে উঠে ওটাই আগে খাই। তার পর দুটো আমন্ড। আর চা। আগে পনেরো মিনিট এক্সারসাইজ করতাম, এখন আধ ঘণ্টার বেশি হয়ে যায়। লকডাউন আমার জীবনটাকেই বদলে দিল। কেমন একটা ‘জেটল্যাগ’ মোডে চলে যাচ্ছি। মেয়ে তো কত আগে উঠে যায়। ওর তো সকাল থেকে অনলাইন ক্লাস চলছে। ওর খুব একটা কিছু চেঞ্জ হয়নি। তাই অনেক সময় মা-মেয়ে আমার আগে ব্রেকফাস্ট করে নিচ্ছে। আমি ব্রেকফাস্ট বলতে নানা রকম ফল খাই। এখন তো সব পাওয়াও যাচ্ছে না। আজ তাই কলা। লকডাউন কোথায় নিয়ে যাবে আমাদের কে জানে? এমন এক অর্থনৈতিক মন্দা আসছে যেখানে টাটা থেকে এক জন ভিক্ষাজীবী— কেউই ভাল থাকবে না!
দুপুর সাড়ে ১২টা
রেওয়াজটা মন দিয়ে করি। এক-দেড় ঘণ্টা। সত্যি, এত শো, রেকর্ডিং, এ সবের ভিড়ে রেওয়াজের জন্য কম সময় দিতাম। ২টো বেজে গেল। সুরের মধ্যে সব ভুলে থাকা যায়... এ বার উঠতে হবে। চৈতালিরা টেবিলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। চেষ্টা করি লাঞ্চটা একসঙ্গে করার। খুব সাদামাটা খাই আমরা। ভাত, সব্জি আর মাছের ঝোল।
আরও পড়ুন: কোভিড-জয়ী মনামিকে প্রকাশ্যে এনে লাইভে মিমির নতুন বার্তা
দুপুর ৩টে
আমার গানের ঘরে। আমার কমফর্ট জোন। আজ একটানা গিটার বাজালাম। একটা নতুন গানের খসড়া হল। বেশ লাগে এখন একা ঘরে সুরের সঙ্গে লকডাউন জীবন কাটাতে। বেশ কিছু দিন ধরে গান আসছে নতুন নতুন। আমার ইউটিউব চ্যানেলে দিচ্ছিও। এই গিটার বাজানো, গান তৈরি, এ সবের মধ্যেই আমি একমাত্র চলমানতা দেখছি।
বই নিয়ে ব্যস্ত।
সন্ধে ৭টা
একসঙ্গে চা খেয়ে একটু টেলিভিশনের সামনে বসি। নেটফ্লিক্স দেখি।
আরও পড়ুন: প্রায় এক ঘণ্টা হাসপাতালের বাইরে ফুটপাতে বসে রইল ৬৯ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী
রাত ১০টা
রুটি আর সব্জি। ব্যস, এই তো খাই। এ বার আমার প্যাথেটিক সময় শুরু। গান, ছবি, বই— কেউ এই ঘুম না আসার বিরক্তি থেকে আমায় মুক্তি দিতে পারে না! হাল এমন হল, পাখির ডাক না শুনলে ঘুম আসছে না।
রাত ৩টে
কিছু কিছু প্রশ্ন রাত হলে মনের মধ্যে হাজির হয়। কী ভাবছে মানুষ আমাদের? সেলিব্রিটি? ক্যামেরা সারা ক্ষণ আমাদের পেছনে পেছনে। আমরা আলোর জগতের মানুষ! সারা ক্ষণ হাসছি! মানুষ ভাবে, আমরা বড় গাড়িতে ঘুরি, যেমন আনন্দ তেমন নাকি টাকা আমাদের! আমাদের অনেক মেয়েবন্ধু আছে। মেয়েদের অনেক ছেলেবন্ধু আছে। আমরা প্রায় পার্টি করি। মদ খাই। এত ভাল পৃথিবীতে আর ক’জনই বা আছে? সম্প্রতি আনন্দবাজার ডিজিটালের এক প্রতিবেদনে লকডাউন পরবর্তী মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি মুখ থুবড়ে পড়বে, এ রকম প্রতিবেদন পড়ে দেখলাম মানুষ কি রেগে গিয়েছে! আমি ওই প্রতিবেদন শেয়ার করে যা নয় তাই কমেন্ট পেলাম! রীতিমতো গালিগালাজ। অথচ আমরা দিন আনি দিন খাই যন্ত্রশিল্পীদের কথাই তো বলেছি। তা হলে? কে আমরা? অভিনেতা, গায়ক, চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের মানুষের দুঃখ থাকতে নেই? আমরা ক্যামেরার সামনে দুঃখ বলি না বলে? আজ যদি সেপ্টেম্বর মাসে আমি ফেসবুকে পোস্ট করি যে আমার হাতে কোনও শো নেই আমি খাব কী? লোকে তো সেটা বুঝবেই না, উল্টে গালিগালাজ করবে। বলবে ও গান গেয়ে অনেক টাকা রোজগার করেছে। ন্যাকামো করছে! আর গান তো ফেসবুকে সবাই গায়! অথচ টাকা শুধু ওরই। খুব রাগ... রাগ আরও বাড়বে... আরও। এত ঘৃণা মানুষ চারপাশের মানুষের জন্য পুষে রাখছে। খুব খারাপ সময় আসছে... ঘুম আসবে কী করে?
না, আর নিশ্চিন্তে ঘুমনো যায় না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy