মনোজ বাজপেয়ী। ছবি: সংগৃহীত।
এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম শক্তিশালী অভিনেতাদের মধ্যে তাঁর নাম প্রথম সারিতে উচ্চারিত হয়। অথচ মনোজ বাজপেয়ী বিশ্বাস করেন, তিনি এখনও শিখছেন। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের মাস্টারক্লাসে এসে অভিনেতা হিসাবে নিজের নিষ্ঠা, প্রশিক্ষণ এবং চরিত্রের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বললেন মনোজ। সেখানে উঠে এল তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতাও।
ক্যামেরার সামনে অভিনয় নয়, বরং সেই চরিত্রের জন্য নিজের প্রস্তুতি পর্বকে অনেক বেশি উপভোগ করেন বলে জানালেন মনোজ। ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর অভিনেতা বললেন, ‘‘ভয় লাগে। কারণ, আমি জানি একটা অন্ধকার জায়গায় প্রবেশ করতে চলেছি। কিন্তু সেখানে প্রবেশ করার পর আমি সবথেকে বেশি উপভোগ করি।’’ নিজের কেরিয়ারের শুরুর দিকের একটি ঘটনা ভাগ করে নিলেন মনোজ। জানালেন, নিত্যদিন সংবাদপত্রের কোনও একটি ঘটনা পড়ে নিজের মতো একটা দৃশ্য তৈরি করতেন। সেখানে নিজেকে একটি চরিত্র কল্পনা করে একটা দৃশ্যে সারা দিন অভিনয় করতেন। মনোজের কথায়, ‘‘সন্ধ্যায় বন্ধুরা বাড়িতে পার্টি করতে এলে আগে ওই দৃশ্যে আমার অভিনয় দেখিয়ে মতামত চাইতাম। তার পর ওদের খেতে দিতাম।’’ মহেশ ভট্টের সহকারী হিসাবে কাজ করার সময়েও এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল বলে স্মরণ করলেন মনোজ। জানালেন, প্রতিদিন ফ্লোরে একটা দৃশ্য তৈরি করে লাঞ্চ ব্রেকের আগে তিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করতেন এবং মহেশকে দেখতে বাধ্য করতেন। মনোজ হেসে বলেন, ‘‘প্রত্যেক দিন এত বিরক্ত করতাম যে, এক দিন রেগে গিয়ে ভট্ট সাহেব বললেন যে আমি সহকারী এবং আমি যেন আর সীমা অতিক্রম না করি! শেষে উনি স্বীকার করেছিলেন, আমি ভাল অভিনেতা।’’
১৯৯৪ সালে শেখর কপূর পরিচালিত ‘ব্যান্ডিট কুইন’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন মনোজ। কিন্তু রামগোপাল বর্মা পরিচালিত ‘সত্য’ ছবিতে অভিনয়ের পর মনোজকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। অনেকেই হয়তো জানেন না, রামগোপাল পরিচালিত ‘কওন’ ছবির শুটিংয়ের আগে পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার অনুরাগ কাশ্যপকে সিদ্ধান্ত বদল করতে বাধ্য করেছিলেন মনোজ। বললেন, ‘‘চরিত্রের প্রস্তুতি আমার কাছে অসম্পূর্ণ মনে হচ্ছিল। এ দিকে প্রথম দিনের শুটিং। রামগোপাল আমার মেন্টর। তাই কিছু বলতেও পারছি না। অবশেষে সাহস করে গিয়ে ওঁকে এবং অনুরাগকে বললাম চরিত্রটাকে অন্য ভাবে অভিনয় করতে চাই। কিছুতেই রাজি হলেন না।’’ মনোজ আরও বলেন, ‘‘জোর করে এক বার অন্তত আমার অভিনয়টা দেখতে ওদের রাজি করালাম। মজার বিষয়, সেটা দেখেই দু’জনেই লাফিয়ে উঠে বলেছিলেন যে আমি যে ভাবে ভেবেছি সেই ভাবেই অভিনয় করতে।’’ নিজে সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত টেক দিতে কোনও ক্লান্তি থাকে না মনোজের। জানালেন, এক বার তিনি অডিশনে একটা দৃশ্যের জন্য ২১টা টেক দিয়েছিলেন। সহকারী পরিচালক রেগে গিয়েছিলেন। আবার বিপরীত উদাহরণও দিলেন মনোজ। তাঁর কথায়, ‘‘পরিচালক কানু বহেলের সঙ্গে কাজ করেছি। ১৫টা টেক ওঁর কাছে প্রস্তুতি পর্ব। থামেন গিয়ে হয়তো ৪০টা টেকের পর। প্রথমে ক্লান্তি এলেও পরে বুঝতে পারলাম, এই ভাবে আমারও সেরা অভিনয়টা দেওয়া সুযোগ বাড়ে।’’
নিজের কেরিয়ারে একাধিক খল চরিত্রে অভিনয় করছেন মনোজ। কিন্তু জানালেন, কখনও তিনি তাঁর চরিত্রকে বিচার করেন নাা। তাঁর কথায়, ‘‘চরিত্রকে আগে থেকে তাঁর নিজস্ব নৈতিকতার মাপকাঠিতে বিচার করা যে কোনও অভিনেতার কাছে অপরাধ!’’ কথা প্রসঙ্গেই তিনি ‘বীর জ়ারা’ ছবিতে তাঁর চরিত্রটির উল্লেখ করেন। বললেন, ‘‘পাকিস্তানের এক জন ক্ষমতাবান ব্যক্তির হবু স্ত্রীকে এক জন অপরিচিত মানুষ এসে ভালবাসা জানাচ্ছে! তার রেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক নয় কি?’’
নতুন প্রজন্মের অভিনেতাদের মধ্যে ধৈর্য নেই বলেই মনে করেন মনোজ। তাঁর কথায়, ‘‘এখন আমাদের সামনে চটজলদি খ্যাতি পাওয়ার প্রলোভন বেড়েছে। রিল ভিডিয়ো বানিয়ে নিজেকে সবাই অভিনেতা বলে ভুল করছেন! কিন্তু এই খ্যাতি বেশি দিন স্থায়ী হয় না।’’ নতুনদের প্রতি মনোজের পরামর্শ, ‘‘অভিনেতাকে নিজেই ঠিক করতে হবে যে তিনি একটা ছবিতে কাজ করেই খুশি, না কি লম্বা ইনিংসের জন্য নিজেকে তৈরি করবেন। দ্বিতীয় জিনিসটা নিষ্ঠা এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া সম্ভব নয়।’’ এই প্রসঙ্গেই মনোজের আশঙ্কা, ধৈর্য কমে যাওয়ার জন্যই ভবিষ্যতে ভাল অভিনেতা এবং পরিচালকের সংখ্যা হয়তো কমে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy