অনির্দিষ্টকালীন কর্মনাশা দিন এড়াতে, অতিমারি রুখতে টলিউড ইন্ডাস্ট্রির ভূমিকা কী হওয়া উচিত?
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেশজুড়ে। বাদ নেই বাংলাও। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আক্রান্ত অভিনয় দুনিয়ার মানুষেরাও। ভরত কল, জয়শ্রী মুখোপাধ্যায়, অনুশ্রী দাস, রিজওয়ান রব্বানি শেখ, শ্রুতি দাস, তন্বী লাহা রায়, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, রয়েছেন তালিকায়। প্রায় রোজই সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। কেন ঘটছে এই ঘটনা?
কিছু দিন আগেই আনন্দবাজার ডিজিটালকে এক সাক্ষাৎকারে নির্বাচনী প্রচারের পাশাপাশি শ্রুতি দায়ী করেছিলেন অভিনেতা-কলাকুশলীদেরও। বলেছিলেন, ‘‘শ্যুটিংয়ে গিয়ে কে কতক্ষণ মাস্ক পরে থাকেন, সবটাই সবাই জানি।’’ পাশাপাশি এও বলেন, টেলিপাড়ায় একের পর এক শিল্পী, কলাকুশলী সংক্রমিত হওয়ায় ফের তাপমাত্রা মাপা শুরু হয়েছে। যা নাকি সাময়িক ভাবে বন্ধ ছিল। সেই সূত্র ধরেই তাঁর প্রচ্ছন্ন কটাক্ষ, 'ভরতদার (কল) কোভিড ধরা পড়ার পর সবাই ফ্লোরে, মেকআপ রুমে মাস্ক পরাটা আবারও বাড়াতে শুরু করল। আবার দেখব কত নিয়ম'!
তা হলে কি করোনা প্রকোপ সাময়িক কমায় টেলি পাড়ার নিরাপত্তা শিথিল হয়েছিল? পাশাপাশি, চ্যানেল অ্যাওয়ার্ড, হোলি উদযাপন, বর্ষবরণের মতো অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়েছে। যার শ্যুটিংয়ে তারকা, আমন্ত্রিতদের উপস্থিতি মেগা শ্যুটের থেকে সংখ্যায় বেশি ছিল।এখন প্রশ্ন উঠছে অতিমারির সময় এই ধরনের অনুষ্ঠানের খুব প্রয়োজন ছিল কি?
‘সাঁঝের বাতি’র ‘আর্য’ ওরফে রিজওয়ান এখনও নিজের বাড়িতে নিভৃতবাসে। জ্বর কমলেও প্রচণ্ড দুর্বল। কাশি রয়েছে। অভিনেতার দাবি, স্টুডিয়ো নিরাপত্তায় গাফিলতি নেই। উদযাপনমূলক অনুষ্ঠান ভাগে ভাগে শ্যুট হয়েছে। ফলে, ভিড়ভাট্টাও হয়নি।
অভিনয়ের পাশাপাশি রিজওয়ান সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে। স্টুডিয়ো পাড়া ছাড়াও তিনি ব্যস্ত শাসকদলের রাজনৈতিক প্রচারে। তাঁর মতোই বহু তারকা ২১-এর নির্বাচনের আগে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। মিছিলে, প্রচারে দেখা যাচ্ছে তাঁদেরও। জমায়েতে যোগ দানের পাশাপাশি শ্যুটিং করা কি তবে টেলিপাড়ায় করোনা ছড়ানোর নেপথ্য কারণ? মানতে নারাজ রিজওয়ান। তাঁর যুক্তি, প্রচারে গিয়ে প্রত্যেক তারকা ব্যক্তিগত ভাবে সতর্কতা মানেন। তাঁরা যখন স্টুডিয়ো চত্বরে পা রাখেন সেখানে শরীরের তাপমাত্রা, স্যানিটাইজেশনের মধ্যে দিয়ে যান। ফলে, প্রচার করতে গিয়ে করোনা নিয়ে ফিরছেন, এই দায় অভিনেতাদের দেওয়া যাবে না।
রিজওয়ানের চোখে দায়ী, ভাইরাসের গতি-প্রকৃতি এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন। অভিনেতার দাবি, ঋতু পরিবর্তনের সময় যে কোনও ভাইরাস এমনিতেই সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই সময় জ্বর, সর্দি, কাশি বেশি হয়। চিকিৎসা শাস্ত্র বলছে, দ্বিতীয় পর্যায়ের করোনা ভাইরাস আরও বেশি সক্রিয় এবং মারাত্মক। হয়তো মৃত্যুর সংখ্যা তুলনায় কম। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা এতে হু হু করে বাড়ছে। বেশির ভাগ সময়েই উপসর্গহীন হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না রোগ। ফলে শুধু টেলি পাড়া নয়, সর্বত্রই রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
স্টুডিয়ো ফ্লোরের নিরাপত্তা ১০০ শতাংশ নির্ভরযোগ্য বলে দাবি করেছেন ‘মোহর’, ‘খড়কুটো’র অনুশ্রী। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা যখন অসুস্থ হয়েছেন তাঁদের উপসর্গ এবং চিকিৎসকের মতামত জেনে নিয়ে তবে কাজের ছাড়পত্র দিয়েছেন শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ অভিনেত্রী জানিয়েছেন, ম্যাজিক মোমেন্ট’স নিরাপত্তার সঙ্গে কোনও আপোস করেনি। তার পরেও করোনার এত বাড়বাড়ন্ত কেন? অনুশ্রীর ক্ষোভ, এমন অনেকেই নাকি আছেন যাঁরা সর্দি-জ্বরে ওষুধ খেয়ে কাজ করছেন। করোনা টেস্টের ফলাফল না জানার আগে পর্যন্ত স্টুডিয়ো এসেছেন। এতেও রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। অভিনেত্রীর মতে, ভাইরাল জ্বর হোক বা করোনা, সম্পূর্ণ সুস্থ না হয়ে কাজে আসা নিজের জন্যেও ঠিক নয়। অপরের জন্যও নয়।
সতর্কতা শিথিল করার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ভরত কল। তাঁর মতে, ‘‘স্টুডিয়ো চত্বরে নিরাপত্তা কমেনি। আমরা ব্যক্তিগত ভাবে নিরাপত্তা কমিয়েছি। অভিনেতারা না হয় শ্যুটের সময় মাস্ক পরতে পারবেন না। শ্যুট না থাকলে তো পরতেই পারেন। কলা-কুশলীদের এই সমস্যা নেই। তবু তাঁরা পরছেন না কেন? কেন তাঁদের মাস্কহীন দেখে আপত্তি করছেন না অভিনেতারা?’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘সবাই ভেবেছিলেন করোনা আর ফিরবে না। ফলে, রাস্তায়-ঘাটে মাস্ক ছাড়াই ঘুরছিলেন অসংখ্য মানুষ। চিকিৎসক, বিজ্ঞানীরা কিন্তু বলেছিলেন কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আরও মারাত্মক হবে। সেই কথা বাস্তবে ফলতেই এখন সবাই ছটফট করছেন।’’
পাশাপাশি ভরত এও জানিয়েছেন, প্রতি দিনের আক্রান্ত জনসংখ্যার মধ্যে টেলি তারকাদের সংখ্যা কিন্তু নগণ্য। ০.১ শতাংশেরও কম। যেহেতু তারকারা সাধারণের চর্চায় থাকেন তাই তাঁদের নাম উঠে এলেই সবার ধারণা হয়, টেলি পাড়ায় সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বেশি। অভিনেতার সাফ জবাব, ‘‘অনেকেই পুরস্কার অনুষ্ঠান বা বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠানকেও দায়ী করছেন। চ্যানেলগুলি কিন্তু হাতেগোনা অতিথিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। যেমন, আমি একটি চ্যানেলে আপাতত অভিনয় করছি না বলে তারা আমায় ডাকেনি। আরেকটি চ্যানেলের অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান ভাগে ভাগে, অল্প সংখ্যক অভিনেতাদের নিয়ে শ্যুট হয়েছে। ফলে, রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনাই নেই।’’
যে হারে করোনার প্রকোপ বাড়ছে তাতে আবার লকডাউনের সম্ভাবনাই বেশি। অনির্দিষ্টকালীন কর্মনাশা দিন এড়াতে, অতিমারি রুখতে টলিউড ইন্ডাস্ট্রির ভূমিকা কী হওয়া উচিত? করোনায় আক্রান্ত একাধিক তারকার চিকিৎসা করেছেন ডা. তনভীর রেজা। তিনি বললেন, ‘‘রোগ লুকিয়ে কাজ করবেন না। সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত নিভৃতবাস ছেড়ে বেরোবেন না। অতিমারি ঠেকানোর একটাই দাওয়াই, মাস্ক।’’ চিকিৎসকের দাবি, গত ১ বছর ধরে তিনি অসংখ্য করোনা রোগীর চিকিৎসা করেছেন এন৯৫ মাস্ক আর মাস্ক শিল্ড পরে। পিপিই কিট অপর্যাপ্ত থাকায় অনেক সময়েই সেই সুরক্ষাও নিতে পারেননি। তার পরেও তিনি সুস্থ মাস্ক ব্যবহার করার জন্য। তনভীরের দাবি, অসুস্থতা থাক না থাক মাস্ক যেন মুখে থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy