তিন বন্ধু। রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী।
তিন বন্ধুর গল্প। ১৮ বছর পরে দেখা হয় স্কুলের তিন বন্ধুর। গল্প-আড্ডা-স্মৃতিচারণ-ঝগড়া... তার পর? ঘটনা বাঁক নিতে থাকে অন্য দিকে। আগামী ২ অগস্ট মুক্তি পাচ্ছে ‘সামসারা’। পরিচালক অভিজিৎ গুহ ও সুদেষ্ণা রায়। এই ফিল্ম নিয়েই আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে আড্ডায় মাতলেন দুই পরিচালক ও তিন অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী। উঠে এল সাম্প্রতিক এক প্রসঙ্গও।
‘সামসারা’-র ট্রেলার দেখে তো মানুষের উৎসাহ দ্বিগুণ হয়েছে?
অভিজিৎ: সেটা এক দিক থেকে যেমন ভাল, অন্য দিকে তেমনই চিন্তারও বিষয়। মানুষের এক্সপেক্টেশন বাড়ছে। কী যে হবে!
সুদেষ্ণা: রানার এটাই সমস্যা। ও এখন এ রকম একটা কথা বলল, পর ক্ষণেই দেখবেন আবার এই বক্তব্যের উল্টো কথা বলবে।
ঋত্বিক: ট্রেলার তো আর ছবি নয়। রহস্যের জন্য অপেক্ষা করুন।
এই ট্রেলার দেখেই মনে হচ্ছে কিন্তু এটা ছেলেদের গল্প। মেয়েরা কি তবে দূরে দূরে?
অভিজিৎ: গল্পটা ভাবুন। বহু বছর পর তিন ছেলে বন্ধুর দেখা। আমি কোনও ক্ল্যানকে আক্রমণ করতে চাই না। তবে বহু বছর পরে ছেলের দলের দেখা হলে তারা নিজেদের অনেক বেশি কানেক্ট করতে পারে। মেয়েরা সেটা পারে না। আমাদের সমাজে তো তাই দেখেছি।
সুদেষ্ণা: কে বলেছে তোকে? আর কোন সোসাইটির কথা বলছিস তুই? শোন, মেয়েরা বরং অনেক বেশি কানেক্ট করে।
অভিজিৎ: হ্যাঁ, মেয়েরা অনেক বেশি কানেক্ট করে।
সুদেষ্ণা: এই দেখুন কেমন কথা বদলে গেল। এটাই বলছিলাম।
( সকলের হাসি)
অভিজিৎ: শেষ হয়নি কিন্তু আমার কথা। আমি বলতে চাইছি মেয়েরা কানেক্ট করলেও ছেলেদের প্রকাশটা দেখতে পাওয়া যায়।
সুদেষ্ণা: আরে, কুড়ি বছর পর মেয়েদের দেখা হলে মেয়েদের মধ্যে যদি রাইভালরি থাকে সেটাও চলে যায়।
তিন নায়ক এত চুপ কেন?
ঋত্বিক: আমি বিষয়টাকে ছেলে-মেয়ে হিসেবেই দেখতে চাই না। রানাদা যেমন বলল এটা তিন বন্ধুর গল্প। তবে তাদের জীবনে অনেক ইন্টারেস্টিং নারী আছে। বিষয়টা এমন নয় যে এই তিন পুরুষের চারিদিক খটখটে।
ইন্দ্রজিৎ: সত্যি, এটা ছেলে-মেয়ে, এই বিষয়ে সীমিত নয়। সমদর্শীর চরিত্রটা তো ভীষণ ইন্টারেস্টিং।
সুদেষ্ণা: এই, আর বোলো না! ওটা রহস্য। আসলে কী জানেন, আমরা ছবির গল্পটা তো বলতে পারছি না। তাই এ রকম মনে হচ্ছে।
সুদীপ্তা চক্রবর্তীও দেখছি খানিক আফসোস করেছেন এ ছবিতে ছেলেদের প্রাধান্য নিয়ে?
সুদেষ্ণা: সুদীপ্তা বলেছে, তার সঙ্গেই বলেওছে, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। এখন না চরিত্র কত বড় সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্ব ছবির বিষয়ে। এই ছবিতে সুদীপ্তা, তনুশ্রী, দেবলীনা আর আর্যার চরিত্রের নির্মাণও কিছু কম ওজনের নয়।
এ ছবিতে রাহুল আর আর্যা-র এক নতুন জুটি পাওয়া যাবে। রাহুলের কী মনে হয়?
রাহুল: আর্যা নতুন কাজ করে, ভাল লাগল। কেমিস্ট্রি কিন্তু মেয়ে-পুরুষে হয় না। ঋত্বিক, ইন্দ্রজিতের সঙ্গেও দারুণ কেমিস্ট্রি।
'সামসার'য় ভিন্ন ধরণের গল্প শোনালেন পরিচালক অভিজিৎ গুহ ও সুদেষ্ণা রায়।
আপনি কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন। কোন কেমিস্ট্রি সবচেয়ে অকর্ষণীয়?
রাহুল: সেটা বলা যাবে না। হলে আসতে হবে।
ইন্দ্রজিৎ এই বন্ধুত্বের গল্প আপনার কাছে কেমন?
ইন্দ্রজিৎ: বলতে পারেন স্কাই হাই। তবে এত ক্ষণ যে ছেলে আর মেয়ে নিয়ে কথা হচ্ছিল, ছবিতে ঋত্বিক ওই যে অসম্ভব সরু রাস্তায় বাইক চালিয়ে যাচ্ছে, তিন জন বন্ধু জাপটে ধরে বসে সেই বাইকে, এক চুল নড়লেই খাদ! এটা বোধহয় মেয়েরা পারত না।
ঋত্বিক: আমি ওই তর্কে যাব না। মহিলারা বসতে পারত কি না! মানবজাতির পক্ষ থেকে বলছি, ওটা অন্য কোনও পুরুষের পক্ষেও সম্ভব হত কি না জানি না। আসলে তো ওটা রাস্তা নয়, পাহাড়, পাথর, তার ওপর বাইক। হাল্কা ঠেকিয়ে রেখেছি শরীরের সঙ্গে বাইকটা।
রাহুল: আমি হচ্ছি যে জন আছে মাঝখানে।
কোনও সময় মনে হয়েছে আপনার সহ-অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী? ফাটিয়ে সিন করে বেরিয়ে যাবে?
রাহুল: ঋত্বিক এমন অভিনেতা, ওর সঙ্গে থাকলে অভিনয়টা আরও ভাল হয়।
ইন্দ্রজিৎ: ঠিক তাই, মনে হয় আরও ভাল হল কাজটা।
ঋত্বিক: অভিনেতার কাজ সিনটাকে এনহ্যান্স করা, সহ-অভিনেতার থেকে ক্রেডিট খেয়ে নেওয়া নয়। ও সব স্টারেদের গল্প, এর অভিনয়টা খেয়ে নেওয়া... ওরটা খেয়ে নেওয়া।
ইন্দ্রজিৎ: এ রকমটা তো হয়নি। উল্টে সহযোগিতা পেয়েছি আমরা।
মনিটরে নিজের শট দেখছেন ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী।
এই তিন জনকেই কেন নেওয়া হয়েছিল?
সুদেষ্ণা: ছবিটা দেখলেই বোঝা যাবে। ঋত্বিক জার্নালিস্ট। রাহুলের ব্যবসা। ইন্দ্রজিৎ কর্পোরেট সেক্টর থেকে। এক জন ছবি দেখে বলেছেন, তিনি বুঝতে পারছেন কে কোন চরিত্রে।
কত নম্বর ছবি ‘সামসারা’?
সুদেষ্ণা: পনেরো। তবে এ ক্ষেত্রে একটা কথা বলতে চাই। সম্প্রতি একটা ফেস্টিভ্যালে বাংলা ছবির নির্মাণ নিয়ে তর্কও করেছি। আমরা ছবি বানাই দর্শকের জন্য, নিজের জন্য নয়। শুধু নিজের জন্য ছবি তৈরি করলে কবিতার মতো দৃশ্য তৈরি করে পকেটে রেখে দিতাম।
ঋত্বিক: একদম তাই। তবে সব দর্শককে তুষ্ট করার মাথায় রেখেও ছবি হয় না।
কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির লোকজন যে ভাবে রাজনীতিতে চলে আসছেন তাতে মনে হচ্ছে না, শুধু দর্শক নয়, ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজনীতির রং নিয়ে ভাবতে হবে?
সুদেষ্ণা: দেখুন, রাহুল, ঋত্বিক, ইন্দ্রজিৎ— এদের অভিনয়ের জন্য আমি ছবিতে নেব। কে লাল? কে হলুদ? সবুজ? এটা একেবারেই ভাবব না। এ বার ওরা করবে কি করবে না সেটা ওদের ব্যাপার।
ঋত্বিক: কোনও মানুষ চাইলে নিশ্চয় রাজনীতি করবে।
আপনাকে কেউ রাজনীতিতে যোগ দিতে বলেছে?
ঋত্বিক: নাহ! একেবারেই না। তবে কে কোন দল, তা দিয়ে তাকে ছবিতে ডাকা হয় না।
ছবি- সংগৃহীত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy