শুটিংয়ের ফাঁকে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডায় পঙ্কজ ত্রিপাঠী। ফাইল চিত্র।
ঝাউতলা রোডে তখন নিজের ভ্যানিটি ভ্যানে মেকআপে ব্যস্ত পঙ্কজ ত্রিপাঠী। শুটিং সেরে একটু পরেই বেরিয়ে যাবেন। তাই ব্যস্ততা তুঙ্গে। অবশেষে ভ্যান থেকে বেরোলেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা। পরনে গোলাপি কুর্তা, সাদা চোস্ত। কুর্তার উপর ধূসর জওহর কোট। কলকাতা তাঁর বরাবরের প্রিয় শহর। সেখানেই তাঁর সঙ্গে কথা বলল আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রশ্ন: আপনি তো কলকাতায় নতুন নন...।
পঙ্কজ: একেবারেই নই। কলকাতা আমার পছন্দের শহর। আমার বাড়িও এখানে। আমার বোনের বাড়ি। আমার শ্বশুরবাড়ি। সবই ভবানীপুরে। এখানকার মানুষ, এখানকার খাবারদাবার আমার পছন্দের। আলুপোস্ত, ঝিঙেপোস্ত, পোস্তর বড়া— এখানে এলে এগুলো আমার খাওয়া চাই-ই চাই। আমি পোস্ত খেয়ে ঘুমোতে বড় ভালবাসি। এই জন্যই তো আমি পর পর বাঙালি পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করে চলেছি।
প্রশ্ন: সেই প্রশ্নেই আসছিলাম। আপনি অনুরাগ বসু (‘লুডো’), সৃজিত মুখোপাধ্যায় (‘শেরদিল— দ্য পিলিভিট সাগা’), অভিরূপ বসু (‘লালি’) আর এখন অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করছেন। কার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সব থেকে ভাল?
পঙ্কজ: সবার সঙ্গেই। কারণ এঁদের সকলের মধ্যেই এখানকার সঙ্গীতের প্রতি, খাওয়াদাওয়ার প্রতি, শিল্পের প্রতি শ্রদ্ধা আছে। এতগুলো গুণ একমাত্র বাঙালি পরিচালকদের মধ্যেই আছে। এঁরা সবাই একই সঙ্গে ইন্টারেস্টিং এবং মজার। এখন টোনিদার (অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী) যে ছবিটা করছি সেটার চিত্রনাট্য দুর্দান্ত। সেই জন্যই রাজি হয়েছি। আমার চরিত্রের নাম বা ছবির নাম এখনও ঠিক হয়নি।
প্রশ্ন: ‘শেরদিল’-এর বিষয়বস্তু ভাল হলেও বক্স অফিসে তেমন ভাল চলেনি। কারণ কী মনে হয়?
পঙ্কজ: সারা দেশে মাত্র ৬০টা হলে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটা। কলকাতায় ক’টা হলে এসেছিল, আপনিই বলুন না! এক জনকে ভোটে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোনও পোলিং বুথ বানাননি। তা হলে ও কী করে জিতবে? তা ছাড়া আমার কাজ অভিনয় করা। আমি সিনেমার ব্যবসার দিক বুঝিও না তেমন।
প্রশ্ন: আপনার আদি বাড়ি বিহারে। অভিনয় জীবনের শুরুতে কি তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে?
পঙ্কজ: একেবারেই না। কোনও দিনই নয়।
প্রশ্ন: বলিউডের হিট মেকার অক্ষয় কুমার নাকি বিজেপি-ঘনিষ্ঠ। আপনার এ বিষয়ে কোনও মত রয়েছে?
পঙ্কজ: আমাকে এই প্রশ্ন কেন বাবা? আমার তো সম্পর্কই নেই এর সঙ্গে।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনারা তো একই ইন্ডাস্ট্রির শিল্পী...
পঙ্কজ: সে তো আমিও রাজ্য ইলেকশন কমিশনের জাতীয় আইকন। তো সেটার সঙ্গে তো রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।
প্রশ্ন: কিন্তু এই যে ক্ষমতার এত কাছাকাছি থাকা, এটা কি শিল্পীর কাজকে কোনও ভাবে প্রভাবিত করে?
পঙ্কজ: আমি জানি না।
প্রশ্ন: রাজ্য ইলেকশন কমিশনের জাতীয় আইকন হিসেবে আপনার দায়িত্ব কী?
পঙ্কজ: ভোট নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এই ব্যাপারে বার্তা দেওয়া। এখন প্রত্যেক ভোটের জন্য বছরে চার বার নিজের নাম নথিভুক্ত করা যায়। যাতে নতুন ভোটাররা নাম লেখাতে পারেন। আগে শুধু বিহারের আইকন ছিলাম। এখন জাতীয় আইকন। আমি এ বিষয়ে নানা রকম ভিডিয়ো বানাই। সেগুলোর যাতে ঠিক মতো সম্প্রসারণ হয়, সেটাও লক্ষ রাখি। ২৫ জানুয়ারি ‘মতদাতা দিবস’। এই বিষয়ে অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে দুই পর্বের একটা সচেতনতা বৃদ্ধির অনুষ্ঠান হবে। সেখানে আমার অডিয়ো চলবে।
প্রশ্ন: ওটিটি-তে ‘মির্জাপুর’-এর পর ‘ক্রিমিনাল জাস্টিস’-এ আপনার মাধব মিশ্র চরিত্রটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
পঙ্কজ: হ্যাঁ, হটস্টার-এ ওটা খুব হিট সিরিজ়। প্রচুর লোক দেখেন। যেমন ‘জুভেনাইল জাস্টিস’ ছিল। এখন সেটার প্রচুর নিয়মনিধি আছে। যেগুলো আমিও ভাল ভাবে জানি না। এগুলো বিনোদনের সঙ্গে সঙ্গে সচেতনতা বাড়ানোরও গল্প। যেখানে আইন নিয়ে নানা রকম কথা আছে। এটার একটা বিশেষ সিক্যোয়েন্স নিয়ে আমার কাছে পুলিশের এক বড়কর্তার মেসেজ এসেছিল। সেটা সম্বন্ধে আমিও খুব একটা জানতাম না। উনিই আমাকে সচেতন করেন। মাধব মিশ্রকে দর্শক এত পছন্দ করেন বলে আমার ভাল লাগে।
প্রশ্ন: আপনি যত ছোট চরিত্রই করুন না কেন, সব চরিত্রেই একটা টুইস্ট আনেন। সে ‘নীল বাটে সান্নাটা’র মতো কমেডিই হোক বা ‘৮৩’-এর মতো কোচের চরিত্র। আপনার চিন্তার রাস্তাটা কেমন?
পঙ্কজ: এটার কারণ আমি এক জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিনেতা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমার নিজস্ব চিন্তাভাবনা। কোনও চরিত্রে অভিনয় করার সময় আমার মনে হয়, চরিত্রটাকে ইন্টারেস্টিং করতে হবে। আর এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে যাতে দর্শকের মনের সঙ্গে একটা আদানপ্রদান হয়। তবেই তো লোকে দেখবে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না। আসলে এটাই তো আমার কাজ। তাই ঠিক কী করে করি বলা মুশকিল।
প্রশ্ন: আপনি আপনার মেয়েকে খুব ভালবাসেন। সমাজমাধ্যমে পোস্টও করেন তা নিয়ে। অন্য দিকে, দেশের কোথাও কোনও ছেলে মাকে খুন করছে, তো কেউ তার বান্ধবীকে ৩৪ টুকরো করছে। এ বিষয়ে আপনি কি উদ্বিগ্ন?
পঙ্কজ: তা-ও আমি বলব, নারীদের ব্যাপারে আগের থেকে অনেকটাই পরিস্থিতি বদলেছে। তবে আরও অনেক বেশি সংবেদনশীল হওয়ার দরকার। তার সঙ্গে চাই সচেতনতা। যা সভ্য সমাজের জন্য উপযুক্ত। অনেক কিছু হয়েছে। অনেক কিছু হওয়ার বাকিও আছে। আমি সব সময় চেষ্টা করি ভাবতে, কী করে সমাজটা আরও একটু এগিয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন: সমাজমাধ্যমে আপনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তার মানে কি একটু বেশি দায়িত্ব নিজের উপর বর্তায়?
পঙ্কজ: না, সমাজমাধ্যমকে আমি এত পাত্তা দিই না। ওখানে আমি আছি, ব্যস ওইটুকুই। এখনও পর্যন্ত আমি মোটে ১৪০টা পোস্ট করেছি। তার মধ্যে ১০০টা ছবির প্রমোশন আর বিজ্ঞাপন। সমাজমাধ্যম আধুনিক জীবনের একটি অঙ্গ। তাই ওটাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। যদি গঠনমূলক কাজে ব্যবহার করা যায়, তা হলে সমাজমাধ্যম অত্যন্ত শক্তিশালী অস্ত্র হতে পারে। যেখানে প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব কণ্ঠ আছে। কিন্তু মাঝে মাঝেই এটাকে খুব ধ্বংসাত্মক ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমি সব সময় বাচ্চাদের বলি যে ,সব বিষয় সচেতন হও। ডিজিট্যাল মাধ্যম আর সমাজমাধ্যমে নিজেদের রায় দেওয়া যায়। কিন্তু কী ভাবে আর কখন রাখতে হবে, সেটা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: আপনি ওটিটি এবং বড়পর্দা— দুই মাধ্যমেই কাজ করেছেন। কখনও মনে হয়, ওটিটি বড় পর্দাকে ছাপিয়ে যাবে?
পঙ্কজ: দুটোর মধ্যে আদতে কোনও তফাত নেই। একই ক্যামেরা, একই কলাকুশলী, একই রকম ভাবে শুটিং হয়। একটাই তফাত— বড় পর্দায় গল্প বলার জন্য সময়টা বেশি পাওয়া যায়। তাই যে যার জায়গায় থাকবে।
প্রশ্ন: অভিনেতা হিসেবে আপনার কোনও বাড়তি দায়িত্ব নেই?
পঙ্কজ: শুধু অভিনেতা কেন, সবারই নিজস্ব দায়িত্ব আছে। অভিনেতা তো আলাদা কোনও জাতি নয়। সেখানে বাড়তি বা কমতির কোনও ব্যাপার নেই। নিজের কাজ ‘ইমানদারি’র সঙ্গে করাটাই দায়িত্ব। আমাদের ছবি ‘গুঞ্জন সাক্সেনা’-তে একটা বার্তা ছিল— ‘তোমার যে কাজ সেটা ইমানদারির সঙ্গে কর। তা হলেই সব ঠিক হবে’। এটা আসলে বলা সহজ। করা অত সহজ নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy