জয়া আহসান। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।
১০ অগস্ট মুক্তি পেতে চলেছে বিরসা দাশগুপ্ত পরিচালিত ‘ক্রিসক্রস’। সেই ছবির ‘মিস সেন’ অর্থাত্ জয়া আহসান ঝটিতি সফরে এসেছিলেন কলকাতায়। আনন্দবাজার ডিজিটালের আড্ডায় মুখোমুখি অভিনেত্রী।
মিস সেন কেমন আছেন?
(হা হা হা…) ভাল। আপনারা মিস সেনকে দেখুন ১০ অগস্ট। মিস সেনের আরও ভাল লাগবে।
মিস সেন, অর্থাত্ বিরসা দাশগুপ্তর মিস সেন। ‘ক্রিসক্রস’-এর মিস সেন। তিনি কেমন মানুষ?
এক কথায় স্টাবার্ন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, বোল্ড, ভয়েজ রেজ করে কথা বলে। আমার সঙ্গে বেশ কিছুটা অংশে মিল নেই।
তাই?
হ্যাঁ, আসলে আমার স্টাইলটা অন্য রকম। আর মিস সেনকে অন্য ভাবে প্রজেক্ট করেছি। তবে যতটা স্ক্রিপ্ট শুনেছিলাম এই ছবিতে সব চরিত্রের ভেতর এটাই আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে। এমন চরিত্র আগে করিনি। অনেক গ্রে শেডস আছে। রাগ, ঘৃণা সবই এক্সট্রিম।
পাঁচটি মেয়ের গল্প, এখনকার ইন্ডাস্ট্রিতে সেটাও তো অন্য রকম…
দেখুন, ফিমেল অ্যাক্টরদের একটা ক্ষোভ সব জায়গায় থাকে, উওম্যান সেন্ট্রিক কাজ কম হয়। মেল ডমিনেটিং টেনডেন্সি তো আছেই। সে জায়গা থেকে ভাল লেগেছে। পাঁচটা মেয়ের চরিত্র, অভিজ্ঞতা, জার্নি কেউ না কেউ রিলেট করতে পারবে। কার না পাওয়ার প্লে করতে ভাল লাগে বলুন…।
বিরসার সঙ্গে তো আপনার প্রথম কাজ?
হ্যাঁ। বিরসা খুব সর্টেড। ও জানে ও কী চায়। খুব অল্প সময়ে কাজ তুলে নেয়। ওর টিমও খুব ভাল। সব ইয়ংরা কাজ করছে। নতুনদের সঙ্গে কাজ করার আলাদা এনথু থাকে।
আরও পড়ুন, সৃজিত আমার বন্ধু, গাইড, মেন্টর, বললেন রাজনন্দিনী
কোনও রেফারেন্স থেকে কি মিস সেনের চরিত্র ফর্ম করলেন?
এটাতে রেফারেন্স হিসবে কাউকে ভাবার সুযোগই হয়নি। এত লেস প্রিপারেশনে কোনও কাজ করি না আমি। এটা করব-করব না, হচ্ছে-হচ্ছে না করে ফাইনালি হয়েছে। তবে অ্যাক্টরের যতই প্রিপারেশন থাকুক, যখন ওই স্পেস, অ্যাম্বিয়েন্স, ওই লোকজনের মাঝে পড়বে তখনই আসল। আমি বিশ্বাস করি আমার ওপর ক্যারেক্টার ভর করে। অ্যাক্টিং আসলে স্পিরিচুয়াল, জানেন। না হলে সম্ভব নয়। স্পেস ইজ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট। আমার সেটে সে জন্য আমি এক বার ঘুরে নিই। জিনিসগুলো ধরে দেখি, ওটা আমার বিশ্বাস করার চেষ্টা করি। এটা আমার স্টাইল।
‘ক্রিসক্রস’-এর ট্রেলারে যে কস্টিউমে আপনাকে দেখা যাচ্ছে, তেমন কিন্তু আপনাকে আগে দেখেননি দর্শক।
এটাই রিয়েল জয়ার কস্টিউম। আসলে কি হয়েছে, আমাদের কস্টিউম করেছে জয়ন্তী, খুব ভাল কাজ করেছে। কিন্তু আমার এত তাড়াহুড়ো ছিল। তখন আমার ওয়ার্ড্রোবের সঙ্গে কিছু মিলে গেল। ও অ্যাপ্রুভ করল।আমিও পরে নিলাম। ওগুলোই আসলে আমি।
‘ক্রিসক্রস’-এর লুকে জয়া।
টলিউডে ‘সেন’ পদবি যাঁদের তাঁরা কিন্তু দর্শকদের মনে আলাদা জায়গায় থাকেন…
ও, আচ্ছা?
এই তো, যেমন ধরুন সুচিত্রা সেন…অপর্ণা সেন।
হা হা…। ঠিকই। একটা অরা নিয়ে থাকেন, তাই তো?
ঠিকই। ‘ক্রিসক্রস’-এ মিস সেনও কি তেমন?
দেখুন, অন্যদের থেকে মিস সেনের ডেফিনিটলি ডিফারেন্স আছে। এটুকু বলতে পারি। কিন্তু অত ডিটেলে তো দেখানোর সুযোগ নেই। মূল হিরো কিন্তু গল্প। আর এখানে সবাই খুব ভাল করেছে।
এই যে আরও অনেকের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করে নেওয়া, সমস্যা মনে হয়নি?
দেখুন, ‘রাজকাহিনি’-তে আরও ছোট জায়গা ছিল। ছোট জায়গায় নিজেকে প্রমাণ করাটা বেশি চ্যালেঞ্জিং। তা ছাড়া যখন আমি কোনও চরিত্র করব বলে রাজি হই, তখন অন্যদের নিয়ে ভাবি না। কে কত স্ক্রিন প্রেজেন্স পেল, কার কত প্রোমোশন হল ভাবি না। আমি শুধু নিজেরটুকু নিয়ে ভাবি। এটা আমার স্কুলিং। সে জন্যই হয়তো ক্যারেক্টার প্লে করতে পছন্দ করি। হিরোইন হওয়ার আগ্রহ ছিল না আমার।
পাঁচ জন অভিনেত্রী একসঙ্গে, ঝামেলা হত কি?
অনেকেরই এমন ধারণা আছে। কিন্তু আমাদের তো কোনও ঝামেলা হয়নি। ওদের সঙ্গে কাজ করে আমার খুব ভাল লেগেছে। মিমি, নুসরতের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ। তবে আগে থেকেই আলাপ ছিল। আর সোহিনী, প্রিয়ঙ্কা তো আগের বন্ধু। আমাদের সবার শুটিং একসঙ্গে ছিল এমনও নয়। দু’-তিন দিন ছিল একসঙ্গে। এখানে ঋদ্ধিমাও রয়েছে। ও আমার খুব কাছের। শুটিং শেষ করার পর আফটার পার্টিও হত আমাদের।
আপনার আগে এই চরিত্রে অন্য এক অভিনেত্রীকে ভাবা হয়েছিল, জানেন?
হুম জানি।
আরও পড়ুন, প্রেম ছাড়া কি আর প্রশ্ন নেই? বলছেন সোহিনী
সেটাতে সমস্যা হয়নি?
না সেটা নিয়ে সমস্যা হয়নি। ওরা নিশ্চয়ই তখন অন্য ভাবে ভেবেছিল। আমি করাতে অন্য ভাবে ভেবেছে। প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট কিছু পোটেনশিয়াল আছে। ওরা হয়তো সেটা কাজে লাগাতে চেয়েছিল। আর উনি এক জন সিনিয়র অভিনেত্রী। অসাধারণ অভিনেত্রী। ওঁর কিছু রিজার্ভেশন ছিল, সেগুলো যুক্তিসঙ্গত ছিল বলেই হয়তো রাজি হননি। আমার কাছে যখন এল, তখন আমিও দেখে নিয়েছিলাম আমার আদৌ করার কিছু আছে কি না, এমন কাজ আগে করেছি কি না। আর স্ক্রিপ্টও অনেক মডিফাই হয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা প্রোডাকশন হাউজও একটা ব্যাপার ছিল।
মানে?
আমি এই প্রোডাকশনের সঙ্গে আগে কাজ করেছি। এই ছবিটার জন্য কিন্তু বিরসা প্রথমে বলেনি। আমাকে প্রোডাকশন থেকে বলা হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম, আমরা তো একসঙ্গেই কাজ করছি। আমি কখনও ঝামেলায় পড়লে ওঁদের বলতে পারব। আর এই ছবিটা আমি করলে যদি ওঁদের কোনও ফেভার হয় আর আমার কোনও ক্ষতি না হয়, আমি করব না কেন?
এর পরে তো সৃজিতের ‘এক যে ছিল রাজা’ আসছে আপনার?
ওটা বোধহয় পুজোর সময় রিলিজ করবে।
খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আপনার?
ওখানে যিশুদা ভাওয়াল সন্নাস্যী। আমি তার বোন। গল্পের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় চরিত্র। বোনের কারণেই অনেক কিছু ঘটে। আরও কয়েকটা ছবি আসছে।
‘দেবী’র লুকে জয়া।
যেমন?
কৌশিকদার ‘বিজয়া’। সবে ডাবিং শেষ করলাম ছবিটার। তা ছাড়া ‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’ রয়েছে। পরিচালক অর্ণব পাল। গল্পটা খুব ভাল। খুব ভাল চরিত্র। স্পিল্ট পার্সোনালিটি। আগে করিনি। মূলত বৃষ্টিরই গল্প। ‘ঝরা পালক’ করেছি। ওটার কিছু ডাবিং বাকি। আর রয়েছে শিবুদার ‘কণ্ঠ।’
ওটা সম্ভবত আগামী বছর রিলিজ?
হ্যাঁ। ওখানে স্পিচ থেরাপিস্টের চরিত্র। আসলে শিবুদাদের কাজের ডিজাইন একেবারে আলাদা। পরের জিনিসটা এত ভাল দেখতে পায় ওরা। শুটিংয়ের সময়েই বুঝতে পারছিলাম ছবিটা কেমন দাঁড়াবে। শিবুদার সঙ্গে কাজ করাটাই একটা এক্সপিরিয়েন্স।
আপনার প্রোডাকশনের প্রথম ছবি ‘দেবী’ কবে মুক্তি পাবে?
আমি খুব চেষ্টা করছি সেপ্টেম্বরে।
ভারতেও দেখা যাবে?
এখানে দেখানোর চেষ্টা করব। আমার বিশ্বাস ‘দেবী’র অডিয়েন্স এখানে আরও বেশি।
প্রথম প্রযোজনাতে এমন একটা সাবজেক্ট বেছে নিলেন কেন?
জানেন, আমার ছোট থেকে ইচ্ছে ছিল, আহা এই ক্যারেক্টারটা যদি করা যায়…। আমার কিন্তু প্রযোজক হিসেবে উচিত ছিল কর্মাশিয়াল ছবি যেটা থেকে পয়সা আসে সেটা করা। কিন্তু আমি যে জীবনটা বিশ্বাস করি, যে ছবির সঙ্গে আমি থাকতে চেয়েছি, আমি স্ট্রাগল করেছি, চেষ্টা করেছি সেই ধরনের কাজ করতে।
আরও পড়ুন, ‘এখন তো শুক্রবার রিলিজ হলে রবিবারই সুপারহিট লেখা হচ্ছে’
টাকা ফেরতের কথা ভাবেননি?
দেখুন, আমি সরকারের থেকে সাপোর্ট পেয়েছি। কিন্তু পয়সার কথা ভাবতে গিয়ে আমার প্রোডাকশন হাউজ থেকে এমন কোনও ছবি করতে চাইনি যা আমি বিশ্বাস করি না।
মিসির আলিকে নিয়ে রেসপন্স কেমন?
এখনও পর্যন্ত রেসপন্স খুব ভাল। আসলে একটা প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে হুমায়ুন আহমেদ, মিসির আলি পড়ে। আবার এখনকার প্রজন্মে আস্তে আস্তে সেটা ফেড আউট হয়ে যাচ্ছে। মিডল ক্লাস ফ্যান্টাসির সঙ্গে এখনকার প্রজন্ম পরিচিত নয়। এরা অস্থির। এদের হাতে অনেক অপশন।
মিসির আলিকে কি বইয়ের মতোই দর্শক দেখতে পাবেন?
দেখুন, বইতে আছে নীল খামে চিঠি আসার কথা। সেটা দিয়েই রিলেশন তৈরি হয়েছিল। এখনকার আসপেক্টে এটা তো ফেসবুক ছাড়া বোঝাতে পারব না। ফলে এই ধরনের পরিবর্তন রয়েছে। তবে এসেন্সটা রাখার চেষ্টা করেছি। আমার মিসির আলি পুরো বইয়ের মতো নয়। একটু অন্য রকম। কিন্তু বিলিভেবল। আমি খুবই চেষ্টা করেছি আসলের কাছাকাছি থাকতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy