মৈনাকের এই নতুন সিরিজে কিছু শব্দ আর দৃশ্য সম্পর্কের ভাঙাগড়ার খোলনলচেবদলে সত্যকে সামনে আনে। নিজস্ব চিত্র।
কেউ ব্রেক আপের পরেও পুরনো প্রেমিকের বাবা-মায়ের খোঁজ নেয়।
যে পুরুষ ব্রেকআপের পরে তার প্রেমিকার মুখ দেখবে না বলে পণ করেছিল সে-ই রোজ ধারাবাহিকে প্রাক্তন প্রেমিকার মুখ দেখে।
বিয়ে করতে চেয়ে প্রাক্তন প্রেমিকার মায়ের কাছে প্রকাশ্য রাস্তায় কেমন চড় খেতে হয়েছিল তার গল্পে এক পুরুষ কাটিয়ে দেয় বর্ষার দুপুর, সামনে তার বর্তমান প্রেমিকা।
পরিচালক মৈনাক ভৌমিকের আসন্ন সিরিজ ‘ব্রেকআপ স্টোরি’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শুধুমাত্র আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে ব্যক্তিগত ব্রেকআপ নিয়ে অকপট অভিনেতারা।
মৈনাকের এই নতুন সিরিজে কিছু শব্দ আর দৃশ্য সম্পর্কের ভাঙাগড়ার খোলনলচে বদলে সত্যকে সামনে আনে। কিছু প্রশ্ন, দৃশ্য ঘুরতে থাকে মনের মাঝে...
এক চুমুতে কী আসে যায়? তাতে প্রেম হয় না।
দুই বান্ধবীর মন মেলার সঙ্গে শরীরে আদর আসে।
প্রেম, শরীরের সম্পর্ক ছেড়ে যেতে চায় না তবু ছাড়তে হয়...
পুরনো প্রেম থেকে নতুন প্রেমে পৌঁছনর পথে ব্রেক আপ?
না, কোনও মিষ্টি মাছ আর প্রেম নয়, রমকম-ও নয়। পরিচালক মৈনাক ভৌমিক সম্পর্কের ভাঙন দেখাবেন পাঁচটা ব্রেকআপের গল্পে।
সোহিনী সরকার
ছবির চরিত্র: অমৃতা। থাকতে গিয়ে বোঝে, প্রেম আর একসঙ্গে থাকা আলাদা। বাইরে দু’জনে পার্টি করেছে ড্রিঙ্ক করেছে। বিয়ের পর বাড়িতে সে সব বন্ধ হয়। অমৃতা অবশেষে বেরিয়ে যায়। এই গল্পে কেউ ভাল, কেউ খারাপ নয়। থাকতে না পারার জায়গা থেকে ব্রেক আপ।
আমার ব্রেকআপ: খুব ছোট বয়সে। তখন ব্রেকআপ শব্দটাই জানতাম না। পরিস্থিতির চাপে সরে আসি। পরবর্তীকালে আবার যখন ব্রেকআপ হয় তখন সেই মুহূর্তে মনে হয়েছে উল্টোদিকের দোষ। এখন পরিণত সময়ে মনে হয়, দোষটা আপেক্ষিক, মানিয়ে নিয়েও থাকা যেত। ২০০৮-এ যার সঙ্গে আমার ব্রেকআপ হয় ২০১৮-য় একবার একটা অজানা নম্বর থেকে ফোন করে সে আমায় বলে সে বিয়ে করছে। আমি অবাক হই। খুশি হই। ওর বাচ্চা হয়, সে খবরও দেয়। আমি আবার এই বিষয়টা আমার এখন যে বন্ধু, যার সঙ্গে থাকি সেই রণজয়কেও বলি। একটা সম্পর্কের শুরুতে কিন্তু এখন প্রাক্তনদের নিয়ে অনেক কথা হয়। শুরুটাই হয় ওই জায়গা থেকে।আর এখন সকলের সঙ্গে সকলের এত যোগাযোগ। সোশ্যাল মিডিয়া।আমি যার সঙ্গে প্রেম করছি তাকে তো আমার দশ জন বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করাই। এ বার ব্রেকআপের পরেও আমার প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে আমার কোনও না বন্ধুর যোগাযোগ তো থাকতে পারে। সব কি মুখ ফিরিয়ে নেওয়া যায়? এই লকডাউনেই আমি রণজয়কে বললাম, আমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের বাবা-মায়ের খোঁজ নিই। আরে, তাঁদের কাকু-কাকিমা বলতাম, একটা ভাল সম্পর্ক তো ছিল।
আমার আর সোহিনীর বন্ধুত্ব এত গাঢ়, দু’জন দু’জনের অনেক প্রেম হতে দেখেছি
রণজয় বিষ্ণু:
ছবির চরিত্র: এক নিউট্রাল জোনের ছেলে। নিজের ইচ্ছেমতো বাঁচেনি। একা। সবাইকে আঁকড়ে ধরতে চায়। শেষ পর্যন্ত ট্র্যাজিক চরিত্রে পরিণত হয়।
আমার ব্রেকআপ: সোহিনী বলেছিল এই বিষয়টা নিয়ে বলতেই হবে। বেশ চাপের...আমি আর সোহিনী দু’জনেই সোজা কথা বলে দিই তো! যা প্রথম প্রেম ভেবেছিলাম তা এখন বুঝি সেরকম প্রেম ছিল না।বয়সে ১২ বছরের বড় শিক্ষিকা। ব্রেকআপ হয়। ওর বিয়ে হয়ে যায়। আমরা কেউ আর যোগাযোগ রাখিনি। আমরা বাঙালিরা একটা কোথাও গিয়ে মধ্যবিত্ত চিন্তার বৃত্তে ঘুরি। আমার আর সোহিনীর বন্ধুত্ব এত গাঢ়, দু’জন দু’জনের অনেক প্রেম হতে দেখেছি। শিক্ষিত লোক হলে বুঝতে পারে এই ব্রেকআপটা হতেই পারে যা দু’জনের সমস্যা থেকেই হয়েছে। সোহিনী আর আমি সে ভাবেই আলোচনা করি।আমাদের প্রাক্তনের বিষয় আলোচনার মধ্যে কমফোর্ট জোন তৈরি হয়ে আছে।
চান্দ্রেয়ী
ছবির চরিত্র: অপর্ণা।কলেজ শিক্ষিকা।বাড়িতে এক ছাত্র টিউশন করতে আসে। তার সঙ্গে সম্পর্ক হয়।
আমার ব্রেকআপ: প্রথম ব্রেকআপে মনে হয়েছিল আমার জীবনে সব শেষ! জীবনের সব গেল। আমি নিজেই ব্রেকআপ করি। পরে বুঝেছি, ভাল হয়েছে। ব্রেকআপ কষ্টের ছিল, কষ্টের থাকবে। এখন সেটার সঙ্গে যোঝার জন্য অনেক মাধ্যম আছে। আমার ব্রেকআপ হয়েছে এমন কিছু মানুষের সঙ্গে বন্ধুতা হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে সম্পর্ক থাকেনি।
প্রথম ব্রেকআপে মনে হয়েছিল আমার জীবনে সব শেষ!
আরইয়ান
ছবির চরিত্র: মৈনাকদা গল্প লেখার সময় থেকেই বলেছিল অন্যরকম বিষয় নিয়ে লিখছে। আমি এখানে ছাত্র। আমার প্রেম আর ব্রেকআপ ঘিরে একটা টুইস্ট আছে।
আমার ব্রেকআপ: লংটার্ম রিলেশনশিপে আমার ব্রেকআপ হয়েছে। গল্পের চরিত্রের সঙ্গে আমার ব্রেকআপের মিল নেই।আমি আমার প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে একটা স্বাভাবিক যোগাযোগ রাখি। একেবারে কথা বন্ধ রেখে দেব, এমন না। তবে কাজ আমার কাছে আসল। কাজের সঙ্গে ব্রেকআপ না হলেই হল।
আমার বয়ফ্রেন্ড বলেছিল ও যেন কোনওদিন আমায় মুখের সামনে না দেখে
অলিভিয়া
ছবির চরিত্র:একটি মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ড, তার শিক্ষিকাকে সময় দিচ্ছে। তাকে নয়। কেন এমন হচ্ছে? সেটাই ছবির টুইস্ট।
আমার ব্রেকআপ: ২০১২-য় ব্রেকআপ হয়। অনেক লম্বা সম্পর্ক ছিল। বেরোতে কষ্ট হয়েছিল। আমার বয়ফ্রেন্ড বলেছিল ও যেন কোনওদিন আমায় মুখের সামনে না দেখে। অথচ তার পরের বছর থেকেই আমার টেলিভিশনের জার্নি শুরু। তখন সারাক্ষণ ওকে আমায় দেখতে হয়েছে। এই ভাঙা থেকে শিখেছি অনেক। যেমন, নিজেকে ভালবাসা দরকার। আবেগে পড়ে অন্যের ভাল শুধু ভাবা উচিত না। তবে যে মুখ দেখতে চায় না বলেছিল সে প্রত্যেক জন্মদিনে আমায় উইশ করে। যদিও আমার দিক থেকে কোনও উত্তর যায় না।
অনিন্দিতা
ছবির চরিত্র: প্রিয়ঙ্কা।সাহসী সাংবাদিকের চরিত্র।কিন্তু প্রেম নিয়ে নিশ্চিত নয়। ছবিতে সঞ্জয়ের চরিত্রে সৌরভ। ওর সঙ্গেই প্রিয়ঙ্কার সম্পর্ক।
আমার ব্রেকআপ: আমি একটু সিরিয়াস টাইপের। তিন মাসের ডেট করছি। ১৮বছর হবে। সৌরভের মতো এন্টারটেনিং ব্রেকআপ নয়। তবে সম্পর্ক ভাঙার পর একজন শাহরুখ খানের ‘ডর’-এর মতো তাড়া করেছিল। এখন অবশ্য আমাদের সেট গোল আছে যেখানে প্রেম, সম্পর্ক গাঢ় হয়েছে।
অনিন্দিতার সঙ্গে এখন প্রেম বেড়ে গিয়েছে, আমরা দু’জনে সম্পর্কে গ্রো করছি
সৌরভ
ছবির চরিত্র: ভেতো বাঙালি স্যাক্সোফোন বাজায়। খুব ইন্টারেস্টিং প্লট। আমার জীবন আর যে চরিত্র আমি করছি সঞ্জয় নামের, তার সঙ্গে অনেক মিল। সে অনিন্দিতার চরিত্রকে খুব ভালবাসে, কিন্তু ঠিক কী করে উঠবে ভেবে পায় না।
আমার ব্রেকআপ: আমি তো সিনেমার চিরঞ্জিতের মতো। প্রচুর ব্রেকআপ হয়েছে। মৈনাকের এই ছবির সঞ্জয়ের মতো। ক্লাস ইলেভেনে আমি। মেয়েটি নাইন। সন্ধেবেলা পর্ণশ্রীর খালের পাড় থেকে আমি দৌড়চ্ছি আর সেই মেয়ে হাতে অস্ত্র নিয়ে ছুটেছে। পর্ণশ্রীর সবাই জেনে গিয়েছিল। আমি হুইমজিক্যাল তো, তাই অনেক ব্রেকআপ আছে, একটা সিরিজ হয়ে যাবে। আরে, আমি ভাবতাম যাকেই ডেট করেছি তাকেই বিয়ে করব। বাচ্চার নাম অবধি ঠিক করে রাখতাম। মেয়ের মায়ের হাতে চড় অবধি খেয়েছি। তবে অনিন্দিতার সঙ্গে এখন প্রেম বেড়ে গিয়েছে। আমরা দু’জনে সম্পর্কে গ্রো করছি। রাতে ও আগে ঘুমোয়। আমি চারটের সময় ঘুমোতে যাই। তখন ওকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখি আর মনে হয়, সবার থেকে ওকে সবচেয়ে সুন্দর লাগে...ওর ছবি তুলি...
তুহিনা
ছবির চরিত্র: দুটো মানুষের বন্ধুতার গল্প।তাদের একসঙ্গে থাকার গল্প। মেয়েরা মেয়েদের অনেক বেশি বুঝতে পারে। এই সিরিজে রোশনি আর শ্রেয়ার গল্প তৈরি হয়।
আমার ব্রেকআপ: স্কুলে স্টেডি সম্পর্ক ছিল, কোনও কারণে ব্রেকআপ হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সো কলড ব্রেকআপের মানে যা তা আমার জীবনে মেলেনি। দু’-একজন ছাড়া যে সমস্ত মানুষের সান্নিধ্যে এসেছি তাদের সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ আছে। হ্যাঁ, রেস্তরাঁয় খাওয়া বা রোজ দেখা হয় না। কিন্তু কথা তো হয়।
প্রথম ব্রেকআপে প্রচুর কান্নাকাটি করেছি, ফোন ব্লক করেছি, আবার খুলে দিয়েছি
সৌরসেনী
ছবির চরিত্র: এটা আমার প্রথম হইচই প্রজেক্ট। চরিত্রের নাম শ্রেয়া। একা থাকা পছন্দ করে। রুমমেট হিসেবে রোশনির সঙ্গে বন্ধুতা তৈরি হয়। ভালবাসার কারণে শরীর আসে, রোশনির আর শ্রেয়ার কেমিস্ট্রি এ ছবির অন্যতম সম্পদ।
আমার ব্রেকআপ: প্রথম ব্রেকআপে প্রচুর কান্নাকাটি করেছি। ফোন ব্লক করেছি। আবার খুলে দিয়েছি। শাহরুখ খানের ছবি দেখে কেঁদেছি। তবে ব্রেকআপ হলে ভালবাসাকে নর্মাল বন্ধু হিসেবে আমি ভাবতে পারি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy