বেগম আখতার। ছবি: ফাইল চিত্র।
বিশ্রুত শিল্পী, গজলসম্রাজ্ঞী বেগম আখতারের জীবনের ওঠা-পড়া নিয়ে গল্প গানে সাজানো হয়েছে এক জীবন। মহিলা দিবসে সেই জীবনকে সম্মাননা জানাচ্ছে স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে (SOAS)। আর এই ‘মিউজিক্যাল’-এর উপস্থাপক একজন বাঙালি।কানন-গিরিজাদেবীর ছাত্রী বঙ্গতনয়া, বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী চন্দ্রা চক্রবর্তী।
কোনও ভারতীয় শিল্পীকে নিয়ে এত বড় মাপের ‘মিউজিক্যাল’ সে দেশে প্রথম। গান, অভিনয়, পাঠের মধ্যে দিয়ে আখতারিকে ফিরে দেখা।
তখন বয়স মাত্র চার৷ বিষ মেশানো মিষ্টি খেয়ে হাসপাতালের পথেই মারা যায় বোন জোহরা৷ ছোট্ট বিবি তার সব সময়ের সঙ্গীকে খুঁজে ফেরে৷ পায় না৷ মাকে বার বার শুধায় বোনের কথা৷ মা বলে, ‘বোন গিয়েছে আল্লাহের বাড়ি…’। সুতপা মুখোপাধ্যায়ের ‘বেগম আখতার দ্য কুইন অব গজল’- গ্রন্থ থেকে জানা গেছে বহু দিন পর্যন্ত আখতারিবাঈ জানতেনই না, বোন সত্যি কোথায়৷ ছোট্ট বিবি থেকে ‘আখতারিবাঈ ফইজাবাদি’ হওয়ার পথে পরের পর ধাক্কা আসে। সে সব পেরিয়েই তিনি চিরকালের গজলসম্রাজ্ঞী।
চন্দ্রা চক্রবর্তী
লখনউয়ের প্রসিদ্ধ ব্যারিস্টার, নবাব ইশতিয়াক আহম্মদ আব্বাসিকে বিয়ের পর আওধের ‘এলিট’ সম্প্রদায়ে তিনি সমাদৃত হন৷ বাঈজি থেকে বেগম হলেন আখতারি৷
তাঁর জীবনে গল্পের শেষ নেই। বছর তিনেক বেগমের জীবন নিয়ে গবেষণা করেছেন চন্দ্রা। তাঁর মধ্যেই যেন আজ বাস করেন আখতারি।
লন্ডনে থেকে বিভিন্ন ধারার গান নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি, সে দেশে গত কুড়ি বছর ধরে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রসারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চন্দ্রা। কবি টি এম আহমেদ কায়সার-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে সৌধ, সোসাইটি অব পোয়েট্রি অ্যান্ড ইন্ডিয়ান মিউজিক নামে এক সংস্থা শুরু করে ব্রিটেন জুড়ে গত দশ বছর নানা ধরনের অনুষ্ঠান করছেন। সৌধর পাশাপাশি গত বছর থেকে নিজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে চন্দ্রা শুরু করেন কলাকার, যার উদ্দেশ্য, নতুন প্রতিভাবানদের সুযোগ দেওয়া, লন্ডনে জন্মানো শিল্পীদের নিয়ে কাজ করা। চন্দ্রা বলছিলেন, ‘‘গিরিজাদেবীর কাছে শেখার সময় থেকেই ঠুংরি নিয়ে কাজের কথা ভাবতাম। এর পর রেবা মুহুরীর একটি বই পড়ে বড়ি মোতিবাঈকে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। বড়ি মোতির জীবন নিয়ে সেই ‘মিউজিক্যাল’ পরিবেশন করি উইম্বলডন আর্ট স্পেসে। অ্যান্ড, উই রিসিভড আ স্ট্যান্ডিং ওভেশন! এর পরই আরও বড় ক্যানভাস নিয়ে ভাবি। গত কয়েক বছর বেগমকে নিয়ে পড়াশোনাটা কাজে লাগে।’’
বেগমের জীবনের নানা কাহিনি নিয়ে চন্দ্রা শুরুতে ৪৫ মিনিটের একটি পরীক্ষামূলক ‘মিউজিক্যাল’ তৈরি করেন, যা পরিবেশিত হয় সৌধ-র এক অনুষ্ঠানে রিচ মিক্স থিয়েটারে। তা বিপুল জনপ্রিয় হওয়ায় ৯০ মিনিটের ‘মিউজিক্যাল’ অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনের ঐতিহ্যপূর্ণ রবিশঙ্করের স্মৃতিধন্য ভারতীয় বিদ্যাভবনে।
বাঙালি মেয়ের আখতারির এই কথা-গান, নারীর ক্ষমতায়নকেই তুলে ধরবে ভিন্ন দেশে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy