সোমবার চলচ্চিত্র উৎসবে মনোজ বাজপেয়ী। ছবি: সংগৃহীত।
সোমবার দুপুরে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে নন্দনের মূল ভবনের সামনে সাদা গাড়িটি থেকে নেমে আসতেই তাঁকে ছেঁকে ধরলেন অনুরাগীরা। তাঁদের উদ্দেশে এক বার হাত নেড়ে নিরাপত্তারক্ষীদের ঘেরাটোপে নন্দনের দোতলায় ভিআইপি লাউঞ্জে প্রবেশ করলেন অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী। এই প্রথম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে অতিথি হিসাবে এলেন ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’ খ্যাত অভিনেতা। বললেন, ‘‘ইদানীং দেশে দুটো চলচ্চিত্র উৎসবই সেরার সেরা হিসাবে উঠে আসছে— কলকাতা এবং কেরল। উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসতে পারিনি। কিন্তু বলেছিলাম এক বার আসব। তাই আজকে এখানে এসে খুব ভাল লাগছে।’’
মনোজ অভিনীত এবং দেবাশিস মখিজা পরিচালিত সাম্প্রতিক ‘জ়োরাম’ ছবিটির কথাও উঠে আসে মনোজের বক্তব্যে। চলতি বছরে ‘গুলমোহর’, ‘সিরফ এক বন্দা কফি হ্যায়’-এর মতো ছবিতে মনোজের অভিনয় দর্শকদের চমকে দিয়েছে। কিন্তু এক জন অভিনেতা হিসাবে তিনি কিন্তু দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ নিয়ে চিন্তিত নন। তাঁর কথায়, ‘‘তার থেকেও বেশি আমি নিজের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছি কি না, সেই চিন্তাই আমাকে বেশি ভাবায়। আমি কি নতুন কিছু পর্দায় হাজির করতে পারছি, সেটাই মনের মধ্যে চলতে থাকে।’’
মনোজ জানালেন, তিনি হিন্দি ছবির তুলনায় দেশের আঞ্চলিক ভাষার ছবি অনেক বেশি দেখেন। স্পষ্ট বললেন, ‘‘দুঃখের বিষয় এই মুহূর্তে হিন্দিতে খুব ভাল ছবি তৈরি হচ্ছে না। আরও বেশি বাস্তবনির্ভর ছবি তৈরি হওয়া প্রয়োজন।’’ মনোজকেও একটা সময়ে লড়াই করে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা করে নিতে হয়েছিল। অভিনেতার আক্ষেপ, সত্তরের দশকে হিন্দি ছবির নায়করা অনেক বেশি মাটির কাছাকাছি ছিল। কথা প্রসঙ্গেই অমিতাভ বচ্চনের উদাহরণ দিলেন অভিনেতা। মনোজ বললেন, ‘‘নায়কদের তখন খুব সাধারণ চেহারা ছিল, অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য। সেই নায়ক এখন হারিয়ে গিয়েছে। এখন তো সবাই গ্রিক গড!’’
এই মুহূর্তে হিন্দি ছবিতে ‘হিংস্রতা’ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। রবিবার উৎসবে এসে বলিউডের আর এক পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ জানিয়েছিলেন, যে কোনও একটি ঘটনা দিয়ে কিছু বিচার করা উচিত নয়। মনোজের কথায়, ‘‘নির্মাতা কী ধরনের ছবি তৈরি করবেন, এটা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত পছন্দ। আমরা সেটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারি না। এটা তো গণতন্ত্র। তাই সব ধরনের ছবির সহাবস্থান প্রয়োজন।’’ একই সঙ্গে মনোজ জানালেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন সেন্সরশিপ প্রযোজ্য হলে ওটিটির মৃত্যু ঘটবে। তাঁর কথায়, ‘‘একটা সময় ওটিটিতে যথেচ্ছ যৌনতা এবং হিংস্রতা দেখানো হত। কিন্তু এখন নির্মাতারাও বিষয়টার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন। তাই অপ্রয়োজনীয় যৌনতা এবং হিংস্রতা তারা কিন্তু আর দর্শককে আর দেখান না।’’
বলিউডে কাজ করা সত্ত্বেও কথা প্রসঙ্গেই মনোজ জানালেন, ‘বলিউড’ শব্দটি নিয়ে তাঁর আপত্তির কথা। স্পষ্ট হয় মনোজের আক্ষেপ, ‘‘কে যে নামটা দিয়েছিল আমি জানতে চাই! হলিউডের থেকে আমাদের দেশের ছবি তৈরির প্রক্রিয়া এবং মূল্যবোধ সম্পূর্ণ আলাদা।’’ এই প্রসঙ্গে তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, ‘‘আমরা তো আমাদের মৌলিক ছবি তৈরি করি। ওদের নকল তো করি না। তাই এটা খুবই অসম্মানজনক।’’
রবিবার নন্দনে প্রেক্ষাগৃহে আসন পাওয়া নিয়ে দর্শকদের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীদের একপ্রস্থ বচসা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ডাকতে হয়। মনোজের মতো অভিনেতার বক্তব্য শুনতে শ্রোতাদের ভিড় বেশি হবে, আগাম আন্দাজ করেই শিশির মঞ্চের পরিবর্তে সোমবার মাস্টারক্লাসের আয়োজন করা হয় একতারা মঞ্চে। মনোজের সঙ্গেই অংশ নেন বলিউড পরিচালক সুধীর মিশ্র। সঞ্চালনায় ছিলেন অরিন্দম শীল এবং সোহিনী দাশগুপ্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy