দৃষ্টিকোণ
সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিটা এমনই, যেখানে মুখে একে অপরকে ভাই বলে সম্বোধন করলেও কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দিতে নারাজ! পুজোর সময়ে গুচ্ছের ছবি একসঙ্গে রিলিজ় হওয়া দেখলেই বোঝা যায়... তবে ছবির বাজারে একাধিপত্য যে প্রযোজনা সংস্থা ধরে রেখেছে, তারা শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসই। বাজারে ব্যবসা এবং ক্ষমতার নিরিখে বাকিদের চেয়ে এগিয়েই তারা। তবে এখন খেলাটা ঘোরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে সুরিন্দর ফিল্মস। তাদের সাম্প্রতিক ছবির লিস্ট বলে দেয়, বাজার ধরতে মরিয়া তারাও!
ভেঙ্কটেশের হাতে এখন তাবড় পরিচালক বলতে রয়েছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল, বিরসা দাশগুপ্ত, রাজ চক্রবর্তী। কিন্তু কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম এই তালিকায় নেই। আসলে সুরিন্দরের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ফেলেছেন তিনি। গত এক বছরে ‘ছায়া ও ছবি’, ‘দৃষ্টিকোণ’ এবং সম্প্রতি ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ করছেন। চলতি বছরে কোয়েল মল্লিক এবং যিশু সেনগুপ্তকে নিয়ে মৈনাক ভৌমিক ‘ঘরে অ্যান্ড বাইরে’ করেছিলেন সুরিন্দরের সঙ্গে। ছবি হিট। তার ঠিক পরে পরেই ভেঙ্কটেশ থেকে মৈনাকের ‘জেনারেশন আমি’ ঘোষণা করে দেওয়া হয়। এবং ভেঙ্কটেশ মৈনাকের সঙ্গে তিনটি ছবির চুক্তি করে। যে মৈনাক এত দিন ধরে কিছুতেই ভেঙ্কটেশের সঙ্গে ছবি করতে চাননি, তাদের সঙ্গেই কেন এই সন্ধি, সেটা অনুমেয়।
গুপ্তধনের সন্ধানে ছবির দৃশ্য।
সুরিন্দরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গে শ্রীকান্ত মোহতাকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা রয়েছে। এটাও ঠিক, কোয়েল-রানে পরিবারের মতো। ওদের সংস্থায় আমাদের ছবির ভিএফএক্স হয়। দু’জনের হলে দু’জনেরই ছবি চলে...’’
তবে জেন নেক্সটকে দিয়ে সুরিন্দরও গুটি সাজিয়ে ফেলেছে। নতুন পরিচালক সায়ন্তন ঘোষালের ‘সাগরদ্বীপে যকের ধন’, সৌকর্য ঘোষালের ‘রক্ত রহস্য’-এরও শুটিং শেষ হয়েছে। রাজ চক্রবর্তীর ভাবশিষ্য অভিমন্যু মুখোপাধ্যায় সুরিন্দর থেকে দুটো কমার্শিয়াল ছবি করছেন ‘গুগলি’ এবং ‘টেকো’। সুতরাং তিন ঘরানার তিন তরুণ পরিচালক আপাতত সুরিন্দরেরই ঘরের লোক! আবার সিনিয়র পরিচালকদের মধ্যে অনীক দত্তর ‘বরুণবাবুর বন্ধু’ও সুরিন্দরের ঘর থেকেই বেরোচ্ছে।
তবে তুরুপের তাসটাই বাকি! ভেঙ্কটেশ যে দেবের এক জন ‘রিপ্লেসমেন্ট’ খুঁজছে, বাজারে রটেছে সেটাও। কমার্শিয়াল ছবিতে অঙ্কুশ এবং যশকে মুখ করে হিট দেওয়ার চেষ্টাও করেছে তারা। কিন্তু দেবের মতো হিট দিতে পারেননি তাঁরা কেউই। খুব সম্ভবত নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে, ভেঙ্কটেশের শঙ্কর সিরিজ়ে দেব আর না-ও থাকতে পারেন। অথচ গোটা রাজ্যে দেবের অগুনতি ভক্ত! সেটাকেই বাজি করে রাজা চন্দের পরের রোম্যান্টিক ছবিতে দেব-রুক্মিণীকে জুটি করে এগিয়েছে সুরিন্দর।
তবে প্রতিযোগিতার বিষয়টা এড়িয়ে গিয়ে নিসপাল সিংহ বললেন, ‘‘কোনও প্রতিযোগিতা নেই। আমরা ইন্ডাস্ট্রিতে ৫০ বছর আছি। এত দিন সার্ভাইভ করেছি, এটাই তো বড় কথা।’’
কিন্তু সুরিন্দর ময়দান দখল করতে সফল হচ্ছে কী ভাবে? ভেঙ্কটেশের সঙ্গে সুরিন্দরের আদি বৈরিতার কথা সকলেরই জানা। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, ভেঙ্কটেশের ভিতরকার বিভিন্ন জটিলতার ফলেই ফাঁক সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে সুরিন্দর জায়গা করে নিতে সক্ষম হচ্ছে। প্রযোজকদের সঙ্গে নায়িকাদের সম্পর্কের বিভিন্ন সমীকরণ, অভিনেতাদের সঙ্গে সংস্থার চুক্তিপত্রে বজ্রআঁটুনি ইত্যাদিও কারণ।
সূত্র অনুযায়ী, টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে সুরিন্দর কয়েক কদম এগিয়ে। কারণ সুরিন্দরের সঙ্গে অন্য প্রযোজনা সংস্থার গাঁটছড়া বাঁধা। সম্প্রতি ভেঙ্কটেশ ধারাবাহিকের সংখ্যাও কমিয়ে দিয়েছে। তাদের ফোকাস এখন ওয়েব সিরিজ়।
আবার ভেঙ্কটেশের হাতে লগ্নিকারীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেখানে সুরিন্দর পিছিয়ে। তা ছাড়াও গোটা বছরে ভেঙ্কটেশের হিটের সংখ্যা বেশি। ‘আসছে আবার শবর’, ‘উমা’, ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’, ‘ব্যোমকেশ গোত্র’ সফল হয়েছে। কিন্তু সিনেমার মার্কেটে সারা বছর ধরে বিভিন্ন ছবির প্যাকেজ সাজিয়ে সুরিন্দরও যে সেই হিটের তালিকায় জায়গা করতে চাইছে, সেটাও স্পষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy