Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Meghan Chakraborty

Meghan: করোনা আক্রান্ত হয়ে বাবা চলে গেলেন হাসপাতালে, আমার চারপাশটা যেন ফাঁকা হয়ে গেল

সেই দিনগুলো কী ভীষণ একঘেয়ে। নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইনে ক্লাস। দিদিমণিদের সঙ্গে অল্প কথা। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতেও ভাল লাগত না।

মেঘন চক্রবর্তী।

মেঘন চক্রবর্তী।

মেঘন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২১ ২১:৩৫
Share: Save:

২০২০-তে দূর থেকে প্রথম দেখেছিলাম কোভিডকে। দেখেই মনে হয়েছিল, কী ভয়ানক দুষ্টু রাক্ষস! প্রথম ঢেউ আটকাতে গত বছরেও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সব কিছু। আমার শ্যুটিং, পড়াশোনা, খেলাধুলো। মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল ভীষণ। তখনও কাছ থেকে করোনাকে দেখিনি। ফলে, বুঝতে পারিনি আসলে রোগটা কতটা ভয়ঙ্কর। ২০২১-এ দেখলাম। বাবা যখন কোভিড পজিটিভ হলেন। সারা বাড়ি তোলপাড়। দা-ভাই মনখারাপ করে বসে। মা সারাক্ষণ বাবাকে নিয়ে ব্যস্ত। আর আমার ‘খুব ভাল বন্ধু’ বাবা আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি!

কী করে বাবার কোভিড হল? জানি না। তবে আচমকাই বাবার প্রচণ্ড জ্বর। কিছুতেই কমছে না। ২-৩ দিন পর থেকে আচমকা শ্বাসকষ্ট শুরু। ডাক্তারকাকু বললেন, আর বাড়িতে রেখে বাবার চিকিৎসা সম্ভব নয়। বাবা চলে গেলেন হাসপাতালে। আমার চারপাশটা যেন ফাঁকা হয়ে গেল। আমি বাড়ির সব থেকে ছোট্ট সদস্য। ক্যালকাটা গার্লস স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। আমি কী করতে পারি? একটাই কাজ করেছিলাম তখন। সারাক্ষণ সমস্ত ঠাকুরকে ডেকেছি আর বলেছি, বাবাকে ভাল করে দাও। বাবা যেন সুস্থ হয়ে খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসেন।

সেই দিনগুলো কী ভীষণ একঘেয়ে। নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইনে ক্লাস। দিদিমণিদের সঙ্গে অল্প কথা। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতেও ভাল লাগত না। তা ছাড়া, মুখোমুখি দেখা না হলে কি আড্ডা জমে? খেলাধুলোও বন্ধ। মাঠে যাওয়া নেই। মা যেন বাড়িতে থেকেও নেই। তার থেকেও বড় কথা, শ্যুটিংয়েও যাওয়া নেই। ওখানেও কত লোকজন, ব্যস্ততা। সেটে সবাই আমার সঙ্গে খেলতেনও। মনটা ভাল হয়ে যেত। আমার তাই সময় কাটত না, মনখারাপও কমত না। খেলনাপাতি নিয়ে কত খেলব? বাবা অনেক গল্প বলেন। সেটাও শুনতে পারছিলাম না। দাদা তো সারাক্ষণ বইয়ে মুখ গুঁজে। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। অনেক বেশি পড়া।

এ ভাবে দিন ১৫ কাটার পর অবশেষে খুশির খবর। বাবা হাসপাতাল থেকে ছুটি পাচ্ছেন। শুনেই নেচে উঠেছিলাম। মায়ের মুখে এত দিন পরে হাসি। দেখি, খবর শুনে দাদাও বই ফেলে উঠে এসেছে! তখন আমার কেবলই মনে হচ্ছিল, ঠাকুরকে বললে পৃথিবীর ওপর থেকে করোনা সরিয়ে দিতে পারে না? আবার আগের মতো খেলব সবাই। বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেব। কত দিন ফুচকা খাইনি। বাবা বাড়ি ফিরতেই বলে রেখেছি, বিরিয়ানি, চাউমিন, পিৎজা— সব খাব এক এক করে। যদিও বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই বাবার কোলে চড়িনি। কয়েক দিন বাবা পুরো বিশ্রামে ছিলেন। তার পর ঘরে ঢুকেছি। জড়িয়ে ধরেছি বাবাকে। বাবা এখনও পুরোপুরি সুস্থ হননি। ফুসফুসে ফাইব্রোসিস হয়েছে। যার জন্য এখনও অল্প শ্বাসকষ্ট আছে।


বাবাকে দেখে খুব বড় শিক্ষা হল আমার। নিজেকে সুস্থ রাখতে মায়ের কথা শুনে ভিটামিন, প্রোটিন, গরম জল খাচ্ছি। নিয়মিত হাত পরিষ্কার করছি। বাইরে এক দম বেরোচ্ছি না। মাস্ক, স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখছি। এ ভাবে সবাই চললে আমরা পারব না, করোনা রাক্ষসটাকে হারিয়ে দিতে?

অন্য বিষয়গুলি:

Tollywood Actress Meghan Chakraborty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy