ফাইল চিত্র।
কে ‘স্যাটা বোস’? ‘চৌরঙ্গী’র সাহিত্যিক মণিশংকর মুখোপাধ্যায়ের সৃষ্টি? নাকি ছবিতে উত্তমকুমারের অভিনয়ে অমর চরিত্র?
১৯৬৮ সালে ছবি মুক্তির পরে এই নিয়ে দেদার চর্চা হয়েছে। ২০১৯-এ সৃজিত মুখোপাধ্যায় ‘হোটেল শাহজাহান রিজেন্সি’ ছবিতে নতুন ভাবে উপস্থাপিত করেছেন তাঁকে। এই ২০২২-এ সাহিত্যিকের সেই উপন্যাসের ৬০ বছর পূর্তি। যে উপন্যাস অনূদিত হিন্দি, ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ, রাশিয়ান, জাপানিজ, চাইনিজ ভাষাতেও। ‘স্যাটা বোস’-এর আকর্ষণ কিন্তু কমেনি। কে তিনি, সেই প্রশ্নও হারায়নি। কিন্তু বাস্তবে এই নামে আদৌ কি কেউ ছিলেন?
আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল সাহিত্যিকের সঙ্গে। শংকরের কথায়, ‘‘১৯৫০ থেকে ১৯৫২ সাল। ওই সময়ে আমি দুই ‘স্যাটা বোস’কে চিনতাম। প্রথম জন ইস্টার্ন রেলওয়ের পদস্থ কর্মী। অবসরের পরে দাস কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কথায় কথায় আলাপ। তখনকার দিনের গড়পড়তা বাঙালির মতো ছিলেন না। সাহেবি কেতার মানুষ। সব সময় টিপটপ থাকতেন। স্কাউটও করতেন। তিনি নিজের নাম নিজেই ছেঁটে ‘স্যাটা বোস’ হয়েছিলেন!’’
শংকরের দ্বিতীয় ‘স্যাটা বোস’ স্পেনসেস হোটেলের এক কর্মী। সাহিত্যিক প্রথম জীবনে যাঁর অধীনে চাকরি করতেন, সেই ব্যারিস্টার নোয়েল ফ্রেডরিক বারওয়েল স্পেনসেস হোটেলে থাকতেন। কর্মসূত্রে সেখানেও সাহিত্যিকের অবাধ যাতায়াত। ‘স্যাটা বোস’ নামে পরিচিত সেই ভদ্রলোকও রীতিমতো সাহেবসুবো। বাড়তি জৌলুস, অভিভাবকসুলভ আচরণ। এই দুই ব্যক্তিকে এক ছাঁচে ঢেলেছিলেন সাহিত্যিক। যদিও শংকরের দাবি, তাঁর প্রকৃত ‘স্যাটা বোস’ ওই প্রথম ব্যক্তি, সত্যচরণ বোস।
আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল সত্যচরণ বোসের পরিবারের সঙ্গেও। কী বলছেন তাঁরা? প্রপৌত্রী সুদীপ্তা বোস জানিয়েছেন, তাঁর প্রমাতামহের সঙ্গে ভালই পরিচয় ছিল শংকরের। আসল নাম সত্যচরণ বোস। সাহিত্যিক সামান্য বদল ঘটিয়ে করে নিয়েছেন সত্যসুন্দর বোস। তাঁর আদলেই গড়া উপন্যাসের বিখ্যাত চরিত্র। পরে সেই উপন্যাস ‘চৌরঙ্গী’ অবলম্বনে ছায়াছবিও হয়। যদিও সত্যচরণ বোস সেই ছবি দেখে যেতে পারেননি। জানতেও পারেননি, শংকর এবং উত্তমকুমার মিলে কী ভাবে তাঁকে কালজয়ী করে গিয়েছেন!
সুদীপ্তার কথায়, ‘‘শুনেছি, ছবি মুক্তির পরে বাড়িতে নাকি হইহই পড়ে গিয়েছিল। পড়শি, পরিজনদের কথা বাদই দিন। ছবির দৌলতে বহু অপরিচিতও নাকি সত্যচরণ বোসকে দেখতে ছুটে এসেছিলেন। সবাই জানতে চাইতেন, উনিই কি আসল স্যাটা বোস?’’ ব্যক্তিজীবনে কেমন ছিলেন ‘স্যাটা বোস’? সুদীপ্তা জানিয়েছেন, আচরণে সাহেবিয়ানা থাকলেও পুজো বা অনুষ্ঠান বাড়িতে তিনি ধুতি-পাঞ্জাবিতে পাক্কা বাঙালি। উচ্চতায় মাঝারি আকারের মানুষটির চলনে-বলনে নাকি চূড়ান্ত স্মার্টনেস চুঁইয়ে পড়ত। সে কথা স্বীকার করেছেন শংকর নিজেও। বলেছেন, ‘‘এক বার আড্ডাচ্ছলে সত্যচরণবাবুকে কেউ প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি কি দাসের সংস্থায় কাজ করেন? সঙ্গে সঙ্গে জবাব এসেছিল, আমি আর দাস একসঙ্গে কাজ করি!’’
উত্তমকুমার কি শংকরের সৃষ্ট ‘স্যাটা বোস’ হতে পেরেছিলেন? এই প্রশ্নে সাহিত্যিকের জবাব, ‘‘আমি আর উত্তমবাবু পাশাপাশি বসে ছবিটা দেখেছিলাম। শেষ হতেই ওঁর প্রশ্ন— ‘কেমন দেখলেন? ঠিক মতো ফোটাতে পেরেছি?’ সাহিত্যিক সে দিন তৃপ্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, আপনার অভিনয় আমার লেখাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। আপনার হাতে পড়ে আমার ‘স্যাটা বোস’ জীবন্ত!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy