নন্দন চত্বরে এই ভাবেই হাজির হলেন এক ফুটবলপ্রেমী। নিজস্ব চিত্র।
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তার পরেই জানা যাবে পরীক্ষার ফল। পরীক্ষা মেসি-এমবাপের। কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামের চাপা টেনশনকে উপেক্ষা করতে পারল না ২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। রবিবার সকাল থেকেই নন্দন চত্বরে সিনেমার পাশাপাশি সিনেপ্রেমীদের আলোচনায় উঠে এল আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের নাম। স্নায়ুযুদ্ধে কে কাকে টেক্কা দেবেন, মেসি না কি এমবাপে— তা নিয়েও উঠল চায়ের কাপে ঝড়।
সাধারণত রবিবার চলচ্চিত্র উৎসবে ভিড় হয় সবথেকে বেশি। তার উপর ডিসেম্বর মাস। রবিবার দুপুরে নন্দন চত্বর ছিল বেশ ফাঁকা। তবে ভিড় বাড়তে থাকে বিকেল থেকে। তারাতলা থেকে ছবি দেখতে হাজির হয়েছিলেন সপ্তর্ষি মণ্ডল। ফ্রান্সের সমর্থক সপ্তর্ষি বললেন, ‘‘ছবি দেখেই বেরিয়ে যাব। ফ্রান্সের যা দল, আজকে আর্জেন্টিনার জেতার কোনও সুযোগ দেখছি না।’’ নিউ ব্যারাকপুর থেকে নন্দনে এসে নিয়মিত ছবি দেখছেন শীর্ষেন্দু রায়। বললেন, ‘‘আর্জেন্টিনা জিতবে। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টায় রুবেন ওসল্যান্ডের ‘দ্য ট্রায়াঙ্গল অব স্যাডনেস’ ছবিটা ছেড়ে আমি ফাইনাল ম্যাচ দেখব না। খেলার হাইলাইটস দেখে নেব।’’
রবিবার বিকালে উত্তর কলকাতা থেকে নন্দনে ডেইলি পাসের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল একদল কচিকাঁচা। তারা জানাল, সন্ধ্যার পাস পেলে সিনেমা দেখবে। কোলের উপর খোলা থাকবে মোবাইল। সিনেমা আর খেলা একসঙ্গে চলবে। মুকুন্দপুরের আর্জেন্টিনা-সমর্থক সুমন্ত মণ্ডল আবার আগেভাগে বাড়ি পৌঁছনোর পক্ষপাতী। তাঁর কথায়, ‘‘সকালে তো সিনেমা দেখলাম। এ বার মেসির কাপ পাওয়ার সাক্ষী থাকতে চাই।’’
ইতিমধ্যে নন্দনে হাজির হয়েছেন সিঙ্গুরের তপনকুমার রায়। তাঁর সাদা পাঞ্জাবিতে শোভা পাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপের লোগো এবং প্রতিযোগী দেশের পতাকা। এই পোষাকে নন্দনে কেন? ৭১ বছরের ‘তরুণ’-এর সপাট উত্তর, ‘‘ফুটবল মানুষকে বেঁধে রাখে— এই বার্তা ছড়িয়ে দিতেই উৎসবে হাজির হয়েছি। ফিরে গিয়েই টিভির সামনে বসব।’’
রবিবার নন্দন -১ এ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে পরিচালক সুব্রত সেনের ছবি ‘প্রজাপতি’ দেখানো হল। ছবির প্রদর্শন থেকে বেরিয়ে এসে এই ছবির অন্যতম অভিনেত্রী মুমতাজ সরকার জানালেন, তিনি ফাইনাল ম্যাচ দেখবেন না। কারণ জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘‘ভারত তো নেই! তা হলে আর কাকে সমর্থন করব। আর টিভিতে খেলা দেখার চেয়ে মাঠে নেমে ফুটবল খেলতেই আমার বেশি ভাল লাগে।’’ ফুটবল নয়, অভিনেতা, বাচিক শিল্পী সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের পছন্দ টেনিস। তাই সন্ধ্যার শোয়ে তিনি ছবি দেখতেই পা বাড়ালেন।
অন্য দিকে পোল্যান্ডের বাসিন্দা জান উৎসবের ডেলি পাস পেয়ে খুশি। কলকাতায় এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁর দেশ অনেক আগেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে। সেই প্রসঙ্গ টেনেই বললেন, ‘‘নিজের দেশ যখন নেই, তখন ফুটবলের তুলনায় সিনেমা দেখাটা আমার কাছে বেশি গুরুত্তপূর্ণ।’’
উল্লেখ্য, রবিবার সময় যত কিক অফের দিকে গড়িয়েছে, ততই সাধারণ মানুষের ভিড় কমেছে নন্দনে। কিন্তু সিনেপ্রেমীরা থেকে গিয়েছেন সিনেমার টানে। কিছু সিনেপ্রেমী আবার উৎসবে বসেই খেলা দেখতে চাইলেও সেই উদ্যোগে জল ঢেলেছে নন্দনের দুর্বল মোবাইল নেটওয়ার্ক।
রবিবার বিকেলে শিশির মঞ্চে সত্যজিৎ রায় স্মারক বক্তৃতা দেন বলিউডের বর্ষীয়ান পরিচালক সুধীর মিশ্র। বিষয় ছিল ‘পরিবর্তিত সময়ে সমকালীন সিনেমা এবং ওটিটির গুরুত্ব’। অন্য দিকে সিনে আড্ডার বিষয় ছিল ‘সুর না গায়ক’। গানে আড্ডায় প্রিয় তারকাদের দেখতে শ্রোতাদের ভিড় ছিল লক্ষনীয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy